উপজাতীয় আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর আধিপত্য বিস্তারে তিন পার্বত্য জেলার রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায় মাঝে মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও বান্দরবান জেলা অনেকটাই শান্ত ও সৌহার্দপূর্ণ । তাই এই জেলাকে বলা হয় সম্প্রীতির বান্দরবান।

কিন্তু গত কিছু দিন ধরে আঞ্চলিক পাহাড়ি সংগঠন জেএসএস ও নতুন শক্তিশালী হওয়া মগ লিবারেশন পার্টির মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে এই শহরেও শুরু হয়েছে খুনোখুনি। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে টার্গেট করে হত্যা করছে।ফলে বান্দরবানের সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরণের উৎকন্ঠা বিরাজ করছে।

জানা গেছে, পাহাড়ী আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন গ্রুপ উপগ্রুপের নেতৃত্ব ও প্রতিশোধ এবং আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বান্দরবানে মরিয়া হয়ে উঠেছে। সাথে যুক্ত হয়েছে মগ বাহিনী। নিজেদের শক্তি জানান দিতে অন্য দুই জেলা থেকেও পাহাড়ী দুষ্কৃতিকারীদের আগমন ঘটছে বান্দরবানে। যার কারণে সম্প্রতি এই জেলায় ৭ জন খুন, অপহরণসহ একাধিক রক্তারক্তির ঘটনা ঘটেছে।

এদিকে গত ৩ এপ্রিল ২০১৯ নাইক্ষ্যংছড়িতে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয় জ্ঞান শংকর চাকমা। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের জেএসসে সশস্ত্র সংগঠনের ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী এবং রাঙামাটি এলাকার প্রধান অর্থ সংগ্রাহক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ঘটনার সময় তার কাছ থেকে র‌্যাব ৭টি এসএমজি ও ৪৩৭ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে।

১৪ এপ্রিল ২০১৯ রাতে তাইংখালী বাজারে সন্ত্রাসীরা বাড়িতে ঢুকে অংক্যচিং মারমা (৫০) নামের একজনকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করে। তিনি জনসংহতি সমিতির রাজবিলা ইউনিয়ন কমিটির সদস্য বলে জানান সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। জেএসএস ত্যাগ করে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়ায় তাকে খুন করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে মঙ্গলবার (৭ মে) বান্দরবান সদর উপজেলার রাজবিলা ইউনিয়নের দুর্গম তাইংখালী এলাকায় বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে বিনয় তঞ্চঙ্গ্যা (৩০) নামে এক ব্যক্তিকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। জেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার উত্তরে তাইংখালী বাজারসংলগ্ন পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত বিনয় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে জানিয়েছেন তাইংখালীপাড়ার কার্বারী (পাড়াপ্রধান)। পরে ৯ নম্বর সইনক্ষ্যংপাড়ায় গিয়ে পুরাধন তঞ্চঙ্গ্যা (৪৫) নামের একজন অপহরণ করে নিয়ে গেছে। তাঁর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার (৯ মে) আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে জয়মনি তঞ্চঙ্গ্যা (৫২)কে গুলি করে হত্যা করেছে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা। নিহতের ছেলে রিপন তংচঙ্গ্যা স্থানীয় জেএসএস নেতাকে খুঁজতে এসে তাকে না পেয়ে সন্ত্রাসীরা তার বাবাকে খুন করে। ধারাবাহিক এসব ঘটনার সাথে মগ বাহিনীকে দায়ী করছেন জনসংহতি সমিতির নেতারা।

এসব ঘটনার পর থেকে পাহাড়ের সাধারণ মানুষের মধ্যে আতংক-উৎকন্ঠা বিরাজ করছে। আতংকের মধ্যে দিন কাটচ্ছে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল জনসংহতি সমিতির সহযোগী সংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতা কর্মীরাও।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, জনসংহতি সমিতির সাথে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এমএলপির মধ্যেকার চলমান দ্বন্দ্বের জের ধরে ধারাবাহিক প্রতিশোধ নিতে এসব হামলার ঘটনা ঘটেছে। দীর্ঘদিন ধরে বান্দরবানে জেএসএসের একক আধিপত্য থাকার ফলে এই জেলায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে তেমন কোনো দ্বন্দ্ব ছিলো না। কিন্তু সম্প্রতি সে জায়গায় এমএলপি নামে নতুন বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে এবং তাদের কাছে রয়েছে অত্যাধুনিক অস্ত্র। অনিবার্যভাবেই দুই গ্রুপের মধ্যে শুরু হয়েছে আধিপত্য বিস্তারের লড়াই।

এ প্রসঙ্গে বান্দরবান জেলা পুলিশ সুপার জাকির হোসেন মজুমদার জানান, পাহাড়ে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে একের পর এক খুন হচ্ছে মঙ্গলবারের ঘটনা তার প্রতিফলন। তবে কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তা এখনো জানা যায়নি। তবে বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান পুলিশের জেলার র্শীষ এই কর্মকর্তা।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।