ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকা;  যশোর জেলায় গত কয়েকদিনের ব্যবধানেই করোনা ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ল্যাব ‘পরিচ্ছন্নতার’ জন্য পরীক্ষা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখায় এ অঞ্চলের নমুনা পাঠানো হচ্ছিল খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (খুমেক)। এতে প্রথম দিন থেকেই আক্রান্তের সংখ্যা সর্বনি¤œ স্তরে নেমেছিল। তবে ফের যবিপ্রবি ল্যাবে পরীক্ষা শুরু হলে হঠাৎ করেই ৫৭টি নমুনায় ১১ করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ কারণে যবিপ্রবি ও খুমেক ল্যাবের করোনা রোগী শনাক্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রমতে, করোনা প্রাদুর্ভাবে খুলনা বিভাগে শুধু খুমেকে একমাত্র ল্যাব হিসেবে স্বাস্থ্য বিভাগ কার্যক্রম শুরু করে। সে সময় ১২-১৬ এপ্রিল পর্যন্ত যশোরের কিছু নমুনা সংগ্রহ করে খুমেক ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। সেখানে মাত্র একজনের নমুনায় করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এর পর স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমতিতে যবিপ্রবি জিনোম সেন্টারে করোনা পরীক্ষা শুরু করলে যশোরসহ আশপাশের কয়েকটি জেলার নমুনা এ ল্যাবেই পরীক্ষা হচ্ছিল। তবে পরীক্ষা কার্যক্রম শুরুর একদিন পর থেকেই এ ল্যাবে দীর্ঘ হতে থাকে আক্রান্তদের তালিকা।

এমনকি গত ১৭-২৯ এপ্রিল পর্যন্ত ৫৪ জনের নমুনায় করোনা ভাইরাস পজিটিভ বলে শনাক্ত করে যবিপ্রবি ল্যাব। যার কারণে জেলা প্রশাসন জরুরি মিটিং করে যশোর জেলাকে পুরোপুরি লগডাউন ঘোষণা করে। এর পর যবিপ্রবি ল্যাব ‘পরিচ্ছন্নতার’ কথা জানিয়ে পরীক্ষা সাময়িক বন্ধ রাখা হয়। ফলে যশোরের নমুনা আবারও খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (খুমেক) ল্যাবে পাঠানো হয়। সেখানে তিন দিনে মোট ১৪২টি নমুনা পরীক্ষা করে মাত্র একটি নমুনায় ভাইরাস শনাক্ত হয়, যা যবিপ্রবির ল্যাবে আক্রান্তের হারের তুলনায় একদম নগণ্য। তবে ফের যবিপ্রবিতে পরীক্ষা শুরু করা হলে এক লাফেই বাড়তে শুরু করেছে আক্রান্তের সংখ্যা।

এদিকে এসব করোনা পরীক্ষার ফলে যশোরের সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। যশোর ও খুলনার দুই ল্যাবে পরীক্ষার ফল ‘আকাশ-পাতাল’ পার্থক্য হাওয়ায় এখন কাউকে বিশ্বাস করতে পারছে না মানুষ। তবে খুমেকের অধ্যক্ষ ও যবিপ্রবির ভিসি তাদের ফল নিশ্চিত বলে জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ১২-১৬ এপ্রিল পর্যন্ত যশোরের করোনার উপসর্গ থাকা কিছু মানুষের নমুনা সংগ্রহ করে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। সেখানে মাত্র একজনের নমুনায় করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এর পর থেকে ১৭-২৯ এপ্রিল পর্যন্ত যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনোম সেন্টারে করোনা পরীক্ষা শুরু হয়। সেখানে মোট ৫৪ জনের করোনা ভাইরাস পজিটিভ পাওয়া যায়। এর পর যশোরের নমুনা আবারও খুমেক ল্যাবে পাঠানো হয়। সেখানে তিন দিনে ১৪২টি নমুনা পরীক্ষা করে মাত্র একটি নমুনায় করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়।

যবিপ্রবি জিনোম সেন্টারের সহযোগী পরিচালক ও অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. ইকবাল কবীর জাহিদ জানান, ল্যাব পরিচ্ছন্ন করার পর আমরা সোমবার থেকে আবার করোনা পরীক্ষা শুরু করেছি। এদিন যবিপ্রবি জিনোম সেন্টারে ৯৪টি নমুনা পরীক্ষায় ১৯ জন কোভিড-১৯ পজিটিভ রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে যশোর জেলার ৫৭টি নমুনায় ১১ জন, ঝিনাইদহ জেলার ২৩টি নমুনায় ৭ জন, চুয়াডাঙ্গার ১৩টি নমুনায় একজন রোগী শনাক্ত হয়েছে এবং মাগুরা জেলার ১টি নমুনা পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এসেছে।

এদিকে যশোর ও খুলনার দুই ল্যাবে পরীক্ষার ফল ‘আকাশ-পাতাল’ পার্থক্য হাওয়ায় এখন কাউকে বিশ্বাস করতে পারছে না মানুষ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে ল্যাবের কার্যকারিতা নিয়ে। দুই ল্যাবের পরীক্ষার ফল বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে।

যশোরের সিভিল সার্জন শেখ আবু শাহীন বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আদেশক্রমে নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়ে থাকে। তারা যেখানে পাঠাতে বলেন আমরা সেখানে পাঠাই। সোমবার থেকে আবারও যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনোম সেন্টারে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠানো হয়। রিপোর্ট বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই।

পরীক্ষার ফল সম্পর্কে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আবদুল আহাদ জানান, আমাদের রিপোর্টে কেউ প্রশ্ন তোলেনি। আমরা সঠিক পথেই আছি। আমাদের রিপোর্টের ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত। দুই ল্যাবের ফলের পার্থক্য বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি অণুজীব বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। একই সঙ্গে তিনি ফলের এমন তফাতের কারণে চিন্তিত বলে জানান।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় পরিচালক ডা. রাশিদা সুলতানা জানান, ফলের পার্থক্যের কারণ আইইডিসিআর বলতে পারবে। যশোরের নমুনার দুই ল্যাবের পরীক্ষার ফলের ফারাকের বিষয়টি ঊর্ধŸতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, ল্যাব পরিচ্ছন্ন করার আগের কিছু নমুনা ছিল। আর সোমবার কিছু নমুনা হাতে পাওয়া গেছে। মোট যশোরসহ তিন জেলার ৯৪টি নমুনার মধ্যে আগের ৫৪টি নমুনা আর বাদবাকি পজিটিভগুলো নতুন নমুনার। যশোরের সিভিল সার্জন সোমবার ৪১টি নমুনা পাঠান। এর মধ্যে একটি বাদ দেওয়া হয়েছে।

খুলনা মেডিকেল এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবের করোনা পরীক্ষার ফল বিষয়ে তিনি জানিয়েছেন, অন্য কোনো ল্যাবের পরীক্ষার বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। তবে আমাদের ল্যাবের পরীক্ষার ফলে আমরা নিশ্চিত। সূত্র; আমাদের সময়

স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত হেলথ বুলেটিনের সর্বশেষ (০৯ মে )  তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও পাঁচ হাজার ২৪৭টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। আগের কিছু মিলিয়ে পরীক্ষা করা হয় পাঁচ হাজার ৪৬৫টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো এক লাখ ১৬ হাজার ৯১৯টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় আরও ৬৩৬ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ হাজার ৭৭০ জন। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন আরও আটজন। এদের সবাই পুরুষ। ফলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২১৪-এ। আর গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও ৩১৩ জন। সব মিলিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন দুই হাজার ৪১৪ জন।

আমাদের বাণী ডট/১০ মে ২০২০/পিবিএ 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।