দরিদ্র পরিবারের বাক প্রতিবন্ধী জয়নব বেগম ২০১১ সালের দিকে লালসার শিকার হন প্রতিবেশী আবুল কালামের বখাটে ছেলে ফেরদৌস আলমের। সে কৌশলে জয়নবকে নিব বাড়ির শয়নক্ষে নিয়ে জোরপূর্বক যৌন মিলনে বাধ্য করে। ঘটনাটি জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার কুসুম্বা ইউনিয়নের চক-সিধইল গ্রামের।

এরই ধারাবাহিকতায় এক পর্যায়ে বাক প্রতিবন্ধী মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়, শিশুটি জন্মের আগে জয়নব ও তার পেটের সন্তানকে মেনে নিতে জয়নবের দরিদ্র ও বৃদ্ধ বাবা-মা অনেক অনুনয়-বিনয় করেও মন গলাতে পারেনি ফেরদৌস আলম ও তার পরিবারের। এছাড়াও জয়নবের পরিবার গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিদেরও বিষয়টি মীমাংসার জন্য বললেও কোন মীমাংসা না হওয়ায় বাধ্য হয়ে ২০১২ সালে থানায় অভিযোগ দিলে ঘটনাটি গড়ায় আদালত পর্যন্ত। এরই মধ্যে অবোধ প্রতিবন্ধী জয়নব জন্ম দেন ফুঁটফুঁটে শিশু কন্যা, শিশু কন্যাটির নাম দেওয়া হয় জুঁই।

আদালতে এ নিয়ে মামলা চলার এক পর্যায়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানের সহায়তায় ডিএনএ পরীক্ষায় নিশ্চিত হয় শিশুকন্যা জুঁই ফেরদৌস আলমেরই সন্তান, ডিএনএ পরীক্ষায় ধরা পরলেও এমন গর্হিত অপরাধ থেকে রক্ষা পেতে ফেরদৌস আলম ও তার পরিবার নানা অপকৌশল চালিয়ে যাচ্ছে।

এর অংশ হিসেবে কুসুম্বা ইউনিয়নের কাজী আব্দুর রহমানের সহযোগী বেলাল হোসেন ও গ্রামের স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীদেরকে দিয়ে মোটা অংকের অর্থ সুবিধা দিয়ে ৬০ হাজার টাকা মোহরানা পরিশোধ দেখিয়ে বিয়ের নাটক সাজান ফেরদৌস, যাতে যে কোন সময় সহজেই তালাক দেওয়া যায়। এতে করে কাজীসহ ফেরদৌসের অপকৌশল ধরা পড়ে যায় জয়নব বেগমের বাবা-মার কাছে। ফলে তাদের অপকৌশল আর আলোর মুখ দেখেনি।

ডিএনএ পরীক্ষায় প্রমানিত হলেও শিশু কন্যা জুঁই নিজ বাবার কাছ থেকে পায়নি কন্যার স্বীকৃতি। এ অবস্থায় ৭ বছর পেরিয়ে গেলেও পিতৃ পরিচয় না থাকা ও লোকলজ্জার ভয়ে স্কুলে লেখাপড়া করতে পারছে না অবোধ শিশুটি এবং ফলে সে স্থানীয় একটি মক্তবে আমপাড়াতে পড়ে, অন্য দিকে সামাজিক ভাবেও ধিকৃত হচ্ছে ওই শিশুটিসহ অসহায় পরিবারটি। এছাড়াও বোবা মেয়ে আর নাতনীর নিরাপত্তাহীনতা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে উৎকন্ঠায় রয়েছেন দরিদ্র বাবা-মা।

সিধইল গ্রামের কেউ এ বিষয়ে কথা বলতে না চাইলেও পাশ্ববর্তী লাটপাড়া গ্রামের মতিয়ার রহমান ও ফেরদৌস আলম বলেন, ৮ বছর আগে বোবা মেয়েটির নির্যাতনের খবর আমরা শুনেছি, এ পর্যন্ত কোন ভরণপোষণ কন্যা শিশুটিকে দেওয়া হয় না, কিছুদিন আগে সাজানো একটি বিয়ের রেজিষ্ট্রির খবর আমরা জেনেছি, তবে যাই হোক দ্রুত আমরা এর সুষ্ট বিচার দাবি করছি।

কুসুম্বা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুক্তার হোসেন মন্ডল জানান, বোবা মেয়েটির ঘটনাটি মাননীয় আদালতে মামলা চলমান রয়েছে, আদালত যে রায় দেয় তা আমি বাস্তবায়ন করব এবং ছেলেটি (ফেরদৌস) আমার কাছেও স্বীকার করেছে কন্যা শিশুটি তার।

কুসুম্বা ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত কাজী আব্দুর রহমানের সহযোগী বেলাল হোসেন ৬০ হাজার টাকা মোহরানা পরিশোধ দেখিয়ে বিয়ের নাটক ঘটনাটির সত্যতা স্বীকার করেন, তবে ওই সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত সবাইকে চিনলেও নাম বলতে পারবেন না বলেও জানান। অনেক চেষ্টাতেও দেখা মেলেনি ফেরদৌস আলমের এবং এ বিষয়ে কথা বলতেও রাজি হয়নি তার পরিবার।

বাক প্রতিবন্ধী জয়নবের মা মেহেরুন নেছা বলেন, দীর্ঘ ৮ বছর ধরে মামলা চলছে, আমরা গরীব হওয়ায় প্রভাবশালী ফেরদৌস ও তার পরিবার মামলা থেকে বাঁচতে মামলার প্রথম থেকেই বিভিন্ন রকম কৌশল খাটাচ্ছে ,ডিএনএ টেষ্টে কন্যা শিশুটি ফেরদৌসের প্রমাণিত হওয়ায় গ্রামের প্রভাবশালীদের নিয়ে ৬০ হাজার টাকা দেন-মোহর পরিশোধ দেখিয়ে বিয়ের নাটকের ঘটনাটি আমরা জানার পর পরবর্তীতে আর তা সফল হয়নি, আমি চাই আমার বোবা মেয়ের স্ত্রীর মর্যাদা আর আমার নাতনীর পিতার পরিচয়, মেয়েটি বড় হচ্ছে, তাকে লেখাপড়াসহ বিয়ে দিতে হবে, পিতার পরিচয় না থাকলে সবাইত তাকে অবৈধ সন্তান বললে। শিশু কন্যা জুঁই এ ব্যাপারে কিছু না বলতে পারলেও তার নাম বলেছে জুঁই এবং সে স্থানীয় একটি মক্তবে আমপাড়াতে পড়ে বলে জানায়।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবি (স্পেশাল পিপি) এ্যাড. ফিরোজা চৌধূরী জানান, এসব অপকৌশল করলেও কোন ভাবেই দায় এড়াতে পারবে না, যা কিছু করতে হবে আদালতের মাধ্যমেই করতে হবে স্থানীয়ভাবে মীমাংসার কোন সুযোগ নেই,ডিএনএ পরীক্ষায় যেহেতু পজিটিভ এসেছে সেহেতু শিশুকন্যা জুঁই পাবে তার বাবার স্বীকৃতি আর বাক-প্রতিবন্ধী জয়নবকে স্ত্রীর মর্যাদা দিতে বাধ্য ফেরদৌস, এমন মন্তব্য করেন রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।