জিকরুল হক, উত্তরাঞ্চল সংবাদদাতা; গত ঈদ-উল-আজহার আগে সরকারের বরাদ্দকৃত চাল বিতরণের প্রায় দু’মাস পরে বিতরণ তালিকা (মাষ্টার রোল) জমা দিয়েছেন নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এনামুল হক চৌধুরী। এদিকে চাল বিতরণের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার দীর্ঘ দিন পরেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আইনী কোন পদক্ষেপ নেননি। এরই মধ্যে জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক আব্দুল মোতালেব সরকার ৭ দিন সময় দিয়ে মাষ্টার রোলসহ কিছু প্রামাণ্য কাগজ চেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে চিঠি দিয়েছিলেন। অথচ গত ৩ সপ্তাহেও ওই কাগজপত্র দেয়া হয়নি। ফলে জরুরী ভিত্তিতে তা পাঠানোর জন্য আবারও তাগাদাপত্র দেয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, গত আগস্ট মাসের ঈদকে সামনে রেখে জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে ওই ইউনিয়নের ৯হাজার ৯৯৮টি কার্ডের অনুকুলে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল ৯৯হাজার ৯৮০ মেট্রিক টন চাল। প্রতিটি কার্ডের অনুকুলে ১০ কেজি করে বিতরণের নির্দেশনা দেয়া হলেও অনেকেরই ভাগ্যে জুটেনি এসব চাল। অনেক তাগাদার পর গত সপ্তাহে জমা দেয়া মাষ্টার রোলে মৃত ব্যক্তি, একই নামে একাধিক ব্যক্তি, ভূয়া নাম দিয়ে ও পাশের ইউনিয়নের ঠিকানা ব্যবহার করে ১৯২ জনকে তালিকা ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া বিতরণের মাষ্টার রোলে ১৩ জনের নাম থাকলেও তাদের চাল দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অভিযোগে জানা যায়, উল্লেখিত ব্যক্তির অনুকূলে বরাদ্দকৃত পুরো চাল পাচার করা হয়েছে। অভিযোগকারীরা দাবি করেছেন, সঠিকভাবে তদন্ত করা হলে মাষ্টার রোলের তালিকায় এ ধরণের ভূয়া ব্যক্তির নাম আরও অনেক মিলবে।

ইতিমধ্যে এসব অভিযোগ তদন্তের জন্য পৃথকভাবে গঠিত দু’টি তদন্ত টিম তদন্ত করে তারা প্রতিবেদন জমা করেছে কয়েক সপ্তাহ আগে। সূত্র মতে, অনিয়মের বিষয়টিও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানা যায়। এছাড়া নিয়মানুযায়ী চাল বিতরণ শেষ হলেই বিতরণের তালিকা (মাষ্টার রোল) সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের (পিআইও) নিকট জমা দিতে হবে। কিন্তু প্রায় দু’মাসেও বিতরণের তালিকা (মাষ্টার রোল) জমা করা না করায় স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মাষ্টার রোলসহ প্রামাণ্য কিছু কাগপত্র চেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে গত ৯ সেপ্টেম্বর চিঠি দেন। সুত্র জানায়, কিন্তু তা গত ২১ দিনেও দেয়া হয়নি। ফলে একই কর্মকর্তা (উপ-পরিচালক) জরুরী ভিত্তিতে ফের কাগজপত্র চেয়ে গত ২২ সেপ্টেম্বর তাগাদা পত্র দিয়েছেন।

সুত্র মতে গতকাল শনিবার পর্যন্ত তা পাঠানো হয়নি।

এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক আব্দুল মোতালেব সরকার জানান, সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। তবে তদন্তের সাথে চাল বিতরণের মাষ্টার রোলসহ কিছু কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। তাই পুনরায় মাস্টার রোলসহ অন্যান্য কাগজপত্র চেয়ে তাগাদাপত্র দেয়া হয়েছে। কাগজপত্র হাতে পেলেই অভিযোগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

জানতে চাইলে, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক চৌধুরী আলাপন’কে জানান, আমাদেরই দলের (আ’লীগ) একটি চক্র আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে চলেছে। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তারা প্রমাণ করতে পারবে না এবং তাদের উত্থাপিত অভিযোগ মিথ্যা।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।