বগুড়ায় দশম শ্রেণির স্কুল ছাত্রী মাইশা ফাহমিদা সেমন্তির (১৫) আত্মহত্যায় প্ররোচনার বিচারের দাবিতে তার সহপাঠীরা মানববন্ধন করতে চাইলে পুলিশের বাঁধা দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।মঙ্গলবার দুপুর ১২টা দিকে বগুড়া ওয়াইএমসিএ স্কুলের সামনে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করতে চাইলে পুলিশ তাদের মানববন্ধন করতে দেয়নি।

জানা গেছে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে মাইশার আপত্তিকর কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ছেড়ে দেয়া হয়। এই ঘটনায় আত্ম সম্মানের ভয়ে গত ১৭ জুন দিবাগত রাত ৩ টার দিকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে মাইশা।

মাইশার বাবা হাসানুল হক রুমন বলেন, আমার মেয়ের সাথে আবিদ আহমেদ (২০) নামে একজনের সম্পর্ক ছিল। ১৭ তারিখ রাতে আবিদ আমাকে কল দিয়ে বলে আপনার মেয়ের কি হয়েছে দেখেন। আমি মেয়েকে ডেকে বলি মা তোমার কি হয়েছে আমাকে খুলে বলো। মেয়ে আমাকে তখন বলে বাবা আমার কিছু ছবি ফেসবুকে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে। ছবিগুলো আমার ব্যক্তিগত। আমি মেয়েকে বলি মা তুমি চিন্তা করোনা। আমরা থানায় মামলা করবো। এরপর আমার মেয়ে ঘুমোতে চলে যায়। সকালে স্কুলে যাওয়ার জন্য ওর মা ওকে ডাকতে ঘরে গিয়ে দেখে মাইশা ফ্যানের সাথে ঝুলছে।

কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমার মেয়েকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে আবিদ আর আবিদের বন্ধু শাহরিয়ার অন্তর। আবিদ আমার মেয়ের আপত্তিকর ছবিগুলো ফেসবুকে ছেড়েছে। আবিদের বাবা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হওয়ায় পুলিশ আমাদের কোন সহযোগিতা করছে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, আমাকে থানায় ডেকে শুধুমাত্র লিখিত নেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত পুলিশ মামলা নেয়নি। ২৬ দিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ আবিদ কিংবা অন্তর কাউকেই আটক করতে পারেনি। আমার মেয়েকে আত্মহত্যায় যারা প্ররোচিত করেছে আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

মানববন্ধনে বাঁধা দেয়ার বিষয়ে মায়িশার বাবা বলেন, মাইশার সহপাঠীরা স্কুলের সামনে মানববন্ধন করতে চাইলে পুলিশ তাতে বাধা দেন। মাইশার বাবা বলেন, স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক তাঁকে জানিয়েছেন যে পুলিশ মানববন্ধনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে তাদের হুমকি দিয়েছে। এ কারণে তাঁরা মানববন্ধনে অংশ নিচ্ছেন না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে আবিদ বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। বর্তমানে আবিদ কোচিং করার জন্য ঢাকায় অবস্থান করছে। আবিদের বাবা তৌহিদুল ইসলাম ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স (এনএসআই) এর নীলফামারি জেলার উপপরিচালক।

বগুড়া সদর থানার ওসি এসএম বদিউজ্জামান বলেন, মানববন্ধনে বাঁধা দেয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। মামলা না নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আত্মহত্যার কারণে থানায় একটি অপমৃত্যুর (ইউডি) মামলা করা হয়েছে। এক মামলার তদন্ত চলাকালীন অন্য মামলা নেয়া যায় না বলেও জানান তিনি।

ওসি আরও বলেন, অভিযুক্ত আবিদ যেই হোক না কেন সে যদি অপরাধী হয় তাহলে অবশ্যই তাকে শাস্তি পেতে হবে।আমরা মাইশার বাবার অভিযোগের প্রেক্ষিতে আবিদ এবং শাহরিয়ার অন্তরকে গ্রেফতারের  চেষ্টা করছি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।