রাজধানীর অদূরে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর গ্রামে ড. এম এ হাকিম গড়ে তুলেছেন বাংলাদেশের একমাত্র ঔষধি উদ্ভিদের প্রাকৃতিক জিনব্যাংক। বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে যাওয়া প্রাকৃতিক উদ্ভিদসহ ঔষধি উদ্ভিদের এই জিনব্যাংক গড়ে তুলতে তাকে শ্রম আর সাধনা করতে হয়েছে দীর্ঘ ৩০ বছরেরও বেশি। দীর্ঘ এ সময়ে তিনি তার নিজস্ব ৪২ একর সবুজ ভূমিতে গড়ে তুলেছেন এই অভাবনীয় জিনব্যাংক। এখানে রয়েছে শুধু ৬৯৭টি প্রজাতির ঔষধি গাছ। রয়েছে দেশ থেকে হারিয়ে যাওয়া সহস্রাধিক গাছ, যার নামও দেশের মানুষ ভুলতে বসেছেন। অনেকের অবশ্য অজানাও রয়েছে অনেক গাছের নাম। ঔষধি গাছের এই জিনব্যাংক দেখে অভিভূত হয়েছেন রাজধানী ঢাকায় কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীরাও।

গত শুক্রবার রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর গ্রামের শান্তিকুঞ্জে ড. নিম হাকিমের একক প্রচেষ্টায় গড়ে তোলা এই ঔষধি উদ্ভিদের জিনব্যাংক দেখতে রাজধানী ঢাকা থেকে ছুটে এসেছিলেন অনেক গণমাধ্যম কর্মী। সাথে যুক্ত হয়েছিলেন রাজবাড়ী জেলা এবং বালিয়াকান্দি উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকরাও। এতে করে সেদিন সাংবাদিকদের একটি মিলন মেলায় পরিণত হয়েছিলো বহরপুরের শান্তিকুঞ্জ। এই দিন সন্ধ্যায় এখানে বাউল গানের বর্ণাঢ্য আয়োজনও করা হয়। বিশিষ্ট অতিথিদের সঙ্গে গণমাধ্যম কর্মীরাও কুষ্টিয়ার শিল্পীদের বাউল গানের পরিবেশনা উপভোগ করেন।

শান্তিকুঞ্জে অভ্যন্তরেই ৪২ একর জমিতে গড়ে তোলা ঔষধি উদ্ভিদের জিনব্যাংক গড়ে তোলার রুপকার স্বপ্নস্রষ্টা ড. নিম হাকিম। যিনি নিম গাছের পাতায় তৈরী প্রসাধনী-ঔষধ উদ্ভাবন করে শুধু দেশেই নয়, সীমানা পেরিয়ে বিদেশের মাটিতে সমাদৃত হয়েছেন ড. নিম হাকিম নামেই।

ড. নিম হাকিমের তিন দশকের এই কর্মযজ্ঞ দেখে রাজধানী এবং রাজবাড়ীর গণমাধ্যম কর্মীরা অভিভূত হয়েছেন। বিদেশে পড়াশুনা শেষ করে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মিশনে দায়িত্ব পালন করে দেশে ফিরে একজন মানুষের এমন কর্ম, এমন প্রচেষ্টা, এমন উদ্ভাবন সরেজমিন দেখে অনুপ্রানিত হয়েছেন। গণমাধ্যম কর্মীরা মনে করেন, ড. নিম হাকিমের মানব কল্যাণময় এমন অভাবনীয় উদ্যোগ দেশের মানুষের কাছে দৃষ্টান্ত হতে পারে। তাদের অনেককেই এমন উদ্যোগে অনুপ্রাণিত করতে পারে।

নিম হাকিম শন্তিকুঞ্জে গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, তার একক প্রচেষ্টায় তিন দশকে গড়ে তোলা ঔষধি উদ্ভিদের ‘জিনব্যাংকের’ গল্প। গণমাধ্যম কর্মীদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন তিনি। ঘুরে দেখান তার ৪২ একর জমিতে গড়ে তোলা উদ্ভিদ বাগান। দেখান ৬৯৭ ঔষধি উদ্ভিদ ছাড়াও বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে যাওয়া হাজারো গাছের তার সংরক্ষণ। জানান, বহু দেশ থেকে তার নিয়ে আসা বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা এনে বপন করা এবং তার নিবিড় পরিচর্যার গল্প।

ড. হাকিম সাংবাকিদের বলেন, দীর্ঘ ৩৭ বছরের পরিশ্রমের ফসল আজকের এ ঔষধি জিনব্যাংক। তালি পাম, ননি, নীল আদা, রবিনসন বার্লিসহ পৃথিবীর অনেক বিলুপ্ত ও বিরল প্রজাতির ঔষধি উদ্ভিদ রয়েছে এখানে। বিলুপ্তপ্রায় দেশি প্রাণিকুলের অবাধ বিচরণ রয়েছে এ শান্তি মিশনে। এ মিশনে রয়েছে দেশের একমাত্র ইকো পন্ড। সমগ্র কমপ্লেক্সটি একটি অর্গানিক বা ইকো কমপ্লেক্স। দেশীয় প্রজাতির অনেক ফলদ ও বনজ বৃক্ষের সমারোহ রয়েছে এখানে।

তিনি আরো বলেন, তারা নিজেদের তৈরি কেঁচো কম্পোস্ট সার ব্যবহার করে ঔষধি উদ্ভিদ চাষ করেন। উৎপাদিত ঔষধি উদ্ভিদ প্রক্রিয়াকরণ করা হয় এবং তা থেকে প্রসাধনী সামগ্রী ও ফাংশনাল ফুড তৈরি করা হয়। এখানে গড়ে তোলা হচ্ছে আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়, আন্তর্জাতিক ভেষজ গবেষণাগার ও উন্নয়ন কেন্দ্র। তার দাবি, এসব পৃথিবীর আর কোথাও এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এরই মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের কপিরাইট পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

ড. হাকিম সাংবাদিকদের আরো জানান, এখানে ঔষধি উদ্ভিদের চারা ও বীজ উৎপাদন করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সম্প্রসারণ চলছে। উৎপাদিত জৈব বা অর্গানিক পণ্য রপ্তানি হচ্ছে সৌদি আরব, মিসর, জাপান, কোরিয়া ও মালয়েশিয়ায়। তিনি জানান, যেসব উদ্ভিদ এখানে আছে এরই মধ্যে সেগুলোর ছবিসহ ক্যাটালগিংয়ের কাজ চলছে এবং প্রতিটি ঔষধি উদ্ভিদের জীবনবৃত্তান্ত, কার্যকারিতা এবং কিভাবে মানবদেহে কাজ করে তারও বিবরণ থাকছে। এই প্রথম দেশে প্রাপ্ত ঔষধি উদ্ভিদের পূর্ণাঙ্গ ক্যাটালগের কাজ এবং বাংলাদেশ হারবাল ফার্মাকোপিয়া তৈরির কাজ করছেন তারা।

এসময় ড. নিম হাকিমের এই ৩৭ বছরের উদ্যোগের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম, কর্নেল (অব.) আসিফ, বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি আবু সালেহ আকন, রাজবাড়ী প্রেসক্লাবের সভাপতি খান মো. জহুরুল হক প্রমুখ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।