ফেনসিডিল উদ্ধার মামলায় বিনা দোষে আড়াই মাস জেল খাটলেন দুলাভাই ও শ্যালক। তারা হলেন ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানার সাধুপাড়া গ্রামের মো. আসাদ ও মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানার বৈদ্যারগাঁও গ্রামের মুক্তার হোসেন। মিথ্যা মাদক মামলায় ঝিনাইদহ জেলা কারাগারে আড়াই মাস জেল খাটেন তারা। অবশেষে পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান পিপিএমের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে ২৭ আগস্ট মুক্তি পান। ঘটনার দিন বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা ছিল তাদের। ঘটনাটি ঘটে চলতি বছরের ১৪ জুন।

আসাদ ও মুক্তার বেড়াতে এসেছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের কুদ্দুসের বাড়িতে। কুদ্দুস আসাদের ভায়রা ভাই। ওইদিন দুপুরে ঝিনাইদহ বাস টার্মিনাল থেকে গোয়েন্দা পুলিশ আটক করে তাদের। ফেনসিডিল উদ্ধার মামলায় দু’জনকেই ফাঁসিয়ে দেয়া হয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঘটনার দিন জীবননগর আমের হাট থেকে ১৫০ কেজি আম কিনেছিলেন তারা। বেলা ১১টার দিকে জেআর পরিবহন বাস ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। ওই বাসে বাড়ি ফিরে যাবেন তারা। দু’জন আমের কার্টনসহ স্থানীয় বাস স্ট্যান্ডে কাউন্টারে আসেন। রেখে দেন কার্টনগুলো। টিকিট কেটে দেখেন আমের কার্টন নেই। জিজ্ঞেস করলে হেলপার জানায়, কার্টন বক্সে দেয়া হয়েছে, আপনারা বাসে উঠে পড়েন। জীবননগর থেকে ঢাকাগামী জেআর পরিবহন বাসটি (ঢাকা মেট্রো ১৪-৬৮৮৭) ছুটে চলে। পথে কালীগঞ্জ বাস স্ট্যান্ডে কয়েকজন যাত্রী ওঠায়। এরপর ঝিনাইদহ বাস টার্মিনালে নিজস্ব কাউন্টারের সামনে থামে বাসটি। আসাদ বাস থেকে নিচে দাঁড়িয়ে থাকেন। অপরজন মুক্তার বাসের সিটে বসা। তখন দুপুর প্রায় ১টা।

ঝিনাইদহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই (নিরস্ত্র) মো. বদিউর রহমান, এএসআই সাদীক মোহাম্মদ ভূঁইয়া, এএসআই প্রদীপ কুমার দাশ, এএসআই মো. ওবাইদুর রহমান, কনস্টেবল খান লিটন, মো. জাহাঙ্গীর হোসেন এবং আরাফাত ছুটে আসেন। বাসের বক্স খুলে আমের কার্টনের মালিকের খোঁজ করতে থাকেন তারা। বাসের হেলপার আসাদকে দেখিয়ে বলে, কার্টনগুলো এদের। আসাদের ভাষায় কিছু বুঝে উঠার আগেই উত্তম-মধ্যম দেয়া শুরু হয়ে যায়। বাস থেকে নামিয়ে আনা হয় মুক্তারকে। হ্যান্ডকাফ পরানো হয় দু’জনকেই। জেলা গোয়েন্দা পুলিশের দফতরে চলে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ। আম কেনার রশিদ ও বাসের টিকিট দেখায় তারা। কোনো কিছুতেই বিশ্বাস করেন না গোয়েন্দারা। একপর্যায়ে ছেড়ে দেয়ার কথা বলে তাদের কাছ থেকে নেয়া হয় ২০ হাজার টাকা। কিন্তু রাতে ঝিনাইদহ থানায় এসআই (নিরস্ত্র) মো. বদিউর রহমান মামলা করেন। এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে-আসাদ ও মুক্তারের কাছে থাকা কার্টনভর্তি ২১৫ বোতল ভারতীয় ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে। যার মূল্য দুই লাখ পনেরো হাজার টাকা। ১৫ জুন আসাদ ও মুক্তারকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালত আসামিদের ঝিনাইদহ জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। একপর্যায়ে চোরাকারবারিদের নাম-পরিচয় বেরিয়ে পড়ে।

গোপন সূত্রে খবর আসে, জেআর পরিবহন বাসটির ড্রাইভার ও হেলপার মাদক পাচারকারী চক্রের সদস্য। চোরাকারবারিদের সঙ্গে চুক্তি মোতাবেক বাসচালক আবদুল খালেক ও হেলপার রতন মিয়া জীবননগর উপজেলার পেয়ারাতলা নামক স্থান থেকে ফেনসিডিল ভর্তি একাধিক কার্টন বক্সে তুলে নেয়। সুকৌশলে সেগুলো রেখে দেয় আম ভর্তি কার্টনগুলোর পাশে। আসাদ ও মুক্তারের স্বজনরা ঝিনাইদহের পুলিশ সুপারের কাছে ছুটে আসেন। পুলিশ সুপারের নির্দেশে স্থানীয়দের সহযোগিতায় ৭ জুলাই জীবননগর উপজেলার কাশিপুর মাঠপাড়ার মো. মানিক মিয়ার ছেলে মো. রতন মিয়া (বাস হেলপার), জীবননগর উপজেলা শহরের, উপজেলা সড়কের আবুল হোসেন মাস্টারের ছেলে আনোয়ারুজ্জামান ওরফে লেলিনকে আটক করা হয়। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।

তাদের জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। বাসটির ড্রাইভার হচ্ছে জীবননগর উপজেলার চোরপোতা-তেঁতুলিয়া গ্রামের আবদুল খালেক। ঝিনাইদহ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মিজানুর রহমান খান ও পরিদর্শক (তদন্ত) মো. এমদাদুল হক বলেন, আসল মাদক ব্যবসায়ীদের দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ড্রাইভার আবদুল খালেককে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এদিকে এ ঘটনায় ২৭ আগস্ট ঝিনাইদহ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. মিজানুর রহমান নিরপরাধ মো. আসাদ ও মো. মুক্তার হোসেনকে মুক্তির আদেশ দেন। রাতেই মুক্তি পান তারা।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।