আনোয়ার হোসেন আরিফ, কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতাঃ জেলার ভূরঙ্গামারীর সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে অবৈধ ভাবে নিয়ে আসা ভারতীয় এসব গরু-মহিষ বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকার নদী পথে পাচার হয়ে আসছে।
ভারতীয় চোরাই পথে আসা এসব পশুর কারণে দেশীয় খামারিরা ন‍্যয্যমূল্য নিয়ে শঙ্কিত রয়েছে। তবে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও বিজিবি চোরাচালান রোধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে।
এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়, কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার দুধকুমার নদ হয়ে বাগভান্ডার, শালঝোড়, ধলডাঙ্গা, দক্ষিন তিলাই, উত্তর তিলাই, ভাওয়াল গুড়ি, সোনাহাট উত্তর ভরতের ছড়া (কামার টারী), ও কচাকাটার বেশ কয়েকটি পয়েন্ট হয়ে সীমান্ত নদীপথে এসব পশু পাচার করছে দু’দেশের চোরা কারবারীরা। নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী দিয়ে কলা গাছের ভেলায় ভাসিয়ে এবং সীমান্তের কাটা তারের বেড়ার উপর দিয়ে গরু-মহিষ পাচার করা হচ্ছে। আর স্হানীয় প্রশাসনের আড়ালে পাচার হওয়া এসব গরু-মহিষ জেলার ভুরুঙ্গামারী হাটে বিক্রি করা হচ্ছে।
রবিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ভাওয়ালকুড়ি বিজিবি ক‍্যাম্পে জব্দ কৃত ৭ টি গরুর নিলাম কার্যক্রমে একটি প্রভাবশালী মহলের সিন্ডিকেট কাজ করছে। এরা বিজিবি’র লোকজন ও কাস্টমের লোক জনদের সাথে কথা বলে ভারতীয় ৭ টি গরুর অর্ধেক মূল‍্য নির্ধারন করে ১ লক্ষ ৭ হাজার ৫ শত ৫০ টাকা নিলামে ক্রয় করে। এই প্রভাবশালী মহলের সিন্ডিকেট টি আবার নিলামকৃত ৭ টি গরু ক‍্যাম্প থেকে বাহিরে এনে গরুর বেপারীদের কাছে ১ লক্ষ ৫৪ হাজার টাকায় বিক্রি করে।
চর ভূরুঙ্গামারীর গরুর বেপারী মাইদুল ইসলাম (৪৫), জবেদ আলী (৫০), দুলাল হোসেনসহ জানায়, আজকে ভারতীয় ৭ টি গরু ১ লক্ষ ৭ হাজার টাকায় নিলামে নেই।
২য় বারের নিলামে উক্ত গরু ৭ টি চোরা দামে ১ লক্ষ ৫৪ হাজার টাকায় ক্রয় করি।
এলাকার সচেতন মহলেরা জানায়, এই সকল প্রভাবশালী মহলের সিন্ডিকেটের কারনে এক দিকে সরকার রাজস্ব খাতে টাকা কম যাচ্ছে।অন‍্যথায় গরুর বেপারীরা চোরা মূল‍্যে গরু কিনায় লচ হচ্ছে বেপারীদের।
ভাওয়ালকুড়ি বিজিবি ক‍্যাম্প কমান্ডার রবিউল ইসলাম জানায়, এর মধ‍্যে আমরা ভারতীয় চোরাচালান বন্ধে শক্ত অবস্হান নিয়েছি। রাতের আধারে চোরাই ও নদী পথে আসা ভারতীয় গরু মহিষ গুলো আটক করছি। এবং এই সকল বিভিন্ন মহলের সিন্ডিকেটের জন‍্য আটক করা ভারতীয় গরু মহিষের নিলাম কার্যক্রমে সঠিক মূল‍্য নির্ধারণ করা যাচ্ছে না। আর সঠিক মূল‍্য নির্ধারন করতে না পারায় সরকার রাজস্ব খাতে নিলামকৃত টাকার পরিমান কম পাচ্ছে।
চর ভূরুঙ্গামারীর গরু খামারি ডাঃ মানিক উদ্দিন ও মজিবর রহমান (বিএসসি) জানায়, বর্তমান বিজিবি’র এসব চোরাচালান বন্দে অভিযানে সীমান্ত এলাকা গুলোতে নজরদারি বারানো ও শক্ত অবস্হান নেওযায় এসব ভারতীয় গরু মহিষ ভারত হতে খুবই কম আসছে। ফলে ২ সপ্তাহ থেকে আমাদের খামারি গরু গুলোর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আগের চেয়ে দাম বেশি পাচ্ছি।
ভারতীয় গরু পাচার হয়ে আসা রোধে স্থাানীয় প্রশাসন ও বিজিবি কঠোর অবস্হানে থাকলেও তা পুরোপুরি ঠেকানো যাচ্ছে না। কাস্টমস বিভাগ, ভূরুঙ্গামারী জয়মনির হাট ‘সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা’ সুমির বিশ্বাস  বলেন, রবিবার ভাওয়ালকুড়ি সীমান্ত দিয়ে আসা ভাওয়ালকুড়ি বিজিবি ক‍্যাম্পে ভারতীয় ৭ টি গরুর নিলাম কার্যক্রম ওপেন ডাকের মাধ‍্যমে নিলাম দরপত্র নির্ধারণ করা হয়। যে বেপারী দাম বেশি বলে তাকেই গরু দেওয়া হয়। এবং এই সিন্ডিকেট সব নিলাম কার্যক্রমেই থাকে।
বিজিবির ২২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্নেল মোহাম্মদ জামাল হোসেন  সাংবাদিকের  পরিচয় পেলে ব‍্যস্ততার কথা জানায়, মুঠোফোনে কয়েকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তার কোন বক্তব‍্য পাওয়া যায়নি।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘বিজিবি ও পুলিশসহ প্রশাসনের পক্ষে সম্মিলিতভাবে ভারতীয় গরু পাচার রোধে কাজ করছে। দেশীয় গরুর খামারিরা যেন সঠিক মূল্য পায় সে জন্য সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
আমাদের বাণী ডট কম/১৬  আগস্ট ২০২০/পিপিএম

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।