লিবিয়া থেকে নৌকায় ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে ডুবে প্রায় ৬০ জন মারা গেছে। নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই বাংলাদেশি। তিউনিসিয়ার রেড ক্রিসেন্ট শনিবার একথা জানিয়েছে। এ ঘটনায় ৩৭ বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। খবর এএফপির

বেঁচে যাওয়া অভিবাসীরা রেড ক্রিসেন্টকে বলেছেন, বৃহস্পতিবার রাতে লিবিয়ার উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় জুয়ারা উপকূল থেকে একটি বড় নৌকায় ৭৫ অভিবাসী যাত্রা শুরু করে। পরে তাদের একটি ছোট নৌকায় তুলে দেওয়া হলে দুর্ঘটনা ঘটে। নৌকাটি শুক্রবার সকালে তিউনিসিয়ার উপকূলে ডুবে যায়। তিউনিসিয়ার জেলেরা ১৬ জনকে উদ্ধার করে জার্জিস উপকূলে নিয়ে আসে।

তিউনিসিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর জার্জিসের রেড ক্রিসেন্ট কর্মকর্তা মঙ্গি স্লিম বলেন, ছোট নৌকাটি ছিল টইটুম্বুর। যাত্রা শুরুর ১০ মিনিট পরেই সেটি ডুবে যায়। বেঁচে যাওয়া অভিবাসীরা বলেছেন, সাগরের শীতল পানিতে তারা ৮ ঘণ্টা সাঁতরেছেন। পরে তিউনিসিয়ার জেলেরা দেশটির কোস্টগার্ডকে খবর দেয়।

তিউনিসিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, শুক্রবার তিনটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। বেঁচে যাওয়া অভিবাসীরা বলেছেন, নৌকাটি ইতালির দিকে যাচ্ছিল। এতে শুধু পুরুষ অভিবাসী ছিল। তাদের মধ্যে বাংলাদেশি ছিল ৫১ জন। এছাড়া তিন মিশরীয়, কয়েকজন মরক্কান, চাদ ও আফ্রিকার অন্যান্য দেশে মানুষ ছিল।

একটি শিশুসহ ১৪ বাংলাদেশিকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানায় রেড ক্রিসেন্ট। সংস্থার কর্মকর্তা স্লিম বলেন, তিউনিসিয়ার জেলেরা তাদের দেখতে না পেলে একজনও বেঁচে থাকত না। এমনকি নৌকা ডুবির খবরই হয়তো কেউ জানত না।

ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়া অভিবাসীদের উদ্ধারে বিভিন্ন দাতব্য সংস্থার নৌকা জড়ো হলে সাম্প্রতিক সময়ে তাদের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ইতালির অভিবাসী বিরোধী সরকারের বাহিনী এসব নৌকা লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। দেশটির উগ্র ডানপন্থী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তিও সালভিনি বলেছেন, সাগরে কোনো অভিবাসী উদ্ধার হলে তাদের জায়গা তার দেশের বন্দরে হবে না। তবে শুক্রবার লিবিয়া থেকে দুটি নৌকায় যাত্রার শুরুর পর সাগরে বিপদে পড়া ৬০ অভিবাসীকে উদ্ধার করে ইতালিতে নেওয়া হয়।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ভূমধ্যসাগরে উদ্ধার তৎপরতা বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে বলেছেন, অন্যথায় এমন ট্র্যাজেডি সামনের দিনগুলোতে আরও দেখতে হবে। ইউএনএইচসিআরের মতে, ভূমধ্যসাগর বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংযোগস্থল (ক্রসিং)। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে যাওয়ার পথে প্রতি তিনজনের একজনের মৃত্যু হয়েছে। স্বৈরশাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফির মৃত্যুর পর থেকে লিবিয়া একটি অরাজক রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। ইউরোপ পাড়ি দেওয়ার প্রধান ট্রানজিট রুট হয়ে উঠেছে লিবিয়া।

  1. জাতিসংঘের হিসেবে, চলতি বছরের প্রথম চার মাসে ভুমধ্যসাগরে ডুবে মারা গেছে ৬৪ জন। গত বছর প্রতিদিন এখানে মারা গেছে ৬ অভিবাসী। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে পৌছেছে ১৫ হাজার ৯০০ শরণার্থী। এটা গত বছরের চেয়ে সামান্য বেশি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।