বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ উপকূলীয় জেলাগুলোতে আঘাত হানার আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় এই দুর্যোগ মোকাবিলায় সব পূর্বপ্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সরকার। খোলা রাখা হয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন সব অফিস। উপকূলীয় ১৯ জেলায় প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রগুলোও।

ঘূর্ণিঝড়টি পর্যবেক্ষণ করে তা মোকাবিলায় ছুটির দিনেও সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান ও মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শাহ্ কামাল এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও দপ্তরের কর্মকর্তারা দুর্যোগ প্রস্তুতি সভা করছেন। এছাড়াও জেলা-উপজেলায় দুর্যোগ প্রস্তুতি সভা করছেন সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শাহ্ কামাল বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় আমাদের অফিস সব খোলা রয়েছে। মাঠ পর্যায়ে সিপিপি, স্কাউট ভলান্টিয়ার, আনসার-ভিডিপি, রেড ক্রিসেন্টসহ সব ভলান্টিয়ার রেডি আছে। জেলায় জেলায় ডিসিরা সভা করেছে।

সচিব বলেন, আমরা শুকনো খাবার ও প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী পাঠিয়ে দিয়েছি। ইতোমধ্যে সব জেলায় তা পৌঁছে গেছে। এখন আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’ দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরো শক্তি সঞ্চয় করে ভারতের ওড়িশা উপকূল ছুঁয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল দিয়ে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ কারণে দেশের সবগুলো সমুদ্র বন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ অধিদপ্তর জানিয়েছে, পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’ আরও সামান্য উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে।

এদিকে বুধবার দুপুর ১২ টায় অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’ চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১১৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১০৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ১১০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।

এটি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর বা উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়াবিদ অধিদপ্তর।

ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ১৬০ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।

আবহাওয়া অফিস চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমূদ্র বন্দরসমূহকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে এর পরিবর্তে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলেছে।

দুপুরে ব্রিফিংয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক এ কে রুহুল কুদ্দুস বুধবার জানান, হ্যারিকেনের গতিসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’ আগামী শুক্রবার (৩ মে) নাগাদ ভারতের ওড়িশা উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এরপর আগামী শনিবার (৪ মে) নাগাদ খুলনা, সাতক্ষীরা ও যশোর অঞ্চল দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে।

তবে এটি বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানবে কি না, তা এখনও নিশ্চিত নয়। ঘূর্ণিঝড়টির গতিবিধি যেকোনো সময় পরিবর্তনও হতে পারে বলেও জানান তিনি।

উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। যাতে স্বল্প সময়ের নোটিশে তারা নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারেন। সেই সাথে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।

[wpdevart_like_box profile_id=”https://www.facebook.com/amaderbanicom-284130558933259/” connections=”show” width=”300″ height=”550″ header=”small” cover_photo=”show” locale=”en_US”]

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।