নিজস্ব সংবাদদাতা, বগুড়া;  বিশ্বে দাবানলের মত ছড়িয়ে যাচ্ছে করোনাভাইরাস। মুহুর্তের মধ্যেই বিশ্বের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ছড়িয়ে পড়ছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস টা। আক্রান্তের দিক থেকে চীন ইতালি স্পেনকে ছাড়িয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস এখন বিশ্বজুড়ে আতঙ্কের নাম। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত মরণঘাতী এই ভাইরাসে পাঁচ জন মারা গেছেন আক্রান্তের সংখ্যা অর্ধশত। তবে করোনার উপসর্গ নিয়ে যোগাযোগ করেও সারা মিলছে না দেশের একমাত্র করোনা পরীক্ষা কেন্দ্র  সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর)। এমন অভিযোগ ক্রমেই বিস্তর হচ্ছে।

সম্প্রতি গাজীপুর থেকে বগুড়ায় ফেরেন এক ব্যক্তি। এরপর হঠাৎ করেই গায়ে প্রচণ্ড জ্বর। সাথে সর্দি-কাশি। গতকাল শুক্রবার (২৭ মার্চ ২০২০) রাতে অচেতন হয়ে পরলে তাকে হাসপাতালে নিতে তার স্ত্রীকে রীতিমত যুদ্ধ করতে হয়। তবে সেই যুদ্ধে জয়ী হতে পারেননি স্ত্রী। বাঁচাতে পারেননি প্রাণ প্রিয় স্বামীকে। করোনার লক্ষণ থাকায় তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেননি কোন প্রতিবেশী। এরপর সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) হটলাইন নাম্বারে একাধিকবার ফোন- তবে সেখান থেকেই মেলেনি সাড়া।

শেষমেশ স্বামীকে হাসপাতালে নিতে অ্যাম্বুলেন্সের জন্য মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন জেলা ও উপজেলার হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশে। কিন্তু সারা রাতে কোথাও থেকে তিনি কোনো সাড়া পাননি। আজ শনিবার দুপুরে মারা যান ওই ব্যক্তি। তবে তিনি মারা যাওয়ার পর তার শরীরে করোনা আছে কি নেই সেজন্য রক্তের নমুনা পরীক্ষার আইইডিসিআরের কাছে পাঠানো হয়েছে। বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় বাড়ি ওই ব্যক্তির।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ওই নারী গণমাধ্যমকে বলেন, গত মঙ্গলবার তার স্বামী বাড়িতে ফেরেন। পরের দিন তাঁর প্রচণ্ড জ্বর আসে। শুরু হয় সর্দি–কাশি। গতকাল রাতে অবস্থার চরম অবনতি হয়। বাড়িতে আট বছরের মেয়ে ছাড়া তাঁর সঙ্গে আর কেউ নেই। গতকাল মধ্যরাতে তাঁর স্বামী প্রচণ্ড জ্বরে একপর্যায়ে নিস্তেজ হয়ে পড়েন। দিশেহারা হয়ে প্রথমে তিনি অ্যাম্বুলেন্সের জন্য বিভিন্ন জায়গায় ফোন দেন। কিন্ত জ্বরের রোগী শোনার পর কেউ আসতে রাজি হয়নি। এরপর হাসপাতালে নেওয়ার জন্য পাড়া–প্রতিবেশী ও পরিচিতজনদের সহযোগিতা চান। করোনাভাইরাসে আত্রান্ত হওয়ার আতঙ্কে কেউ কাছে আসতে রাজি হননি। এরপর তিনি একে একে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, শিবগঞ্জ থানার পুলিশ, শিবগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসে ফোন দেন সহযোগিতার জন্য। কোনো সাড়া না পেয়ে আইইডিসিআরের হটলাইনে ফোন দেন। কিন্তু লাইন পাননি। পরে ফোন দেন শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের হটলাইনে।

শিবগঞ্জের ইউএনও গণমাধ্যমকে বলেন, একজন চিকিৎসা কর্মকর্তাকে ওই ব্যক্তির বাড়িতে পাঠানো হলে তিনি তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন। ওই ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহের জন্য সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে (আইইডিসিআর) খবর দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষার ফলাফল না আসা পর্যন্ত ওই ব্যক্তির পরিবার কোয়ারেন্টিনে থাকবেন। এ ছাড়া আশপাশের ২০ থেকে ২৫টি বাড়ি লকডাউন থাকবে।

মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা শফিক আমিন বলেন, ‘হাসপাতালের হটলাইনে ফোন করা নারীর বর্ণনা শুনে মনে হলো, মানবতার কাছে আমরা হেরে গেছি। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হোক বা না হোক, একজন নাগরিক হিসেবে তাঁর চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার আছে। আমরা কেউ তাঁর পাশে দাঁড়াতে পারিনি। আমি নিজেও সকাল থেকে আইইডিসিআরের হটলাইনে যোগাযোগের দীর্ঘ চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। শেষে সিভিল সার্জন ও পুলিশকে বিষয়টি জানিয়েছি।’

প্রসঙ্গত, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৪৫৮ জন। মারা গেছেন ২৭ হাজার ৩৭০ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৩৩ হাজার ৩৭৩ জন। তবে মুহুরমুহু করে বাড়ছে এই প্রাণঘাতী করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা।

আমাদের বাণী ডট কম/২৮ মার্চ ২০২০/ডিএ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।