একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করা মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স নির্ধারণের বিষয়ে হাইকোর্ট বলেছেন ‘শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর কোথাও মুক্তিযোদ্ধাদেরকে বয়সের ফ্রেমে বাঁধা যায় না।’

রবিবার (১৯ মে) পৃথক কয়েকটি রিটের ওপর রায় ঘোষণাকালে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ পর্যবেক্ষণ দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার ওমর সাদাত ও এবিএম আলতাফ হোসেন। তাদের সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী এআরএম কামরুজ্জামান কাকন ও শুভ্রজিৎ ব্যানার্জি। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেছুর রহমান।

এর আগে হাইকোর্ট তার রায়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালীন মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যূনতম বয়স ১২ বছর ৬ মাস নির্ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংশোধিত পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন।

রায় ঘোষণাকালে আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর কোথাও মুক্তিযোদ্ধাদেরকে বয়সের ফ্রেমে বাঁধা যায় না। মুক্তিযুদ্ধ মূলত মানুষ আবেগের তাড়না থেকে করে। দেশের প্রতি ভালোবাসার কারণে করে। বয়স দিয়ে কখনও ভালোবাসা বাঁধা যায় না।’

আদালত আরও বলেন, ‘প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সাত-আট বছর বয়সী মুক্তিযোদ্ধা ছিল। বাংলাদেশে তো শিশু মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বইও আছে। এটা নতুন কোনও ঘটনা নয়। গত ৪৫ বছর ধরে তারা (রিটকারীরা) সব সুবিধা পেয়ে আসছেন। হঠাৎ করে তারা জানলেন তারা আর মুক্তিযোদ্ধা নেই। তাই যে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর ভিত্তি করে দেশ স্বাধীন হয়েছে, সেই মুক্তিযোদ্ধাদের যদি অস্বীকার করি, তাহলে আমরা আর সামনে এগোতে পারবো না।’

পরে রিটকারীদের অন্যতম আইনজীবী ওমর সাদাত বলেন, ‘পরিপত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যূনতম বয়স নির্ধারণ করা হয়েছিল, যার ধারাবাহিকতায় অনেক মুক্তিযোদ্ধার ভাতা আটকে গিয়েছিল। কিন্তু আদালত আজ তাদের (১৬ জন রিটকারীর) সেই বকেয়া ভাতা পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে আজকের এই রায়টি গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে যে, দিনে দিনে মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞা পরিবর্তন করতে থাকলে, এমন একদিন আসবে যেদিন মুক্তিযোদ্ধারা হয়ে যাবেন রাজাকার, আর রাজাকাররা হয়ে যাবেন মুক্তিযোদ্ধা। তাই আদালত বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞা পরিবর্তনের কোনও সুযোগ নেই, এটি একেবারেই অপরিবর্তনীয়।’

আদালত আরও বলেছেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে সংজ্ঞা দেওয়ার কিছু নেই। এটি ঐতিহাসিক সাক্ষীর ভিত্তিতে কে মুক্তিযোদ্ধা আর কে মুক্তিযোদ্ধা না, তা নির্ধারণ হবে। মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযোদ্ধাই। এখানে তর্কের কোনও অবকাশ নেই।’

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে প্রথম প্রকাশিত এক গেজেটে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধার ন্যূনতম বয়স হতে হবে ১৩ বছর। এরপর চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি এক পরিপত্রের মাধ্যমে ওই গেজেটটি সংশোধন করে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যূনতম বয়স হতে হবে ১২ বছর ৬ মাস। পরে মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স নিয়ে জারি করা ওই পরিপত্রের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের পরিচালক মাহমুদ হাসানসহ প্রায় ১৬ মুক্তিযোদ্ধা।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।