ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকা;  যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামিমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী মো. মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরীকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা (উপ-পরিচালক) শাহীন আরা মমতাজ জানান, এই বিষয়ে অনুমতি চেয়ে গত ১৩ জুলাই ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে আবেদন করা হয়েছে। তবে আবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও বিস্তারিত জানাতে রাজি হননি তিনি।

আদালতে জমা দেওয়া আবেদনে দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা বলেন, পাপিয়া ও সুমন চৌধুরীকে বিমানবন্দর থানা ও শেরেবাংলা নগর থানায় গ্রেপ্তার দেখানোর পর ডিবি ও র‌্যাব রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এরপর থেকে তারা কাশিমপুর কারাগারে রয়েছেন। তবে, আসামিদের সঙ্গে জড়িত অন্য অভিযুক্তদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহসহ অভিযোগের বিষয়ে দুদকেরও বিস্তারিত তথ্য জানা জরুরি। এজন‌্য তাদের জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজন।

দুদকের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, জিজ্ঞাসাবাদ করার আগেই করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হয়ে গেছে। ফলে পাপিয়া ও সুমন চৌধুরীকে হেফাজতে নিয়ে বক্তব‌্য নিতে পারেনি দুদক। ফলে দুদকের হাতে আসা নথির সঙ্গে তাদের বক্তব্য যাচাই করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের অনুমতি চেয়েছি।

দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, অনুসন্ধান চলছে। আইন-কানুন দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সম্পদের বৈধ উৎস দেখাতে না পারলে পাপিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।

যুবলীগের বহিষ্কৃত এই নেত্রী গ্রেপ্তারের আগে গুলশানের অভিজাত হোটেল ওয়েস্টিনের প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুইট ভাড়া নিয়ে মাসে বিল গুনতেন কোটি টাকা। সব সময় সঙ্গে থাকত সাতজন অল্পবয়সী তরুণী। আর আনাগোনা ছিল সমাজের নানা পর্যায়ের ‘এলিট’ মানুষের।

নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের (বর্তমানে আজীবন বহিষ্কৃত) সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়া গত ২২ ফেব্রুয়ারি স্বামী মফিজুর রহমান সুমন ও দুই সহযোগী সাব্বির খন্দকার ও কাজী তায়্যিবা নূরসহ দেশত্যাগের সময় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন। ধরা পড়ার পর তাকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে তিনটি মামলা করে র‌্যাব। এ ছাড়া মানিলন্ডারিং আইনে আরেকটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রেখেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডি।

গ্রেপ্তারের পর তথ্য বেরিয়ে আসে, গুলশানের পাঁচ তারকা হোটেল ওয়েস্টিনের প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুইট সাড়ে ৪ মাস ধরে ভাড়া ছিল পাপিয়ার কাছে। এ সময়ে হোটেলটির কক্ষ ভাড়া, মদের বিল, খাবারের খরচসহ আনুষঙ্গিক মোট বিল হয়েছিল তিন কোটি ২৩ লাখ টাকা। প্রতিদিন হোটেলের বিল বাবদ গড়ে খরচ করেন আড়াই লাখ টাকা। তরুণীদের অনৈতিক ব্যবহার, অস্ত্র, মাদক, চোরাচালান, জাল নোটের কারবার, চাঁদাবাজি, তদবির-বাণিজ্য, জায়গাজমি দখল-বেদখল ও অনৈতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্থবিত্তের মালিক হন পাপিয়া ও সুমন দম্পতি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, অনৈতিক ও অপরাধকর্মের মাধ্যমে পাপিয়া যেভাবে টাকা কামিয়েছিলেন, তাতে তার মনে হয়েছিল, কেউ তার কিছু করতে পারবে না। পেছন ফিরে তাকানোর সময় শেষ হয়ে গেছে। বার্ষিক কর দিতে হবে ভেবে ব্যাংকেও খুব বেশি টাকা রাখতেন না। হোটেল ওয়েস্টিনে তার সঙ্গে আড্ডা দিতে আসা অনেকের সঙ্গেই পাপিয়া ছবি তুলেছেন। তাছাড়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। পাপিয়ার অপরাধ কর্মকাণ্ডের নেপথ্যে কারা, আসল সত্য কী, তা উদ‌ঘাটনের চেষ্টা করছে তদন্তসংশ্লিষ্টরা।

আমাদের বাণী ডট কম/১৮  জুলাই ২০২০/পিপিএম

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।