চাঁদপুরের  মতলব উত্তর উপজেলার লুধুয়া বাজারের ওয়ালটন শোরুমের মালিক সালাউদ্দিন গত ২৩ এপ্রিল’ রাত ৯টার দিকে প্রতিদিনের ন্যায় শোরুম বন্ধ করে বাড়ী ফিরে যান। পরদিন সকাল ৬ টার দিকে পাশের দোকানদারের কাছ থেকে ফোনে জানতে পারেন তার শোরুমের শার্টারের তালা খোলা দেখা যাচ্ছে। দ্রুত শোরুমে এসে শার্টার খোলা দোকানে ঢুকে দেখতে পান ২৪টি বিভিন্ন মডেলের মোবাইল ফোন, ৫টি এলইডি টিভি, ফ্যান, আয়রন মেশিন ইত্যাদি সহ প্রায় ২লাখ ১৯ হাজার টাকার মালামাল খোঁয়া গেছে। ওয়ালটন কোম্পানী ও বাজারের নেতৃবৃন্দকে জানিয়ে চুরি যাওয়া মালামালের ইনভয়েস সংগ্রহ করে ৯মে মতলব উত্তর থানায় এজাহার দায়ের করেন সালাউদ্দিন।

এজাহার লিপিবদ্ধের পর যথারীতি তদন্তে নেমে পড়ে মতলব উত্তর থানা পুলিশ। অফিসার ইনচার্জ মো. মিজানুর রহমানের দিক নির্দেশনায় ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মোরশেদুল আলম ভূঁইয়া, তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই গোলাম মোস্তফা, এএসআই কাজী হাবিবের সমন্বয়ে গঠিত টিম চুরি যাওয়া মোবাইল সেট গুলোর মডেল ও আইএমইআই নাম্বার নিয়ে কাজ শুরু করেন। সহায়তা নেন আধুনিক প্রযুক্তির। একপর্যায়ে মিলে যায় ক্লু। চোরাই ২টি মোবাইলের লোকেশন সনাক্ত হয় চাঁদপুর শহরে।

পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির বিপিএম, পিপিএম এর সাথে তদন্ত কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করলে দ্রুত চাঁদপুর শহরে অভিযান পরিচালনাসহ প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা মিলে।
তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই গোলাম মোস্তফার নেতৃত্বে মতলব থানা পুলিশের একটি টিম ১০মে চাঁদপুর সদর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রযুক্তির সহায়তায় চোরাই ২টি মোবাইল সেটসহ চাঁদপুর শহরের প্রফেসরপাড়া থেকে গ্রেপ্তার করেন ফরিদগঞ্জের শাচনমেঘ এলাকার মৃত বিল্লাল ভূঁইয়ার ছেলে কবির (৩৩)’কে। তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক তার কাছ থেকে চুরি যাওয়া আরও ৫টি মোবাইল উদ্ধার হয়। কবিরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী চাঁদপুর সদরের রেলওয়ে শ্রমিক কলোনীর মৃত জামাল মালের ছেলে হেলাল (৩৫) এর নিকট আরও ৫টি চুরি যাওয়া দামী মোবাইল সেট মজুদ থাকার সন্ধান মিলে। এরপর টানা অভিযানে আটক করা হয় হেলালকে। ধৃত হেলালের স্বীকারোক্তি অনুসারে তার হেফাজত থেকে ওয়ালটন শোরুমের চুরি যাওয়া আরও ৫টি মোবাইল সেট উদ্ধার করতে সক্ষম হয় মতলব উত্তর থানা পুলিশের তদন্তকারী দল। এভাবে ২ জনের কাছ থেকে প্রায় ৪০ হাজার টাকা মূল্যের মোট ১২টি চোরাই মোবাইল সেট উদ্ধার হয়। ধৃত ২ চোরকে জিজ্ঞাসাবাদে বের হয়ে আসে চুরি ঘটনায় চাঞ্চল্যকর কাহিনী।

জানা যায়, মতলব উত্তর থানাধীন উত্তর ফতেপুর গ্রামের মৃত নেওয়াজ আলী প্রধানের ছেলে কুখ্যাত চোর মোহন(৪০) এ চুরির ঘটনার মূল হোতা। ঘটনার ৩ দিন পূর্বে কাস্টমার সেজে মোহন ঘটনাস্থল লুধুয়া বাজারের ওয়ালটন শোরুম ভিজিট করে যায়। অতঃপর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৩ এপ্রিল দিবাগত মধ্যরাতে আরও ২ সহযোগী সহ এ ঘটনা ঘটায়। চাঁদপুর থেকে সরাসরি গাড়ী নিয়ে এসে শোরুমের শার্টারের তালা ভেঙ্গে ২ জন ভেতরে ঢুকে শার্টার নামিয়ে সহজে বহনযোগ্য মোবাইল সেট সহ হালকা মালামালগুলো নিয়ে নেয়। বাকি ১ জন ঐ সময় বাহিরে অন্ধকারে লুকিয়ে মার্কেটের দারোয়ান ও মানুষের গতিবিধি পাহারা দেয়। চোরদের গ্যাংলীডার মোহন সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সে রংপুর জেলার পীরগঞ্জ থানার ২টি ডাকাতি এবং গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী ও তারাগঞ্জ থানার ডিবি পরিচয়ে অপহরন ও দস্যুতা সংঘটন’ মামলার পলাতক আসামী। তন্মধ্যে ৩টি মামলা বর্তমানে বিচারাধীন। সে মতলব এলাকায় থাকেনা। কোন অপরাধ সংঘটনের পরিকল্পনা ছাড়া সে মতলব উত্তর এলাকায় ঢুকেনা।
এছাড়া গ্রেপ্তারকৃত চোর কবিরের বিরুদ্ধে ২টি পূর্ববর্তী চুরি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত হেলাল ও কবির ১১ মে বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কার্তিক চন্দ্র ঘোষের আদালতে চুরি ও উদ্ধার ঘটনার কাহিনী সবিস্তারে তুলে ধরে কা.বি. ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। সহযোগীরা ধরা পড়ে যাওয়ায় তাদের গ্যাংলীডার মোহন চাঁদপুর সদর এলাকা থেকেও গা ঢাকা দেয়। অবশিষ্ট চোরাই মালামাল উদ্ধার ও পলাতক চোরদের গ্রেপ্তারে টিম মতলব উত্তর থানা পুলিশের অভিযান চলছে।

পুলিশ সুপার, চাঁদপুরের দক্ষ নেতৃত্ব ও দিক নির্দেশনায় এভাবেই একটি দু:সাহসিক চুরি ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয় টিম মতলব উত্তর থানা পুলিশ।।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।