ধুলায় দিনের বেলায় অন্ধকার কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী সড়ক চেনার উপায় নেই সড়ক পথ ধুলায় ঢাকা কুষ্টিয়া-রাজবাড়ি সড়ক। এক দিকে প্রচন্ড গরম অন্য দিকে ধুলাবালি। হাঁচি, কাশি, জ্বর ও চোখ ওঠা এখন কুষ্টিয়ার ৪৫ লাখ বসবাসরত বাসিন্দার নিত্যদিনের সঙ্গী। কুষ্টিয়া -রাজবাড়ি মহা-সড়কটি নির্মানাধীন অবস্থায় আছে,কুষ্টিয়া জেলার মধ্যে এই সড়কে’ই ধুলাবালি সবচেয়ে বেশি। এ কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে কুষ্টিয়া -রাজবাড়ি সড়কটির আশেপাশের কয়েক হাজার মানুষ সহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা পথচারী।

নির্মান কাজের ধীরগতিতে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। সড়ক ও জনপদের কর্মকর্তাদের কর্মকাণ্ড নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। অনেকে অতিষ্ঠ হয়ে বলেছেন এ অবস্থা দেখার কী কেউ নেই? বায়ুদূষণ নিয়ে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার এক রিপোর্টে দেখা গেছে, বিশ্বের ৯১টি দেশের ১৬০০ শহরের মধ্যে কুষ্টিয়া অন্যতম।

লাহিনী বটতলার এলাকায় এক পথচারী শিক্ষার্থী রাজু ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এগুলো নিয়ে আর কি নিউজ করবেন। আজ নিউজ করছেন কাল কর্তৃপক্ষ আসবে এর পরের দিন খবরও রাখবে না। মোল্লাতেঘরিয়া মোড় এলাকায় পথচারী এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চলাফেরা করছি। এ এলাকায় খাবারের দোকানেও বসা যায় না। খাবারে ধুলাবালি পড়ার কারণে খাবারও অস্বাস্থ্যকর হয়ে গেছে। আমাদের ট্যাক্সের টাকায় সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা গাড়িতে এসি লাগিয়ে চলাফেরা করেন। ট্যাক্সের টাকা যদি জনগণের কাজেই না লাগল তবে কেন আমরা ট্যাক্স দেব?

চৌড়হাস মোড় এলাকার এক দোকানদার বলেন, রাস্তার উন্নয়ন কাজ চলছে একটু সমস্যা হবে সেটা আমরা জানি। কিন্তু গর্ত করে যে মাটি নিচ থেকে ওঠানো হচ্ছে সে মাটি গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে ধুলাবালির সৃষ্টি হচ্ছে। ঠিকাদারের সেদিকে খেয়াল নেই। আমরা দিন আনি দিন খাই। আগে বেচাকেনা অনেক ভালো হত। এখন আর সেদিন নেই। রাস্তায় ধুলাবালির কারণে রাস্তার পাশের দোকান থেকে কেউ কিছু খেতে চায় না। চৌড়হাস এলাকার শিক্ষার্থী মানোয়ার হোসেন বলেন, আমার শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে। তার ওপর এই ধুলার মধ্যে প্রতিদিন টিটিসিতে যাওয়া আসা করতে শ্বাসকষ্টের সমস্যা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ধুলাবালির মাঝে রাস্তায় বের হলেই শ্বাসকষ্টের সমস্যা বেশি দেখা দেয়। লাহিনী বটতলা মোড় এলাকার রিকশাচালক সোহেল বলেন, অনেক দিন ধরেই রাস্তার এ অবস্থা। আমরা রিকশা চালকরা সবচেয়ে বেশি বিপদে আছি। ধুলাবালির কারণে রিকশা চালাতে খুব সমস্যায় পড়তে হয়। ধুলাবালিতে মাস্ক ব্যবহার করি কিন্তু কতক্ষণ আর মাস্ক পড়ে থাকা যায়? এর একটা স্থায়ী সমাধান দরকার। কুষ্টিয়া-রাজবাড়ি মহা-সড়কের চৌড়হাস থেকে গড়াই ব্রিজ অংশে প্রচুর বালিমাটি থাকায় একটা গাড়ি এলেই পুরো এলাকা ধুলায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। গড়াই ব্রিজ এলাকায় ঠেলাগাড়ি চালক কাশেম বলেন, ধুলাবালি তো আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। ধুলাবালির কারণে অসুস্থ হয়ে অনেক দিন বিছনায় ছিলাম। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা মনে করেন , ধুলাবালি মানব স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। ধুলাবালির কারণে অ্যাল্যার্জিক রাইনাইটিস, ইনফ্লুয়েঞ্জা, সাইনোসাইটিস, অ্যাজমা, বাধাজনিত শ্বাসরোগ, চোখ ওঠা, নিউমোনিয়া, রেসট্রিকটিভ লাঞ্চ ডিজিজ, ফুসফুস বা শ্বাসনালীর অন্য যে কোনো রোগ থাকলে তার প্রকোপ বৃদ্ধি পেতে পারে এবং ধুলাবালিজনিত রোগীর সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের প্রায় ২৭ কিলোমিটার কুষ্টিয়া অংশে পড়েছে। যা কুষ্টিয়া শহরের চৌড়হাস এলাকা থেকে শুরু হয়ে কুমারখালী ও খোকসা উপজেলার শেষ প্রান্তে রাজবাড়ীর আলেকদিয়ায় শেষ হয়েছে।

প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহসহ আশপাশের কয়েকটি জেলার হালকা ও ভারী কয়েক হাজার যানবাহন চলাচল করে। কুমারখালী থেকে ঢাকাগামী ছেড়ে যাওয়া লালন পরিবহনের চালক আশরাফ আলী বলেন ধুলাময় এ সড়কে চলাচলই যেন দায় হয়ে পড়েছে। ধীরগতিতে গাড়ি চালাতেও কষ্ট হয়।’ খোকসার জসিম উদ্দিন নামে এক যাত্রী আক্ষেপ করে বলেন রাস্তার কথা বলে কোনো লাভ নেই। আমাদের ভোগান্তি আমাদেরই পোহাতে হবে। ধুলাবালিতে রাস্তায় চলা দায় হয়ে পড়েছে।’ কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. তাপস কুমার সরকার বলেন, ইদানীং কুষ্টিয়ায় শ্বাসকষ্ট, যক্ষ্মা, হাঁপানি, ব্রংকাইটিস, সর্দি, কাশি, হাঁচিসহ চোখের রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। ধুলার দূষণ এসব রোগের অন্যতম কারণ। এতে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিও বাড়ছে।’ জানা গেছে ‘৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে এই আঞ্চলিক সড়কের উন্নতিকরণে কাজ চলছে। মাঝে কিছুদিন বালুর অভাবে কাজ বন্ধ ছিলো। সব ঠিক হয়ে গেছে।আশা করি খুব শিগগিরই আমরা কাজ শেষ হবে । রাস্তায় ধুলাবালি সম্পর্কে কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপদের কারোর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

কু্ষ্টিয়াবাসি মনে করেন জনপদের উন্নয়ন ও রাষ্ট্রের উন্নয়ন অবশ্যই দরকার,তবে এই ভাবে সাধারন মানুষকে জিম্মি করে না। কুষ্টিয়ার কয়েকজন নগরবিদ মনে করেন, উন্নয়ন অবশ্যই অগ্রাধিকার ভাবে করতে হবে।কিন্তু সেই উন্নয়ন হতে হবে পরিকল্পিত ভাবে। কুষ্টিয়া রাজবাড়ি সড়কটির কাজ হচ্ছে একটু ধীর গতিতে। কাজে আরো গতি আনার উদ্দোগ নিতে হবে। রাস্তা সংস্কারের জন্য যে পরিমান ধুলা হয় সেটা বন্ধ করতে হলে পৌরসভার মাধ্যমে বা সড়ক ও জনপদ অফিসের মাধ্যমে দিনে অন্তত্য তিন বার পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করতে হবে।কুষ্টিয়ার আপামর জনগনের দাবি দ্রুত সড়কটি মেরামতের কাজ শেষ করে ধুলা থেকে মুক্তি চাই তারা।

[wpdevart_like_box profile_id=”https://www.facebook.com/amaderbanicom-284130558933259/” connections=”show” width=”300″ height=”550″ header=”small” cover_photo=”show” locale=”en_US”]

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।