নওগাঁর বদলগাছী মহিলা ডিগ্রি কলেজের স্নাতক শাখা গত ১৪ বছরেও এমপিওভুক্ত হয়নি। ফলে দীর্ঘদিন যাবত কোনো বেতন-ভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন কলেজের ১২ জন শিক্ষক।

এদিকে এমপিওভুক্ত না হওয়ায় একদিকে শিক্ষকরা হতাশ হয়ে পড়েছেন, অপরদিকে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন কলেজর শিক্ষক ও সচেতন মহল।

জানা গেছে, নারী শিক্ষার উন্নয়নে ১৯৯৫ সালে বদলগাছী কলেজটিতে উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠদানের অনুমতি দেয়া হয়। শিক্ষকদের অক্লান্ত চেষ্টায় শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল করায় স্বল্প সময়ে উপজেলায় বেশ সুনাম অর্জন করে প্রতিষ্ঠানটি। বদলগাছী উপজেলায় এটিই একমাত্র মহিলা কলেজ।

এরপর ২০০৫ সালে কলেজে স্নাতক কোর্স চালু হয়। স্নাতক কোর্সেও ফলাফল সন্তোষজনক। ৮ বিষয়ের জন্য শিক্ষক আছেন ১২ জন। বর্তমানে কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শাখায় শিক্ষার্থীরা সংখ্যা ৪৫০ জন এবং স্নাতকে ২২৬ জন।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী কলেজটিতে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। দীর্ঘদিন যাবত কলেজের স্নাতক শাখা এমপিওভুক্ত না হওয়ায় নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষকরা সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ইতোমধ্যে তাদের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স শেষ হয়ে গেছে। ফলে অন্য কোনো চাকরিতেও আবেদন করার সুযোগ নেই। হতাশাগ্রস্ত শিক্ষকদের কেউ কেউ জীবন-জীবিকার তাগিদে অন্য পেশা বেছে নিয়েছেন। কেউবা কোনো উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে সরকারি সিদ্ধান্তের আশায় কলেজে পড়ে আছেন। অনেকে আবার কলেজে আসাই ছেড়ে দিয়েছেন। তারা মানবেতর জীবন-যাপন করলেও যেন দেখার কেউ নেই।

সুমি আক্তার ও জেসমিন সুলতানাসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, কলেজে থেকে তাদের যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়। শিক্ষকরা ক্লাসে তাদের ভালোভাবেই পড়ান। নিয়মিত ক্লাস হওয়ায় ফলাফলও বেশ ভালো।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ের প্রভাষক শাকিরুল ইসলাম রাসেল বলেন, মাস্টার্স শেষ করার পর ভাবছিলাম এমন এক পেশায় নিজেকে আত্মনিয়োগ করব, যা হবে সম্মানজনক, যেন সাধারণভাবে জীবন-যাপন করা যায়। এজন্যই শিক্ষকতাকে বেছে নিয়েছিলাম। ২০০৫ সাল থেকে কলেজে শ্রম দিয়ে যাচ্ছি। দীর্ঘ ১৪ বছরেও কোনো বেতন-ভাতা পাইনি। ইতোমধ্যে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সও শেষ। তাই বাধ্য হয়েই সরকারি সিদ্ধান্তের আশায় কলেজে পড়ে আছি।

তিনি বলেন, তার দুই মেয়ে আছে। বড় মেয়ে নবম শ্রেণিতে এবং ছোট মেয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ছে। সংসার চালাতে নওগাঁ শহরে একটি ইলেকট্রনিক্সের দোকানে ম্যানেজার হিসেবে চাকরি করছেন।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষকরা হচ্ছেন মানুষ গড়ার কারিগর। সেই কারিগরদের আজ করুণ অবস্থা। এ ব্যাপারে তিনি প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

দর্শণের প্রভাষক আতোয়ার রহমান জানান, তার বাড়ি জেলার ধামইরহাট উপজেলার রাঙামাটি গ্রামে। বাড়ি থেকে কলেজের দূরুত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার। স্নাতক কোর্স চালু হওয়ার সময় প্রতিদিন প্রায় ৮০ কিলোমিটার আসা-যাওয়া করতেন। দীর্ঘদিনেও এমপিওভুক্ত না হওয়ায় কলেজে যাওয়া অনিয়মিত হয়ে পড়ে। সংসারেও টানাপোড়ন দেখা দেয়। জীবন-জীবিকার তাগিদে এখন বাড়িতে কৃষি কাজ করছেন।

কলেজের শিক্ষক প্রতিনিধি প্রভাষক নজরুল ইসলাম বলেন, স্নাতক পর্যায় এমপিওভুক্ত না হওয়ায় শিক্ষকদের অবস্থা করুণ ও নাজুক হয়ে পড়েছে। কয়েকজন শিক্ষক ২৫-৩০ কিলোমিটার দূর থেকে আসা-যাওয়া করেন। তাদেরকে যাতায়াত ভাড়া পর্যন্ত দেয়া সম্ভব হয় না। তাই শিক্ষকদের জীবন মান উন্নয়নে দ্রুত এমপিওভুক্ত হওয়া প্রয়োজন।

অধ্যক্ষ সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, নারীদের উচ্চতর শিক্ষার জন্য এই কলেজে ২০০৫ সালে স্নাতক কোর্স চালু করা হয়। উপজেলার মধ্যে এটিই একমাত্র মহিলা কলেজ। স্নাতক পর্যায় এমপিওভুক্তির জন্য ২০১১ সালে তালিকা করা হয়েছিল। কিন্তু কী কারণে তালিকা থেকে বাদ পড়েছে তা জানা যায়নি। সরকারি নীতিমালার আলোকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে কলেজটি ২০১৮ সালে আবারও জরিপ করা হয়। স্নাতক পর্যায় এমপিওভুক্ত না হওয়ায় শিক্ষকরা মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। যদি এমপিওভুক্ত হয় তাহলে শিক্ষকদের পাঠদানের স্পৃহা আরও বাড়বে।

নওগাঁ জেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. মোবারুল ইসলাম বলেন, এমপিওভুক্ত নির্ভর করে পাঠদানের অনুমতি, শিক্ষার্থীর সংখ্যা, পরীক্ষার্থী ও ফলাফলের ওপর। যেসব কলেজ গ্রেডিংয়ে নির্বাচিত হবে তাদের মধ্য থেকেই স্নাতক পর্যায়ের কলেজগুলো এমপিওভুক্ত করা হবে। ইতোমধ্যে অনলাইন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আবেদন শুরু হয়েছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।