ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সোনাগাজীর সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি অফিসে সংযুক্ত করা হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি মো. সোহেল রানা বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, পুলিশ সদর দপ্তরের তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি অফিসে সংযুক্ত করা হয়েছে।

সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের মামলা তুলে না নেওয়ায় গত ৬ এপ্রিল কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় ওই মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাতের গায়ে।

ঘটনার দুই দিন পর নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে ৮ এপ্রিল সোনাগাজী মডেল থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাকে প্রধান আসামি করে আটজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয় আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়।

ঘটনার দুই দিন পর ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নুসরাত। আর তার ভাইয়ের করা হত্যাচেষ্টা মামলাটি রূপান্তরিত হয় হত্যা মামলায়।

অনেকেই এ ঘটনায় সোনাগাজীর পুলিশের বিরুদ্ধে গাফিলতি এবং আসামি ধরতে গড়িমসির অভিযোগ করেন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে। ঘটনা ভিন্নখাতে নেয়ার জন্য ওসি মোয়াজ্জেম নুসরাতের মৃত্যুর বিষয়টি ‘আত্মহত্যা’ বলে চালিয়ে দেয়া এবং অপরাধীদের রক্ষার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ ওঠে।

এই পরিস্থিতিতে ১০ এপ্রিল মোয়াজ্জেম হোসেনকে সোনাগাজী থানার দায়িত্ব সরিয়ে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে বদলি করা হয়। মামলার তদন্তভার দেয়া হয় পিবিআইয়ের হাতে।

নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার ওই ঘটনা সারা দেশে ক্ষোভের সৃষ্টি করলেও ফেনীর পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম ঘটনার তদন্তে যাথাযথ গুরুত্ব দেননি বলেও অভিযোগ ওঠে। এছাড়া দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ ওঠে আরও আরও দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। তারা হলেন- উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ইকবাল ও মো. ইউসুফ।

এই প্রেক্ষাপটে অবহেলার পাশাপাশি সার্বিক বিষয় খতিয়ে দেখতে ১৩ এপ্রিল পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত দল গঠন করে দেয় পুলিশ সদর দপ্তর।

তদন্ত দলের সদস্যরা দুই দফা ফেনী গিয়ে কয়েকজন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বেশ কয়েকজনের বক্তব্য শোনেন।

পরে নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করে পুলিশ সদর দপ্তরের তদন্ত কমিটি। ডিআইজি এসএম রুহুল আমিনের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি ২ মে প্রতিবেদন পুলিশ সদর দপ্তরে জমা দেয়।

তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ পুলিশের সংশ্লিষ্ট ইউনিটে পাঠানো হয়। সংশ্লিষ্ট ইউনিট অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। ফেনীর পুলিশ সুপারের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।