বঙ্গোপসাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে ইলিশ। এবারে চাহিদার তুলনায় বেশি ইলিশ সংগ্রহ হয়েছে। কিন্তু বাড়তি উৎপাদনের পরও ইলিশের দাম কমছে না। ফলে প্রতিবারের মতো এবারও ইলিশ মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে থেকে যাচ্ছে। দাম বাড়তি থাকার কারণ হিসেবে আড়তদাররা বলছেন, সামনে দুর্গাপূজা। পূজায় ভারতে প্রচুর ইলিশ রপ্তানি হবে। এ ছাড়া ১০ দিন পর ইলিশ মাছ ধরা, ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ থাকবে। অনেক ব্যবসায়ী এখন ইলিশ মজুদ করে রাখছেন। তাই দাম কমছে না।

চট্টগ্রামের বৃহত্তম মাছের আড়ত শত বছরের ফিশারিঘাটে প্রতিদিন সকাল-বিকাল ইলিশবোঝাই ট্রলার ভিড়ছে। ফিশারিঘাট ছাড়াও নগরীর কাট্টলির রাসমনি ঘাট, আনন্দবাজার ঘাট, আকমল আলী ঘাটেও এখন শুধু ইলিশ আর ইলিশ। বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী বিভিন্ন উপজেলার ঘাটগুলোয়ও জেলে, ব্যাপারী আর পাইকারি ক্রেতাদের ভিড়। ইলিশে সয়লাব হওয়ায় ইলিশের দাম আগের চেয়ে কিছুটা কমলেও এখনো সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে রয়েছে।

নগরীর ফিশারিঘাট, কাট্টলি এবং আনন্দবাজার এলাকায় পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুই কেজি বা তার বেশি ওজনের প্রতিমণ ইলিশ ৩৬ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। এক থেকে দেড় কেজি ওজনের প্রতিমণ ইলিশ ২৮ হাজার টাকা, ৯০০ গ্রামের ইলিশ প্রতিমণ ২০ হাজার টাকায় এবং এর চেয়ে ছোট ইলিশ প্রতিমণ ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে খুচরায় দাম এর থেকে বেশি।

নগরীর চকবাজারে খুচরা বিক্রেতা আবু তাহের বলেন, দুই থেকে আড়াই কেজি ওজনের ইলিশের কেজিপ্রতি দাম পড়ছে ১২০০-১৫০০ টাকা। দেড় কেজির ওপরের ইলিশ প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা, এক কেজি ওজনের ইলিশ কেজিপ্রতি ৮০০ টাকা, ৫০০-৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৬০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, এবার প্রায় দেড় হাজার টন ইলিশ মাছ ভারতে রপ্তানি করা হচ্ছে। ৯টি দেশি প্রতিষ্ঠান এ দায়িত্ব পেয়েছে। প্রতিকেজি ইলিশ ৮০০ টাকা দরে ভারতে রপ্তানি করা প্রতিটি ইলিশের আকার হবে এক কেজি থেকে ১২০০ গ্রাম ওজনের।

এবার ভারতে রপ্তানির কাজ পাওয়া চট্টগ্রামের সেভেন স্টার ফিশ প্রসেসিং কোম্পানির কর্ণধার মো. সেলিম হাওলাদার বলেন, আমরাই প্রায় অর্ধেকের বেশি ইলিশ ভারতে পাঠাচ্ছি। বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে এসব ইলিশ ভারতে পাঠানো হচ্ছে।

মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রমতে, দেশে ২০০২-০৩ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন হয়েছিল ১ লাখ ৯৯ হাজার টন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন এসে দাঁড়ায় ৫ লাখ ৩৩ হাজার টন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে আরও বেড়ে ৫ লাখ ৫০ হাজার টনে গিয়ে দাঁড়ায়। চলতি অর্থবছরে এ খাত থেকে আয় হওয়ার সম্ভাবনা ধরা হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা।

চট্টগ্রাম সোনালী যান্ত্রিক মৎস্য শিল্প সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ফিস মার্চেন্ট অ্যান্ড কমিশন এজেন্ট ব্যবসায়ী হাজি মো. আমিনুল হক আমাদের সময়কে বলেন, জেলেদের জালে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। চট্টগ্রামের ফিশারিঘাটে প্রতিদিন ২০০ টন মতো ইলিশ আসছে।

পর্যাপ্ত ইলিশ পাওয়া গেলেও দাম বাড়তি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১০ দিন পর ইলিশ ধরা বন্ধ হচ্ছে। এ ছাড়া আগামী ২২ অক্টোবর থেকে দুর্গাপূজা। সব মিলিয়ে অনেক আড়তদার ইলিশ সংগ্রহ করে রাখছেন। তাই দাম বাড়তি। তবে দাম কমে আসবে। এত ইলিশ সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে না। তখন ইলিশের দাম আপনাআপনি কমে আসবে।

চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী আমাদের সময়কে বলেন, ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন সাগরে জাল ফেলা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এ সময় বেকার প্রতি জেলেকে ২০ কেজি করে চাল দেবে সরকার। তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রামে গত মৌসুমে ১৭ হাজার ৪০০ জেলে ভিজিএফ চাল পেয়েছিলেন। এ বছর আরও আড়াই হাজার বাড়িয়ে ২০ হাজার জেলেকে এ অনুদান দেওয়া হচ্ছে। চট্টগ্রাম এলাকায় সাগরে মাছ ধরতে যান এমন জেলে রয়েছেন ২৬ হাজার ৭৯২ জন।

আমাদের বাণী ডট কম/৪ অক্টোবর ২০২০/পিপিএম

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।