এস এম আমজাদ হোসেন; স্থানীয় সরকারের হাতে হতভাগা মানুষ জিম্মি, টাকা না দিলে মিলে না বয়স্ক ভাতা, কৃষি ভর্তকী, দুস্তমতা, রিলিফ ও করোনায় সহযোগিতাসহ সকল সরকারি সহযোগিতা।  এমনটাই চলছে  কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলাধীন কাটখাল ইউনিয়নে । হতভাগা ও গরিব দুঃখী বঞ্চিত লোকদের সরকার যথেষ্ট পরিমাণে সহায়তা দিলেও স্থানীয় সরকারের ঘুষখোর সদস্যদের কারণে ব্যাহত হচ্ছে সরকারের উন্নয়ন মুলক কাজ।

চাকুরির প্রলোভন দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কিন্তু দেখার কেউ নাই।

কাটখাল ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের জনাব অলেক মিয়া জানান- আমি গরীব মানুষ, খুবই অসুস্থ, না খেয়ে মরার মত উপক্রম চলছে, বয়সের কারণে কাজও করতে পারি না। আমার দুই মেয়ে ও তিন ছেলের ছিলো, মেয়েদের বিয়ে দিয়ে স্বামীর সংসারে পাঠিয়েছি আর তিন ছেলের মধ্যে এক ছেলে মারা গেছে, আর দুই ছেলে সংসার করে আলাদা থাকে, আমরা বুড়া-বুড়িকে দেখার কেউ নাই। এখন পযর্ন্ত সরকারী কোনো ধরনের সহযোগিতা পাইনি, এ অবস্থায় সরকার বিভিন্ন সহায়তা করলেও টাকার অভাবে নাম দিতে পারি না। নিরূপায় হয়ে বয়স্ক ভাতার জন্য মেম্বারের কাছে গেলে মেম্বার ১৫০০০ টাকা চান, এত টাকা আমি কোথায় পাবো?

মহিলা মেম্বারকে কেঁদে কেঁদে অনুরোধ করলেও কাজ হয়নি। মহিলা মেম্বার সাফ জানিয়ে দেন নগদ ৮৫০০ টাকা না দিতে পারলে বয়স্ক ভাতার নাম দেওয়া সম্ভব না।

তারপরেও মেম্বারের পায়ে ধরে বলি যে যখন ভাতা পাবো তখন ঐ ভাতা থেকে ৮৫০০ টাকা নিয়ে নিয়েন কিন্তু মহিলা মেম্বার আমার চোখের পানির কদর করলেন না। শেষ পর্যন্ত আমি ঘুষের টাকা দিতে না পারায় আমার নামের টাকা দেয় ইউছুব আলীর স্ত্রী। বিনিময়ে ইউছুব আলীর স্ত্রী পায় আমার নামের বয়স্ক ভাতার টাকা। টাকার অভাবে নিজ নামের বয়স্ক ভাতার টাকাও নিজে নিতে পারছি না। এখন না খেয়ে মরার উপক্রম হচ্ছে।।

মোঃ অলেক মিয়া আরো বলেন- গরীবের কষ্ট দেখার কেউ নাই, মেম্বারগণ মেম্বার হইয়া ঘুষের জন্য আমার হক অন্যজনকে দেয় এর বিচার কারো কাছে পাচ্ছি না।।

খোদার কী খেলা বুঝা যাচ্ছে না, একদিকে অভাব অন্যদিকে করোনার কারণে ধোঁকে ধোঁকে দিনাতিপাত করছে গরীব অলেক মিয়া, এরই মধ্যে তার ডান হাতটি হোছট খেয়ে ভেঙ্গে গেছে, খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম গত কয়েকদিন যাবৎ অলেক মিয়া ভাঙ্গা হাত নিয়ে কাটখাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের কাছে বার বার গিয়েছেন বয়স্কভাতার কার্ডটি ফিরে পেতে কিন্তু মেম্বারের ঘুষ বানিজ্যের বেজালের কারণে কার্ডটি এখনও ফিরে পায়নি অলেক মিয়া।

উল্লেখ্য যে অলেক মিয়ার মত হাজার হাজার গরীব বৃদ্ধ থাকলেও মেম্বারকে ঘুষের টাকা না দিতে পারায় সরকারি কোনো সহযোগিতা পাচ্ছেন না। ৮নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা এস এম আমজাদ হোসেন বলেন ৮নং ওয়ার্ডে যত বয়স্কভাতা ও রিলিফসহ অন্যান্য সরকারি সহযোগিতা করেছেন তার সবগুলোর নাম দিতে মেম্বারগণ ৭০০০ টাকা থেকে ২০০০০ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নিয়েছেন, যারা টাকা দিতে পারে তারাই বয়স্ক ভাতাসহ অন্যান্য সরকারি সহযোগিতা পান । আমি এ বিষয়টি উপজেলা চেয়ারম্যান সাহেবকে জানিয়েছি কিন্তু এখনো স্থায়ী সমাধান হয়নি,তবে উনি আশ্বাস দিয়েছেন যাচাই করে এর একটি ব্যবস্থা তিনি নিবেন।

কাঠখাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম বলেন, বয়স্কভাতার নাম মেম্বারগণ দিয়ে থাকেন, আমার জানামতে মেম্বারগণ সঠিকভাবেই নাম দেন, তারা টাকা নেন না।

কাঠখাল ইউনিয়নের বাসিন্দা হানিফ বলেন, আমি একজন ভুক্তভোগী, প্রাইমারী স্কুলে চাকুরির কথা বলে চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম আমার কাছ থেকে ৮ লাখ টাকা নিয়েছেন, এখন পর্যন্ত চাকুরিও দেননি টাকাও দেননি, এমপি মহোদয়ের সহযোগিতায় ৮০ হাজার টাকা ফেরৎ পেয়েছি বাকী টাকা দেয় দিচ্ছি বলে দিচ্ছে না। এ বিষয়ে মামলা চলমান আছে।

আরো একজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন আমার কাছ থেকে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা নিয়েছিলো এই তাজুল ইসলাম চেয়ারম্যান, অনেক চেষ্টা করে বেশ কিছুটাকা আদায় করেছি, এতগুলো টাকা আমি সুদে এনে দিয়েছিলাম তাই সর্বশান্ত হয়েগেছি।

টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন ভাতার নাম দেওয়ার বিষয়ে মহিলা মেম্বারের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যাইনি। তবে তার স্বামী আলকাছ উদ্দিন বলেন, মেম্বার চেয়ারম্যানগণ কষ্টকরে নিজের টাকা খরচ করে নাম আনেন, খরচের টাকা নিয়ে নাম এনে দেওয়াতে লোকজন উপকৃতই হচ্ছে।

৮নং ওয়ার্ডে যারা বয়স্কভাতা পান তাদের কাছ থেকে জানতে চাইলে অনেকেই ভয়ে মুখ খুলতে চান না তবে বেশিরভাগ ভাতাপ্রাপ্তরাই বলেন বয়স্ক ভাতার নাম আনতে মেম্বার খরচ হিসাবে ৭০০০ টাকা নিয়েছেন, যদি এ কথা প্রকাশ করি তবে ভাতা থেকে নাম কেটে দিবে তাই ভয়ে কিছু বলতে পারছি না।

উক্ত ইউপির বাসিন্দা, তিনি বলেন, বাংলাদেশের সততার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলেন মহামান্য রাষ্টপতি ও উনার পরিবার। কখনো কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেননি মহামান্য কিংবা তাঁর পরিবারের সদস্যবৃন্দ। আজকে সেই মহামান্য রাষ্টপতি মহোদয়ের এলাকায় এরকম দুর্নীতি করে কিভাবে পার পেয়ে যাচ্ছে তা আমার বোধগম্য হচ্ছে না।

লেখক, এস এম আমজাদ হোসেন, নিয়োগ বঞ্চিত নিবন্ধিত শিক্ষক কেন্দ্রীয় ফোরাম এর সভাপতি

আমাদের বাণী ডট/১৬ মে ২০২০/পিবিএ 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।