নিজস্ব সংবাদদাতা, ঢাকা;  ঢাকা মহানগরীর পুরো এলাকাকে লকডাউন ঘোষণা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের ভার্চ্যুয়াল আদালতে আজ বৃহস্পতিবার (১১ জুন ২০২০)  রিট আবেদনটি দাখিল করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রিটে বাদী হিসেবে রয়েছেন অ্যাডভোকেট মো. মাহবুবুল ইসলাম।

  • মন্ত্রিপরিষদ, স্বাস্থ্য, অর্থ ও প্রধানমন্ত্রীর সচিবালায়ের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হাসপাতাল), অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন), ঢাকার পুলিশ কমিশনার, র‌্যাবের মহাপরিচালক এবং ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রকে রিট আবেদনে বিবাদী করা হয়েছে।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মনজিল মোরসেদ জানিয়েছেন, মহামারি করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণে ঢাকা শহরে হাজার হাজার রোগী শনাক্ত হচ্ছে। ইতোমধ্যে এক হাজারের বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন। এতে আরও বলা হয়, গত ১৮ এপ্রিল প্রফেসর মো. শহিদুল্লাহকে সভাপতি করে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় টেকনিক্যাল বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে সরকার। পরে পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনায় ওই কমিটি গত ৮ জুন এক সভায় সর্বসম্মতভাবে মৃত্যু কমানোর জন্য নিম্নোক্ত সিদ্ধান্ত নেন ও কার্যকর করার সুপারিশ করেন।

  • ঢাকাকে পুরোপুরি লকডাউন করতেই হবে-এ ধরনের স্পষ্ট এভিডেন্স বেজড বা ডাটা বিশ্লেষণ করে পরামর্শ দেন ইপিডেমোলজিস্টদের সমন্বয় গড়া সাব-কমিটি। বিস্তারিত আলোচনার পর জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির আলোচকরা এপিডেমোলজিস্টদের সঙ্গে একমত হন এবং সিদ্ধান্তটি চূড়ান্ত করা হয়। ওই সিদ্ধান্তে বলা হয়, ঢাকা শহরকে কড়াকড়িভাবে সম্পূর্ণ লকডাউন করতে হবে। আর তা না হলে মৃত্যু মেনে নিতে হবে। এলাকাভিত্তিক লকডাউন কোনো সুফল বয়ে আনবে না। হলুদ জোন, লাল জোন মিলেমিশে আছে।

বারবার পরামর্শ ও তাগিদ দেওয়ার পর এখনও জীবন বাঁচানোর প্রয়োজনীয় একটি চিকিৎসাকৌশল, ‘হাই ফ্লো নেজাল অক্সিজেন ক্যানোলা’র ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়নি। সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারভিত্তিতে অনতিবিলম্বে এর জোগান নিশ্চিত করার জোরালো তাগিদ পাস করা হয়। এ ব্যবস্থাপনায় সব ধরনের জটিলতা দূর করে, প্রয়োজনে আলাদা রেজুলেশন করে মানুষের জীবন রক্ষায় ‘হাই ফ্লো নেজাল অক্সিজেন ক্যানোলা’র পর্যাপ্ত প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে বলে মতামত দেন পরামর্শকরা।

  • টেকনিক্যাল কমিটির উক্ত সুপারিশ বাস্তবায়ন করে ঢাকা শহর লকডাউন ঘোষণা করা বা স্বাস্থ্যকর্মীদের উন্নত চিকিৎসা বা মুমূর্ষু রোগীদের জন্য হাই ফ্রো নেজাল অক্সিজেন ক্যানোলা পর্যাপ্ত সংগ্রহ করা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব হলেও তা করা হচ্ছে না, যার কারণে শত শত মানুষের মৃত্যুঝুঁকি বাড়ছে।

মনজিল মোরসেদ আরও বলেন, রিট আবেদনে বিবাদীদের ওপর নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে ঢাকাকে দ্রুত লকডাউন ঘোষণার জন্য। বলা হয়েছে লকডাউনের সময় কমিশনারদের (কাউন্সিলর) মাধ্যমে প্রত্যেক এলাকায় গরিবদের প্রয়োজনীয় খাদ্য ও মেডিসিন সরবরাহ করবেন সিটি করপোরেশনের মেয়ররা। এতে লজিস্টিক সাপোর্ট দেবে সরকার। এ ছাড়া স্বাস্থ্যকর্মীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য টেকনিক্যাল কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ এবং চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত হাই ফ্রো নেজাল অক্সিজেন ক্যানোলা সংগ্রহের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে রিট আবেদনে।

এদিকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এর করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত হেলথ বুলেটিনের সর্বশেষ (১১  জুন ২০২০) তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৬ হাজার ১১৪টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ১৫ হাজার ৭৭২টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো চার লাখ ৫৭ হাজার ৩৩২টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে আরও তিন হাজার ১৮৭ জনের মধ্যে। ফলে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৭৮ হাজার ৫২ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন আরও ৩৭ জন। আগের দিনও সমানসংখ্যক রোগীর মৃত্যু হয়েছিল। এ নিয়ে মোট মৃত্যু হলো এক হাজার ৪৯ জনের। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৮৪৮ জন। ফলে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন মোট ১৬ হাজার ৭৪৮ জন।

আমাদের বাণী ডট কম/১১ জুন ২০২০/ডিএ 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।