যশোরে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হত্যার মূলপরিকল্পনাকারী মীর মোশারফ হোসেন বাবু ওরফে ডিশ বাবুর বিচার দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। বুধবার বেলা ১২টার দিকে প্রেসক্লাবের সামনে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ জেলা কমিটির উদ্যোগে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।

২০১৫ সালের ১৯ এপ্রিল হত্যাকান্ডের শিকার হন ঝিকরগাছার মুক্তিযোদ্ধা ফিরোজ হায়দারের ছেলে আতাউর রহমান। ক্যাবল ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে তাকে হত্যা করা হয়। ডিশ বাবু এই হত্যাকাণ্ডের মূলপরিকল্পনাকারী বলে দাবি পরিবারের।

মানববন্ধনে মুক্তিযোদ্ধা ফিরোজ হায়দার বলেন, আমার ছেলে বেঁচে থাকতে ডিশ ব্যবসা দখল করে নেয় মীর মোশাররফ হোসেন ওরফে ডিশ বাবু। পরে ব্যবসা ফেরত পেতে আমরা শাহীন চাকলাদারের (জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) শরণাপন্ন হই। ব্যবসা ফিরিয়ে দিতে তিনি আমাদের সামনেই ডিশ বাবুকে ফোন করেন। শাহীন চাকলাদারের কথাও ডিশ বাবু রাখলেন না। ডিশ বাবু ব্যবসা ফেরত না দিয়ে আমার ছেলেকে হত্যা করে। ডিশ বাবু তদন্ত কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে হত্যা মামলার চার্জশীট থেকে নিজের নাম বাদ দিয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ডিশ বাবুর সংশ্লিষ্টতা প্রমাণসহ তদন্ত কর্মকর্তাকে দেয়া সত্ত্বেও তার নাম চার্জশিটে দেওয়া হয়নি। আমি আদালতে নারাজি দিয়েছি। ডিশ ব্যবসা করতে গেলে আমার আরও দুই ছেলেকে হত্যা করবে বলে ডিশ বাবু আমাকে ফোনে হুমকি দিয়েছে। পরে আমি নিরাপত্তা চেয়ে ২০১৮ সালের ২৭ মার্চ কোতয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছি। তিনি আরও বলেন, ডিশ বাবু যখন ঝিকরগাছার দুটি ইউনিয়নের ১৫ গ্রামের ক্যাবল ব্যবসা জোরপূর্বক দখল করে নেয়, তখনই আতাউর রহমানের সকল কাগজপত্র, ব্যাংক চেক, গ্রাহক হিসাব অফিসে থাকা অবস্থায় দখলে চলে যায়। যা ২০১৮ সালের জিডিতে উল্লেখ করেছি। ২০১৯ সালের ৩০ জুন মৃত আতাউর রহমানের চেক ব্যবহার করে একটি সাজানো ঘটনা উল্লেখ করে মুক্তিযোদ্ধা ফিরোজ হায়দারের কাছে টাকা পাওনা দাবি করে। যশোর বড় বাজার এলাকার গডফাদার হিসেবে পরিচিত ডিশ বাবু। তিনি বিএনপির নেতা হলেও ক্ষমতাসীনদের আশ্রয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, শুধু আতাউর রহমানকে হত্যা নয় যশোর শহরের বড় বাজারের অপরাধের নাটের গুরু ডিশ বাবু। দীর্ঘদিন ধরে বাবু বড় বাজারের ইজারাদার। মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা পারিবারিকভাবে পাকিস্তান প্রেমিক ছিল। বাবু ছিল জেলা বিএনপির সদস্য। বাজারের ইজারাদারসহ প্রভাব-প্রতিপত্তি ধরে রাখতে বর্তমানে যুবলীগ নেতা সেজেছে। যশোর অঞ্চলের চোরাচালান সিন্ডিকেটসহ বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা বাবুই নিয়ন্ত্রণ করে। বাবু কোটি কোটি টাকার মালিক। শহরে তার কয়েকটি বাড়ি, মার্কেট, একাধিক স্থানে জমি ও দামি গাড়ি রয়েছে। প্রভাব বজায় রাখতে বাবুর নির্দেশে ২০২০ সালে ২৬ ফেব্রুয়ারি বড় বাজারের মাছের আড়ত কর্মচারি শেখ ইমরান হোসেন মুন্নাকে হত্যা করা হয়। তাই নেতৃবৃন্দ বাবুকে দ্রুত গ্রেফতার করে আতাউর রহমান হত্যার মূলপরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত করে বিচারের দাবি জানানো হয়েছে মানববন্ধনে।

 

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক ড. আ ক ম জামাল উদ্দিন, যুগ্ম-আহ্বায়ক শাহজাদী জাহান, সরদার আব্দুল কাদের সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক খোকন মিয়া, যশোর জেলা শাখার সভাপতি শেখ সোয়েব আহমেদ শুভ, সাধারণ সম্পাদক জাকিয়া সুলতানা বাণী, এমএম কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইমরান হোসেন, হত্যাকান্ডের শিকার আতাউরের বাবা মুক্তিযোদ্ধা ফিরোজ হায়দার, ভাই হাজি বাবলু প্রমুখ।

 

আমাদের বাণী/আ-আ-মা

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।