কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা; জেলার উলিপুর উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু তালেব সরকার বয়স জালিয়াতির মাধ্যমে এক স্কুল ছাত্রীকে বিয়ে করেন। বাল্যবিয়ে ঢাকতে ওই ছাত্রীর পিইসি (প্রাথমিক সমাপনী) পরীক্ষার সনদে বয়স বাড়িয়ে নেন তিনি।

গত রবিবার ৪৫ বছরের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কিশোরীর বাল্যবিয়ের এ খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে এলাকায় সমালোচনা শুরু হয়। এরই মধ্যেই চেয়ারম্যান ঘটিয়েছেন আরেক ঘটনা।

জানা গেছে, ওই স্কুলছাত্রীর প্রাথমিক সমাপনী (পিএসসি) ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) সনদে জন্ম তারিখ উল্লেখ আছে ২৩-০৯-২০০৩। সে হিসেবে তার বর্তমান বয়স ১৭ বছর ১ মাস ১২ দিন। কিন্তু বাল্যবিয়ে ঢাকতে চেয়ারম্যান আবু তালেব তা বাড়িতে ২০ বছর করেন। পিইসি পরীক্ষার সনদে বয়স বাড়িয়ে বাল্যবিয়ে নয় বলে তার পক্ষের লোকজন দিয়ে প্রচারণাও চালান।

এ ভুয়া সনদ চেয়ারম্যান আবু তালেব নিয়েছিলেন জোবাইদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক সহকারি শিক্ষক মেহেরুল ইসলামের কাছ থেকে। বয়স জালিয়াতির বিষয়টি ফাঁস হলে নতুন করে সমালোচনার মুখে পড়েন চেয়ারম্যান।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জোবাইদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক সহকারি শিক্ষক ও ভুয়া সনদের লেখক মেহেরুল ইসলাম বলেন, ‘এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক ভালো বলতে পারবেন। আমি কিছু জানি না।’

প্রধান শিক্ষক প্রবীর কুমার রায় বলেন, ‘ডিআর অনুযায়ী ওই শিক্ষার্থীর পিইসি সনদ প্রদান করা হয়। তবে কিভাবে এমনটা হলো বুঝতে পারছি না। তদন্ত করলে সত্যতা বেরিয়ে আসবে।’

চেয়ারম্যান আবু তালেব জানান, ‘বিয়ের মজলিশে পিইসির সনদে ২০ বছর উল্লেখ ছিল। সেই সনদ দিয়েই কাজী বিয়ে রেজিস্ট্রি করেছেন। ওই মুহূর্তে তারা (ছাত্রীর পরিবার) জন্মনিবন্ধন দেখাতে পারেননি। আমি দুই দিন পর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জন্ম সনদ তুলে ওই বয়স পেয়েছি।’

কুড়িগ্রাম জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন বলেন, ‘এটা ফৌজদারি অপরাধ। ঘটনার সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়নি। তবে তার বিরুদ্ধে নিয়মিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে।’

বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের ওই কিশোরীর বাবা একজন প্রতিবন্ধী। স্থানীয় একটি স্কুলে পড়াশোনা করে সে। ক্লাসে যাতায়াতের সময় কিশোরীকে দেখেন চেয়ারম্যান আবু তালেব সরকার। নানাভাবে তাকে ফুসলিয়ে ওই ছাত্রীর সেঙ্গে তিনি প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। কিশোরীর বাবা প্রতিবন্ধী হওয়ায় পরিবারে আর্থিক অনটন ছিল। এ সুযোগে কিশোরীর পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করা হবে বলেও প্রলোভন দেখানো হয়। গত রোববার রাতে কিশোরীর পরিবার চেয়ারম্যানের সঙ্গে তার বিয়ে দেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।