মোতাহার হোসেন বয়স অনুমান ৬০ বছর হবে। বাড়ি যশোর সদর উপজেলার ছাতিয়ানতলা গ্রামে। মোটরসাইকেলের কাগজ হারিয়েছে তার । ৩ বছর আগে সরকার নির্ধারিত ফিস এবং থানায় দায়ের করা জিডিসহ ডুপলিকেট ব্লুবুক পাওয়ার জন্য আবেদন করেন তিনি। সেই থেকে কতবার যে, বিআরটিএ ঝিনাইদহ সার্কেল অফিসে এসেছেন তা মনে করে বলতে পারলেন না মোতাহার হোসেন।

আবু সাইদ যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তার মোটরসাইকেলের নাম্বার ঝিনাইদহ-ল’১১-০৪৪০। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ২ তারিখে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ মালিকানা পরিবর্তনের জন্য একই অফিসে আবেদন করেন তিনি।

গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর মালিকানা পরির্বতনের কাগজ দেওয়ার কথা ছিল তার। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কালীচরণপুর গ্রামের জনি, রাজবাড়ি জেলার পাংশা উপজেলার ছোটকলকলিয়া গ্রামের মৃত তৈয়বুর রহমানের ছেলে ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুজ্জামান এসেছেন মোটরসাইকেলের মালিকানা পরিবর্তন করতে। টাকা জমা দিয়ে কয়েক বছর ধরে ঘুরছেন তারা।

ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুরের ভোরের কাগজের প্রতিনিধি নাসির উদ্দিন। নতুন কেনা মোটরসাইকেলের নাম্বার প্লেটের জন্য ৬ মাস আগে আবেদন করেন তিনি। ৫ দফায় ঘুরে গত ১৯ আগস্ট তাকে নাম্বার প্লেট না দিয়ে নাম্বার লেখা একটি কাগজ ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, দালালদের মাধ্যমে কাগজপত্র জমা না দেওয়ার কারণে এ হাল হয়েছে তাদের।

দালালের নিরাপদ বিচরণ ভূমি ঝিনাইদহ বিআরটিএ সার্কেলের বর্তমান সহকারি পরিচালক বিলাশ সরকারের সামনেই ভোগান্তির চিত্র তুলে ধরেন কেউ কেউ । বিআরটিএ স্থানীয় অফিস নিয়ন্ত্রণ করছে একাধিক দালাল সিন্ডিকেট- এমন অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার না করে সহকারি পরিচালক দাবি করেন, গেলো কয়েকদিন আগেও ১৭ জন দালাল ধরে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এ সময় জনৈক যুবককে বিলাশ সরকারের টেবিলের কাগজপত্র নাড়াচাড়া করতে দেখে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ফরিদপুর বাড়ি এ ছেলেটির নাম মখলেচ। সে নাকি তার গাড়ির ড্রাইভার। গাড়ি কিনেছেন নাকি এমন প্রশ্ন ছিল বিলাশ সরবকারের কাছে, উত্তরে তিনি বলেন আমার মোটরসাইকেলের ড্রাইভার সে।

নানা পরিচয়ে রয়েছে নারীসহ আরো কয়েকজন। যারা কেউ দপ্তরটির কর্মচারি নন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক দালাল অভিযোগ করে বলেছেন, স্যার টাকা বুঝে না নিয়ে ফাইল স্বাক্ষর করেন না। দীর্ঘ দিন একই স্টেশনে থাকা এই কর্মকর্তাকে নিয়ে আরো নেতিবাচক বিভিন্ন মন্তব্য করেন তারা।

একটি সূত্র জানায়, সারা দেশে বিআরটিএ অফিস গুলোতে দালাল চক্রের বিশাল নেটওর্য়াক রয়েছে। এক শ্রেণির অসৎ কর্মকর্তা চক্রটির মাধ্যমে কামিয়ে নিচ্ছে কাড়ি কাড়ি টাকা।

বিআরটিএ ঝিনাইদহ সার্কেল অফিস পরিদর্শন কালে দেখা যায়, যারা দালালের হাতে মোটা টাকা ধরিয়ে দিয়েছেন, তাদের মোটরযানের লাইসেন্স সহজে মিলে যাচ্ছে ।

এ বিষয়ে বিএমটিএফ (বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরী) ও টাইগার আইটির ইনড্রোল মেন্ট এক্সিকিউটিভ রবিউল ইসলাম বলেন, প্রিন্ট কার্ড না পাওয়ার কারণে ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং ব্লু-বুক (স্মার্ট কার্ড) গ্রাহকদের দিতে পারছেন না তারা।

সিরিয়াল ব্রেক করার বিষয়ে সে জানায়,আইটি সমস্যার কারণে পরে কাগজপত্র জমা দিয়ে স্বল্প সময়ে লাইসেন্স পেয়ে যাচ্ছেন কেউ কেউ । অভিযোগ করা হয়েছে এই ব্যক্তির হাতেই সব কলকাঠি।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে টাইগার আইটি ঢাকা, ম্যানেজার সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ফোন রিসিভ করেননি তিনি। এদিকে, গত ২০ আগস্ট দুপুরে জেলা প্রশাসনের দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাত দালাল বিরোধী অভিযান পরিচালনা করেন। এসময় দুইজন দালালকে ৭ দিন করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং অপর দুইজনের প্রত্যেককে ২০০ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।