ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকা; চলে গেলেন সিরাজগঞ্জের কৃতিসন্তান সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিম। আজ শনিবার বেলা ১১টা ১০ মিনিটে ঢাকায় বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে মারা যান তিনি।

  • এদিকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুর খবর সিরাজগঞ্জে পৌঁছলে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ জেলাবাসীর মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে শত শত নেতাকর্মীরা সিরাজগঞ্জ শহরের এস এস রোডে অবস্থিত জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে জড়ো হতে থাকেন। অল্প সময়ের মধ্যে কানায় কানায় পূর্ণ হতে থাকে কার্যালয়সহ পুরো সড়ক। এ সময় প্রিয় নেতাকে হারিয়ে নেতাকর্মীরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

সিরাজগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. দানিউল হক মোল্লা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমরা সিরাজগঞ্জবাসী তথা উত্তরবঙ্গবাসী আমাদের প্রাণ প্রিয় নেতা মোহাম্মদ নাসিমকে হারালাম। তিনি আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবক ছিলেন। তিনি চলে যাওয়ায় আমরা মেরুদণ্ডহীন হয়ে পড়লাম।

  • এদিকে মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ ৭দিন ব্যাপী শোক কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়সহ সকল উপজেলা ও থানা দলীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন, দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, কালো ব্যাচ ধারণ এবং তিন দিনব্যাপী কোরয়ানখানী ও দোয়ামাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

বিস্তারিত জানিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস বলেন, মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে আওয়ামী লীগের সকল স্তরের নেতাকর্মী এবং সিরাজগঞ্জবাসী শোকাহত। আমরা এক বর্ষিয়ান নেতা এবং রাজনৈতিক অভিভাবককে হারালাম। যার ক্ষতি পূরণ হবার নয়। তিনি আরো বলেন তার মৃত্যুতে জেলা আওয়ামী লীগ তাৎক্ষণিক সাত দিনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

  • বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী ছিলেন মোহাম্মদ নাসিম। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতিন্ডলীর অন্যতম সদস্য ছিলেন। একইসঙ্গে তিনি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্র ছিলেন।

মোহাম্মদ নাসিম মন্ত্রী থাকা অবস্থায় সিরাজগঞ্জে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা, সিরাজগঞ্জ জেনারেল ১শ শয্যার হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করণ, নার্স ট্রেনিং ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা,রাস্তাঘাট সেতু নির্মাণসহ সিরাজগঞ্জের ব্যাপক উন্নয়ন করেন।

  • নাসিমের জন্ম ১৯৪৮ সালের ২ এপ্রিল সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর উপজেলার কুরিপাড়া গ্রামে। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক জাতীয় চার নেতার একজন শহীদ এম মনসুর আলী ও মোসাম্মৎ আমেনা মনসুরের সন্তান মোহাম্মদ নাসিম জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নেন। গত শতকের ষাটের দশকে ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী নাসিম স্বাধীনতার পর ১৯৯৩ সালে যুবলীগের সভাপতিন্ডলীর সদস্য হন।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর কারাগারে মনসুর আলীকেও হত্যা করা হলে আওয়ামী লীগে সক্রিয় হন নাসিম। তখন কারাগারেও যেতে হয়েছিল তাকে। ১৯৮৬ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নাসিম। তখন সংসদে বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপের দায়িত্বও পান তিনি। তখন তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক। এরপর ১৯৯৬ ও ২০০১, ২০১৪, ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।

  • শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করার পর ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান মোহাম্মদ নাসিম। পরের বছর মার্চে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও তাকে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নাসিম এক সঙ্গে দুই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন ১৯৯৯ সালের ১০ মার্চ পর্যন্ত। পরে মন্ত্রিসভায় রদবদলে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০০৮ সালে নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরলেও সেবার মন্ত্রিসভায় জায়গা হয়নি নাসিমের। তবে পরের মেয়াদে ২০১৪ সালে তাকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী করেন শেখ হাসিনা। রাজনীতির পাশাপাশি সমাজকল্যাণমূলক বিভিন্ন কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন মোহাম্মদ নাসিম। ঢাকাসহ নিজ এলাকা সিরাজগঞ্জে বেশ কিছু সেবামূলক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন তিনি।

আমাদের বাণী ডট কম/১৩ জুন ২০২০/ডিএ 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।