কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম; ভাটির দেশ বাংলাদেশ। অধিক বৃষ্টিপাত এবং উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢলে এদেশে প্রায় প্রতি বছরই বন্যা হয়। ডুবে যায় ঘরবাড়ি, মাঠ-ঘাট। ইতিমধ্যে বেশকিছু অঞ্চলে উজানের পানি প্রবেশ করার কারণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। কষ্টে পড়েছে হাজার, লক্ষ মানুষ। নষ্ট হয়েছে ফসলি জমি।

আবহাওয়া অধিদপ্তর চলতি বছর দেশে বেশি বৃষ্টি, নদীভাংগন ও পাহাড় ধসের পূর্বাভাস দিয়েছে। প্রবেশ করেছে বর্ষাকালও। যদিও বর্ষার সেই চিরচেনারূপ সচরাচর দেখা যায়না এখন। বন্যা ও নদীভাংগনের পাশাপাশি এবার নতুন করে বৈশ্বিক মহামারি করোনার তাণ্ডবে আমাদের দেশসহ গোটা বিশ্ব বলতে গেলে পর্যুদস্ত। বাড়ছে সংক্রমন ও মৃত্যু। এর শেষ কবে সেটা কেউ বলতে পারছেনা।

ক্রমশ: বৃদ্ধি পাচ্ছে নদীভাঙন। যে কারণে নদীতীরের জনপদ নদীগর্ভেই বিলীন হওয়ার শংকায় থাকে প্রতিনিয়ত। ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয় সাধারণ মানুষ। দেশের বিভিন্ন শহরে নদীভাংগনের শিকার মানুষগুলো কাজের খোঁজে ছড়িয়ে পড়ছে। কেউ রিক্সা চালিয়ে, চাকরবাকরের কাজ করে সংসার চালাচ্ছে। নেই মাথা গোঁজার ঠাঁই। দিশেহারা এসব মানুষ ও তাদের পরিবার।

এমনিতে বৈশ্বিক আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে দেশের নিম্নাঞ্চল ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এ অবস্থায় আমাদেরকে
জরুরি ভিত্তিতে করণীয় নির্ধারণ করতে হবে। নিতে হবে মহাপরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ। বন্যা প্রতিরোধে সচেতন হতে হবে সকলকে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সাথে চলমান

দীর্ঘদিনের পানি সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে হবে। তিস্তাসহ অভিন্ন সব নদ-নদীর পানি প্রবাহ স্বাভাবিক তথা ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে ভারতের সাথে কার্যকর সংলাপের মাধ্যমে উপযুক্ত সময়ে পানি পাওয়া নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনের সময় পানি না দেওয়া, বর্ষার সময় অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দেয়ার যে মানসিকতা তা থেকে বেরিয়ে আসতে ভারতকেই উদ্যোগী হতে হবে। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি ন্যায়সংগত ও কার্যকর চুক্তিই আমাদের দেশকে বছর বছর বন্যার হাত থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করতে পারে। তাছাড়া দেশের বহু নদী ড্রেজিং এর অভাবে ভরাট ও দখলের কারণে ছোট হয়ে আসছে। যে কারণে বাড়তি পানি দু’কূল ছাপিয়ে জনপদে প্রবেশ করছে। প্লাবিত হচ্ছে সংশ্লিষ্ট এলাকা। এ বিষয়ে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ জরুরী।প্রভাবশালীদের খপ্পর থেকে নদীগুলোকে বাঁচাতে হবে। আইনের আওতায় এনে অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করা দরকার। নিয়মিত ড্রেজিং এর মাধ্যমে নদীর গতিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে হবে।
এসবের পাশাপাশি বন্যা-পরবর্তী দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রশাসন ও সচেতন সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। কষ্টে পড়া মানুষগুলোর প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। জোরদার করতে হবে পুনর্বাসন কার্যক্রম। তাহলে বন্যা ও এর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমে আসবে।

নদীভাঙন এদেশে একটি বড় সমস্যা। প্রতিনিয়তই দেশের কোনও না কোন নদী ভাঙছে। ভাঙনের শিকার হচ্ছে মানুষ। ভাঙছে তাদের ঘরবাড়ি, ফসলি জমি। সে সাথে ভাঙছে তাদের স্বপ্নও। কথায় আছে নদীর এ কূল ভাঙে, ওকূল গড়ে।
তারপরও আমাদের করণীয় অনেক কিছু আছে। নিতে হবে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা।

নদীর স্রোতের কন্ডিশনের ওপর ভিত্তি করে প্রয়োজনীয় বাঁধ নির্মাণ এবং নদীতীরে বৃক্ষরোপণ ও পাথরের ব্লক স্থাপন করতে হবে। দিতে হবে মজবুত পাকা পিলার। নদীমাতৃক এদেশ যেমন নদীর কারণে উর্বর তেমনি নদীতীরের মানুষগুলো ভাঙনের শিকার। এজন্য নদী রক্ষা ও নদীর ভাঙন থেকে মানুষকেও বাঁচাতে হবে। নদী ভাঙনের শিকার মানুষগুলোকে যথাযথ সাহায্য, সহযোগিতা করতে হবে।

অনেকসময় নদীর মাঝে বিশাল বিশাল চর জেগে উঠে। এগুলো প্রভাবশালীদের খপ্পরে পড়ে যায়। জেগে উঠা এসব চরে নি:স্ব মানুষগুলোকে তাদের জীবনজীবিকার সুযোগ দিতে হবে।

বন্যা ও নদী ভাংগনের সমস্যা সমাধানে যত ধরনের কর্মকৌশল প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন করা যায় তা করতে হবে। এ নিয়ে হেলা করার কোন সুযোগ নেই। কারণ, বন্যা ও নদী ভাঙনের ফলে প্রতিবছর এদেশের অনেক সম্পদ ও প্রাণহানি হচ্ছে। আধুনিক কর্মপদ্ধতি প্রয়োগ ও স্থায়ীভাবে এসব সমস্যার সমাধানে সরকার, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও সচেতন সব মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। রক্ষা করতে হবে এদেশ, এদেশের সম্পদ ও জনপদ এবং এদেশের মানুষকে। এ দায়িত্ব সবারই।

লেখক :শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক

আমাদের বাণী ডট কম/০৮  জুলাই  ২০২০/পিপিএম 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।