ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকা;   উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার মধ্যে করোনা আক্রান্তে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে রংপুর ও জয়পুরহাট জেলা। গত ২ মে পর্যন্ত রাজশাহী ও রংপুর দুই বিভাগের ১৬ জেলা মিলিয়ে করোনা আক্রান্ত ২৬৪ জন। এর মধ্যে কেবল রংপুরেই ৪৫, জয়পুরহাটে ৩৩ জন ও গাইবান্ধায় ২৪ জন। এ ছাড়াও উত্তরাঞ্চলের সব জেলাতেই কম-বেশি রোগী আছে। প্রায় সব জেলাতেই চলছে লকডাউন।

উত্তরাঞ্চলে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় গাইবান্ধায় গত ২২ মার্চ। ওইদিন সেখানকার আমেরিকা প্রবাসী মা ও ছেলের আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি জানা যায়। গত ১১ থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত তারা সুন্দরগঞ্জ ও সাদুল্লাপুর এবং পরবর্তী সময়ে নাকাইয়ে আরেকটি সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ায় তাদের সংস্পর্শে আসা আরও তিনজন আক্রান্ত হন। পরে ২২ এপ্রিল ওই জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ১১ জনে। যা সেই সময়ে উত্তরাঞ্চলের সর্বাধিক হিসেবে চিহ্নিত ছিল।

রাজশাহী বিভাগে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় ১২ এপ্রিল। রাজশাহীর পুঠিয়াতে প্রথম করোনা সংক্রমণ দেখা দেওয়ার পর বিভাগের অন্যান জেলায়ও একে একে বাড়তে থাকে এ রোগে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা। বগুড়া জেলায় প্রথম রোগী শনাক্ত হয় ১৬ এপ্রিল। ঢাকা থেকে আসা আক্রান্ত ওই পুলিশ সদস্যের বাড়ি আদমদীঘি উপজেলার সাঁওইলে। তবে এখনো আশার আলো দেখাচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা। এ জেলায় এখন পর্যন্ত ২ জন করোনা রোগী পাওয়া গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখান অনুযায়ী জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে মোট ২৬৪ জন। মারা গেছেন ৩ জন। মারা যাওয়া দুজন হলেন রাজশাহীতে ২ এবং পাবনায় ১ জন। রাজশাহী বিভাগে আক্রান্ত হয়েছেন জয়পুরহাটে ৩৩ জন, রাজশাহীতে ২০, বগুড়ায় ১৯, নওগাঁয় ১৬, পাবনায় ১০, নাটোরে ৯, সিরাজগঞ্জে ৩ এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২ জন।

রংপুর বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ রংপুরে ৪৫ জন, গাইবান্ধায় ২৪, দিনাজপুরে ২১, ঠাকুরগাঁওয়ে ১৭, নীলফামারীতে ১৬, কুড়িগ্রামে ১৫, পঞ্চগড়ে ৮ এবং লালমনিরহাটে ৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন।

বর্তমানে রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলার মধ্যে নওগাঁ, নাটোর, রাজশাহী, জয়পুরহাট ও বগুড়া এই ৫টি জেলা লকডাউনে রয়েছে। আংশিক লকডাউনে আছে সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলা। রংপুর বিভাগের ৮টি জেলার মধ্যে রংপুর, নীলফামারী, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও ও কুড়িগ্রাম এই ৭টি জেলায় লকডাউন চলছে। রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তর সূত্রমতে, রাজশাহী বিভাগে প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে করোনা সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা। তবে বিভাগের আট জেলার মধ্যে এখন জয়পুরহাট বেশি ঝুঁকিপূর্ণতে পরিণত হয়েছে।

বগুড়া ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোস্তাফিজার রহমান তুহিন বগুড়ায় করোনা বিস্তারের কারণ সম্পর্কে বলেন, বগুড়ায় অন্যান্য জেলার চেয়ে মানুষের মুভমেন্ট বেশি হচ্ছে। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জসহ সংক্রমিত এলাকার মানুষেরা এখানে আসছেন। এতে করে সংক্রমণ বাড়ছে।

বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজের (শজিমেক) অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. রেজাউল আলম জুয়েল বলেন, শজিমেকে করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা চালু হওয়ায় এ এলাকার মানুষের নমুনা বেশি পরীক্ষা করা যাচ্ছে। পরীক্ষা বেশি হলেই রোগী বাড়বে। বগুড়া শজিমেকর পিসিআর ল্যাব চালু হওয়ার দুদিনের মধ্যেই ৭ জনের করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। এর অর্থ হলো প্রতিদিনই পরীক্ষা বাড়ছে এবং স্বভাবতই করোনা পজিটিভ মানুষের সংখ্যা বেশি ধরা পড়ছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত হেলথ বুলেটিনের সর্বশেষ (০৪ মে ২০২০) তথ্য অনুযায়ী,   করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ছয় হাজার ৩১৫টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ছয় হাজার ২৬০টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো ৮৭ হাজার ৬৯৪টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় আরও ৬৮৮ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এটি গতকালের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন আরও পাঁচজন। এ নিয়ে মারা গেছেন ১৮২ জন। এছাড়া সুস্থ হয়েছেন আরও ১৪৭ জন। সব মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ২১০ জন।

আমাদের বাণী ডট কম/০৫ মে ২০২০/ভিএ 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।