মানিকগঞ্জ সদর থানার পুটাইল ইউনিয়নের হাসলী নামক গ্রামের রিকসাচালক খোরশেদ আলমের সন্তান আল মামুন। রিকশা চালিয়ে অসুস্থ স্ত্রীসহ ৪ ছেলেমেয়ের ভরণ-পোষনে হিমশিম খেতেন রিকসাচালক খোরশেদ আলম।

বাবাকে সহযোগিতা করতে এলাকায় ভ্যান চালানোসহ আরো অনেক কাজ করেছেন আল মামুন। আজ সেই ভ্যানচালক মামুন এলাকাবাসীর গর্ব। জীবন সংগ্রামে উর্ত্তীণ হয়ে গত ১৯ নভেম্বর সফলতার মুখ দেখলেন এই অধ্যাবসায়ী যুবক।

শুধু লেখাপড়াই করেননি তিনি, বাবাকে সহযোগিতা করে চালিয়ে নিয়েছেন অভাবের সংসারকেও। কখনো ভ্যান চালিয়ে, কখনো হাটে সবজি বিক্রি করে, কখনো অন্যের বাড়িতে গৃহপরিচারকের কাজ করে সংসারের হাল ধরেছেন। এর সঙ্গেই চালিয়ে নিয়েছেন পড়ালেখা।

 জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত গেজেট অনুযায়ী- ৩৯তম বিসিএসে উত্তীর্ণ ৪ হাজার ৪৪৩ জন ভাগ্যবান চিকিৎসকের একজন ডা. আল মামুন।

নিজের এমন সাফল্যে আবেগে আপ্লুত ডা. আল মামুন। নিজের অভিব্যক্তি জানাতে গিয়ে প্রথমেই ডা. আল মামুন জানালেন, যে গ্রামে ভ্যান চালিয়েছেন, সুচিকিৎসার অভাবে মানুষকে কষ্ট পেতে দেখেছেন নিজের সেই এলাকার জন্য কিছু করতে চান।

তিনি জানান, এখনো গ্রামের নিম্ন আয়ের মানুষরা অসুখ হলে স্থানীয় ফার্মেসি থেকে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ নিয়েই সেবন করেন। আপাত সুস্থ হয়ে উঠলেও এভাবে অনেকেই অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করে যে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন তা ভাবেন না। তাদের সুচিকিৎসা দিতেই আমি বেশি আগ্রহী।

তিনি বলেন, এলাকার ফার্মেসির ওষুধ বিক্রেতাকেই ডাক্তার মনে করেন গ্রামের অধিবাসীরা। বড় ডাক্তারদের ফিস দিতে হবে এমন ভাবনা থেকেই দরিদ্রপীড়িতরা এমন করেন। আজ দেশের মানুষকে আমার অনেক কিছু দেয়ার সময় এসেছে। সে সুযোগ আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন। সবার কাছে দোয়া চাই যেন একজন ভালো মানবিক ডাক্তার হতে পারি।

চিকিৎসক হওয়ার পেছনে শুধু নিজের সংগ্রাম ও অদম্য ইচ্ছাকেই মূল কারণ নয় বললেন ডা. আল-মামুন। নানা বিপদে স্থানীয়দের এবং কলেজের অবদানের কথাকে ভুলেননি তিনি।

তিনি বলেন, মনে পড়ে এসএসসি পরীক্ষার সময় বোর্ডের ফিস দেয়ার সামর্থ ছিল না আমার। সময় পেরিয়ে যাচ্ছিল কিন্তু টাকা জোগার করতে পারছিলাম না। এসময় আমাদের উপজেলার চেয়ারম্যান এগিয়ে এসেছিলেন। তিনি সে ফিসের টাকা দিয়ে দিলেন। আমি এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিলাম। গোল্ডেন এ+ পেলাম।

শিক্ষকরা এমন রেজাল্টে খুব খুশি হয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। কারণ অন্যান্যদের মতো প্রাইভেট পড়তে পারিনি। শ্রদ্ধেয় স্যাররা ফ্রি পড়িয়েছেন আমাকে। স্যারদের প্রতি আমি সব সময় কৃতজ্ঞ।

জানা গেছে, মানিকগঞ্জের পশ্চিম হাসলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হাতেখড়ি হয় আল মামুনের। এরপর মানিকগঞ্জ সদরের লেমুবাড়ী বিনোদা সুন্দরী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে গোল্ডেন এ প্লাস নিয়ে এসএসসি পাস করেন। এমন রেজাল্টে ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয় তার।

দরিদ্র কোটায় বিনা খরচে এইচএসসি সম্পন্ন করেন ঢাকার ক্যামব্রিয়ান কলেজ থেকে। এরপর ভর্তির সুযোগ পান ফরিদপুর মেডিকেল কলেজেরর ২০ তম ব্যাচে। সেখান থেকেই আজ তিনি সরকারিভাবে ৩৯তম বিসিএসের মাধ্যমে স্বাস্থ্য ক্যাডারে গেজেটেড হলেন। সৌজন্যে বাংলাদেশ টুডে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।