অঙ্ক না পারায় নবম শ্রেণির কয়েকজন ছাত্রীকে ক্লাসের বাইরে গিয়ে সূর্যের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার শাস্তি দেন এক শিক্ষক। প্রচণ্ড রোদের তাপ সহ্য করতে না পেরে এক ছাত্রী কাছের একটি গাছের ছায়ায় দাঁড়ায়। কিন্তু সেখান থেকে তাকে আবার রোদে এনে দাঁড় করানো হয়। একপর্যায়ে মেয়েটি অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এর পর থেকে সে অস্বাভাবিক আচরণ করছে। বারবার মূর্ছা যাচ্ছে। জ্ঞান ফিরলে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর আবার চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে পড়ে।

মেয়েটির নাম হুমাইয়ারা খাতুন। ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় মেয়েটি মানসিক ‘ভারসাম্যহীন’ হয়ে পড়েছে বলে দাবি করেছে তার পরিবার।

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার রাশিদ আলী মেমোরিয়াল গার্লস হাইস্কুলে এ ঘটনা ঘটেছে।

মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ওই ছাত্রীর বাবা আইয়ুব আলী বিদ্যালয়টির গণিত বিষয়ের সহকারী শিক্ষক বিমল চন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ইউএনও বিষয়টির তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।

অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত শনিবার সকালে হুমাইয়ারা খাতুন স্কুলে যায়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গণিত ক্লাস ছিল। গণিতের শিক্ষক বিমল চন্দ্র সরকার ক্লাসে ঢুকে ছাত্রীদের একটি অঙ্ক করতে বলেন। আটজন ছাত্রী সেটি পারেনি। পরে তাদের শ্রেণিকক্ষ থেকে বের করে মাঠে সূর্যের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার শাস্তি দেন তিনি। এতে হুমাইয়ারা অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তার মাথায় পানি ঢেলে সুস্থ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তার জ্ঞান না ফেরায় পরে আইয়ুব আলীকে ফোনে বিষয়টি জানানো হয়। তিনি স্কুল থেকে মেয়েকে নিয়ে স্থানীয় বাংলাবাজারের একজন পল্লিচিকিৎসককে দেখান। ওই চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে সিলেট নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
গত রোববার সকালে তাকে সিলেট নিয়ে এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের নিউরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোস্তফা হোসেনকে তাঁর চেম্বারে দেখান। তিনি কিছু ওষুধ ও কয়েকটি পরীক্ষা দেন। রাতেই মেয়েটিকে আবার দোয়ারাবাজারে নিয়ে আসা হয়। পরদিন সোমবার পরীক্ষার প্রতিবেদন চিকিৎসককে দেখানো হলে তিনি মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন।
মেয়েটির বাবা আইয়ুব আলী বলেন, রোদে দাঁড় করিয়ে রাখার কারণে তাঁর মেয়ে যে অসুস্থ হয়েছে, এটি তখন শিক্ষকেরা বলেননি। এখন শিক্ষার্থীরা বলছে, তাদের নিষেধ করা হয়েছিল, যাতে বিষয়টি কেউ না জানে। মেয়ের অবস্থা খারাপ দেখে তিনি নিজে ভয় পেয়ে গেছেন, তাই ইউএনওর কাছ অভিযোগ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মেয়ে আমার পাগলের মতো হয়ে গেছে। বেশির ভাগ সময় জ্ঞান থাকে না। জ্ঞান ফিরলে শুধু তাকিয়ে থাকে। এরপর চিৎকার করে মাথায় চুল টানতে টানতে আবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। আল্লাহই জানেন কী হবে।’

মেয়েটির চাচাতো ভাই ব্যবসায়ী আরব আলী বলেন, ‘আমার ধারণা, সে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। সে যখন হঠাৎ করে চিৎকার করে কান্না শুরু করে, তখন ওর সঙ্গে পরিবারের অন্যরাও কাঁদতে থাকে।’

অভিযুক্ত শিক্ষক বিমল চন্দ্র সরকার বলেন, ক্লাসে ৩০ থেকে ৩৫ জন ছাত্রী ছিল। এর মধ্যে মাত্র পাঁচ থেকে সাতজন অঙ্ক পেরেছে। তাই তিনি অন্যদের ক্লাসের বাইরে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াতে বলেছিলেন। বারান্দা ছোট হওয়ায় হয়তো দু-একজন মাঠে গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। তিনি আরও বলেন, ‘যেভাবে বলা হচ্ছে, আমি সেভাবে শাস্তি দিইনি। আর শাস্তি দেওয়ার নিয়ম তো এখন নেই। তাকে রোদে দাঁড় করিয়ে রাখার অভিযোগ সত্য নয়।’

ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাঞ্চন মিয়া বলেন, ‘আসলে প্রচণ্ড গরমে এমনটা হয়েছে। মেয়েটি অসুস্থ হওয়ার পরই আমরা তার অভিভাবককে খবর দিয়েছি এবং বিষয়টি জানিয়েছি। তারপরও ওই শিক্ষকের কোনো ত্রুটি থাকলে আমরা সেটা দেখব।’

এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মেহের উল্লাহ বলেছেন, ‘স্কুলটি বেসরকারি। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন। তাঁকে বলেছি অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে। না হলে আমরা আইনি পদক্ষেপ নেব।’

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।