আনিসুর রহমান
গর্জনিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আনিসুর রহমান। ছবি; সংগৃহীত

ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকা;  কক্সবাজারের রামু থানাধীন গর্জনিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে অবৈধ লেনদেন ও চাঁদাবাজির অভিযোগ জানিয়েছে এলাকাবাসী। গর্জনিয়া বাজারের হিন্দুদের কালী মন্দিরের দোকান রাতের অন্ধকারে দখলের বিরুদ্ধে এখন পযর্ন্ত কোন ব্যবস্থা না নেওয়ার পেছনে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের বিরুদ্ধে দখলকারীদের সাথে বড় অংকের টাকার লেনদেন রয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। পাশাপাশি আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল হুদাকে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তাকে এবং তার পরিবারকে হয়রানির অভিযোগও পাওয়া গেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গর্জনিয়া বাজার ইজারাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় যুবলীগ নেতা এম সেলিমের সাথে শ্রমিক লীগ নেতা নুরুল হুদার বিরোধ তৈরি হয়। এই বিরোধে জড়িয়ে টাকার বিনিময়ে প্রকাশ্যে এম সেলিমের পক্ষ নিয়েছেন গর্জনিয়া ফাঁড়ির ইনচার্জ আনিসুর রহমান। কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল হুদার পরিবারের অভিযোগ, সেলিমের ইন্ধনে পুলিশ প্রতিনিয়ত আমাদেরকে হয়রানি করছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ জুন ৫৪ ধারায় ফরিদুল আলম নামে সিএনজি চালককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পুলিশের দায়ের করা এজাহারে বলা হয়, গর্জনিয়া বাজারের ইজারাদার আব্দুর রহমান সিএনজি চালক ফরিদুলকে আনুমানিক ১ কেজি ইয়াবা ট্যাবলেটের একটি প্যাকেট পাশের নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ফুলতলা থেকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির নিকট থেকে নিয়ে আসতে বলেন। ইয়াবার ওই প্যাকেট নিয়ে আসার পথে কচ্ছপিয়া দোছড়ি দক্ষিণকূল জনৈক রহিম সওদাগরের বাসার সামনে গতিরোধ করে স্থানীয় আবু বক্কর, বেলাল উদ্দিন, নুরুল আলম কালু বহনকৃত ইয়াবা ফরিদুলের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়।

এজাহারে আরও বলা হয়, আটককৃত ফরিদুলের তথ্য মতে পুলিশ কোন ইয়াবা উদ্ধার করতে না পারলেও বিক্রির টাকা উদ্ধারে ঐ তিন জনের বাসায় অভিযান চালিয়ে মোট ৩ লক্ষ ১৯ হাজার টাকা উদ্ধার দেখায়।

যদিও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে এলাকাবাসী জানায়, এ ঘটনায় স্থানীয় এক নেতার বাসা থেকে প্রায় ৮ লক্ষ টাকা উদ্ধার করলেও পুলিশের প্রতিবেদনে সেটি উল্লেখ করা হয় নি।

এ ঘটনায় পুলিশ নুরুল হুদার সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণই পায়নি । অথচ এই মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা দাবি করে আসছে পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ আনিস। অভিযোগ রয়েছে এ মামলার ভয় দেখিয়ে এক প্রকার আটক বাণিজ্য চলছে গর্জনিয়া-কচ্ছপিয়ায়।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী নুরুল হুদা জানান, গত ১৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বাষির্কী ও শিশু দিবসে সকল প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের নিয়ম থাকলেও ফাঁড়ির পাশে গর্জনিয়া বাজারে প্রায় শতাধিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের বিষয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জকে জানানো হলে উল্টো আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। এ কারনে আমাকে মাদকের মত একটি ঘৃণ্য মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে যাতে করে আমি কোন নেতার সহযোগিতা না পায়। তিনি আরও বলেন ইতিমধ্যে আমি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্যে পরিবারকে বলেছি র‌্যাব ১৫ বরাবরে একটি আবেদন জানাতে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, রামুর কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের গর্জনিয়া বাজারে অবস্থিত হিন্দুদের কালী মন্দিরের দোকান রাতের অন্ধকারে দখল করে নেওয়ার পর এখন পযর্ন্ত কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করার পেছনে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের বিরুদ্ধে দখলকারীদের সাথে বড় অংকের টাকার লেনদেন রয়েছে। গর্জনিয়া বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, ফাঁড়ির ইনচার্জ আনিসুর মাদক মামলা দিয়ে যখন তখন যাকে তাকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয়ে থাকেন তারা। কেউ প্রতিবাদ করলে তার নিস্তার নাই। তাই এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খোলেন না।

গর্জনিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (আইসি) আনিসুর রহমানকে মুঠোফোনে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃত মাদকব্যবসায়ী ফরিদুল আলমকে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কয়েকজন সহযোগীর নাম পাওয়া গেছে। তাদের আটকের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে।

শ্রমিক লীগ নেতা নুরুল হুদার বিরুদ্ধে এ ধরনের কোন অভিযোগ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা চিহ্নিত মাদকব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছি। সুনির্দিষ্টভাবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ না থাকলেও সন্দেহভাজনদের ব্যাপারে খোঁজ নেওয়াটাও আমাদের অভিযানের একটি অংশ। তবে প্রায় ৮ লক্ষ টাকা উদ্ধার করলেও তা সরকারি খাতে না দেখানোর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি তা এড়িয়ে যান।

এ বিষয়ে কক্সবাজারে সদর ও রামু সার্কেলের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আদিবুল ইসলামকে গর্জনিয়ার আইসি আনিসুরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, আমার কাছে এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো অভিযোগ আসেনি। এরকম হওয়ার কথা নয়। আমার জানামতে গত ৪/৫ দিন ওই এলাকায় পুলিশ কোনো মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করেনি। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি। জনগণকে কেউ যদি অহেতুক হয়রানি করে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আমাদের বাণী ডট কম/০৮  আগস্ট ২০২০/পিপিএম

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।