নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ; জেলার মান্দা উপজেলায়  যৌন উত্তেজক ওষুধ খাইয়ে  একাধিক ছাত্রীর সাথে দীর্ঘদিন যাবত অবৈধ সম্পর্ক তৈরির অভিযোগ উঠেছে রেজাউল হক নামের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত এ শিক্ষক অতীতেও মেধাবৃদ্ধির প্রলোভন দেখিয়ে এই ধরণের একাধিক ঘটনা ঘটিয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।

অভিযুক্ত শিক্ষক মো. রেজাউল হক জেলার মান্দা উপজেলার কাঁশোপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (সমাজ বিজ্ঞান)।  ওই শিক্ষক শুক্রবার থেকে পলাতক রয়েছে। এতে করে ওই এলাকাবাসীদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে ও সরেজমিনে জানা গেছে যায়, গত বুধবার (২৫ মার্চ ২০২০) স্কুল ছুটির দিন সকাল ১০টায় বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির এক ছাত্রীকে প্রাইভেট পড়ানোর কথা বলে বিদ্যালয়ে ডেকে নিয়ে আসে। পরে ওই শিক্ষক ছাত্রীকে মেধাবৃদ্ধির কথা বলে যৌন উত্তেজক ওষুধ খাওয়ায়। পরে টিনের একটি শ্রেণিকক্ষে আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পায় বিদ্যালয়ের নতুন ভবনে কাজ করা কিছু শ্রমিকরা।

এরপর বিষয়টি জানতে পারে স্থানীয়রা। বিষয়টি নিয়ে স্থানীদের মাঝে চরম উত্তেজনা দেখা দেওয়ায় ঘটনার ১দিন পর গতকাল শুক্রবার (২৭ মার্চ ২০২০) স্কুল ম্যানেজিং কমিটির জরুরি সভায় অভিযুক্ত শিক্ষক রেজাউল হককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী শ্রমিক মো: আব্দুল মতিন বলেন, ওই শিক্ষার্থীকে নিয়ে বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে একটি আমের গাছের নিচে কিছুক্ষণ গল্প করেন। এরপর টিন শেটের একটি খোলা শ্রেণিকক্ষের মধ্যে নিয়ে যায়। এরপর আমার সন্দেহ হলে কক্ষের খোলা জানালা দিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অপ্রীতিকর অবস্থায় দেখতে পাই। এছাড়াও আরও দুইজন শিক্ষক রেজাউলের সঙ্গে বিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন। তারা রেজাউলকে পাহারা দিচ্ছিলেন। এরপর বিষয়টি স্থানীয়দের জানালে স্থানীয়রা এসে শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে আর শিক্ষক পালিয়ে যায়।

এ ব্যাপারে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল কুদ্দুস বলেন, এর আগেও এমন অপকর্মের প্রমাণ আমরা পেয়েছি। সর্বশেষ বুধবার সকাল ১০টায় স্কুল ছুটির দিন স্কুলের একটি কক্ষে একই ঘটনা ঘটিয়েছে মা হারানো ১০ম শ্রেনির এক ছাত্রীর সঙ্গে। এই ঘটনায় বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি ও প্রধান শিক্ষক এক জরুরি সভার মাধ্যমে শুক্রবার তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। শুধু বরখাস্তই নয় এই লম্পট শিক্ষকের আমরা দৃষ্টান্তর মূলক শাস্তি চাই।

ভুক্তভোগী ঐ ছাত্রীর বাবা শিক্ষক রেজাউল হকের দৃষ্টান্তর মূলক শাস্তি দাবি করে  বলেন, আমার মেয়েসহ তার কাছে প্রাইভেট পড়া অনেক শিক্ষার্থীকে দীর্ঘদিন যাবত ধরে যৌন উত্তেজক ঔষধ খাইয়ে আসছে ওই শিক্ষক। কিন্তু বিষয়টি সম্প্রতি এই ঘটনার পর জানতে পেরেছি। আমি ওই লম্পট শিক্ষকের দৃষ্টান্তর মূলক শাস্তি চাই।

তবে এ বিষয় অস্বীকার করে শিক্ষক রেজাউল হক স্থানীয় এক গণমাধ্যমকে বলেন, ওই দিন শিক্ষার্থী আমার কাছে প্রাইভেট পড়তে আসে। কিন্তু তার সঙ্গে অন্য কিছুই হয় নাই। এটি সম্পন্ন মিথ্যে ও বানোয়াট।

জানতে চাইলে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আল-মামনুর রশিদ বলেন, গত ২৫ তারিখের ঘটনাটি জানার সাথে সাথে আমি প্রধান শিক্ষককে জরুরি সভা কল করতে বলেছিলাম। ২৭ তারিখের ওই সভায় শিক্ষক রেজাউল হক তার অপরাধ স্বীকার করে নিজে থেকেই পদত্যাগ করেছেন। শনিবার (২৮ মার্চ) সভার পরবর্তী দিন ধার্য্য করা হয়েছে। তার পদত্যাগের বিষয়ে সেদিন চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

এ ব্যাপারে মান্দা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: শাহ আলম শেখ বলেন, এই বিষয়ে এখন পর্যন্ত আমার কাছে কেউ লিখিত ভাবে অভিযোগ করেন নাই। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে

আমাদের বাণী ডট কম/২৮ মার্চ ২০২০/ডিএ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।