ঝিনাইদহের শৈলকুপায় ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে তথ্যের সম্ভার নিয়ে আসা তথ্যআপাদের উঠান বৈঠক। তাদের কার্যক্রমে খুশী মাঠ পর্যায়ের সাধারন মানুষ। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং জাতীয় মহিলা সংস্থার অধীনে বাস্তবায়নাধীন তথ্যআপা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন প্রকল্পের আওতায় উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে যৌতুকের কুফল, বাল্যবিয়ে, স্বাস্থ্যসচেতনতা, জঙ্গিবাদ, নাগরিক অধিকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

গত বৃহস্পতিবার উঠান বৈঠকে আসা হাটফাজিলপুর গ্রামের রুপা খাতুন বলেন, লেখাপড়ার পাশাপাশি সংসারের কাজের ফাঁকে তথ্যআপাদের বৈঠকে সময় দিয়ে অনেক কিছু জানতে পারি। প্রযুক্তি নির্ভরতার নানা বিষয়ে অতিরিক্ত ধারনা পাওয়া যায়। স্কুল, কলেজ শিক্ষার্থীদের সহায়ক হিসেবে বিভিন্ন তথ্যউপাত্তের প্রয়োজনীয় সমাধান সম্ভব হয়। বাল্যবিবাহ, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, মাদকসহ সমাজের বিভিন্ন খারাপ দিক সর্ম্পকে অনেক কিছু জানা যায়।

তথ্যআপাদের উঠানে এসে ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনে ক্ষতিকর নানা বিষয়ের প্রভাব সর্ম্পকে জানা সম্ভব হয়। সে কারনে রুপা’র মত আরো অনেক গ্রাম্য মেয়েদের উঠান বৈঠকে আসতে এবং সংশ্লিষ্ট বিষয় সর্ম্পকে সচেতন করতে তথ্যআপাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। গ্রামের গৃহিণীরা তথ্য আপার উঠানে এসে অনেক উপকৃত হচ্ছে বলে জানান রেখা রানী, সুচিত্রা রানীসহ উপস্থিত অনেকে। তারা মনে করেন বেশি বেশি করে এ ধরনের উঠান বৈঠকের আয়োজন করা উচিত। গ্রামের মহিলারা সচেতন হলেই সমাজ থেকে বিভিন্ন ক্ষতিকর সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে ধীরে ধীরে নানা অনিয়ম দূর করা সম্ভব।

প্রত্যন্তপল্লীর গ্রামীণ জীবনযাত্রায় প্রযুক্তির ছোঁয়া দিতেই তথ্যআপাদের অবিরাম চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সেই সাথে মাদকের কুফল, কিশোর ও বয়সন্ধিক্ষনে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি, গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরনে পরামর্শ, ইন্টারনেট, ইমেইল, ফ্রিল্যান্সিংসহ প্রযুক্তির ব্যবহার, বিনামূল্যে সরকারি-বেসরকারি সুযোগ সুবিধা পেতে করনীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনযাত্রায় মৌলিক চাহিদা ও প্রাপ্যতা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনা দিচ্ছে শৈলকুপার তথ্যআপারা। খুব সহজে প্রান্তিক পর্যায়ে মানুষের নিকট তথ্যের প্রসার ঘটাতে উপজেলা সদরসহ ১৪ টি ইউনিয়নে ধারাবাহিকভাবে কাজ করছে এ প্রকল্পের কর্মীগণ।

তথ্যসেবা প্রকল্প কর্মকর্তা ইন্দিনা কাদির জানান, দিবা খাতুন ও লিমা খাতুন নামে তার দুই সহকারি নিয়ে শৈলকুপার প্রায় ৪ লাখ মানুষের নিকট পর্যায়ক্রমে পৌঁছানো হবে এ প্রকল্পের রুপরেখা। তিনি মনে করেন, প্রতিটি ইউনিয়নের ছোটখাটো হাটবাজার ও জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে তাদের সেবা ও সেবার লক্ষ-উদ্দেশ্য নিয়ে মুক্ত আলোচনার মাধ্যমই প্রযুক্তির আলো ছড়ানোর কাজটি আরো সহজ করতে পারে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে এর প্রকল্পের আওতায় স্বাস্থ্যসচেতনতা, যৌতুকের কুফল, বাল্যবিয়ে, জঙ্গিবাদ, নাগরিক অধিকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে উঠান বৈঠকে গৃহীনি ও ঝরেপড়া বাধাগ্রস্থ মানুষের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করলে ভবিষ্যতে সামাজিকতায় দারুন পরির্বতন ঘটতে পারে। হাটফাজিলপুর গ্রামের উঠান বৈঠকে উপজেলা রিসোর্স পারসন হিসাবে উপস্থিত থাকা শৈলকুপার সমবায় কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আবু আরিফ রেজা বলেন, ডিজিটাল তথ্যসেবাকে সমৃদ্ধ করতে তথ্যআপাদের উঠান বৈঠকের গুরুত্ব অনেক। এখানে বিভিন্ন পর্যায়ের নিয়মিত অর্ধশত নারী অংশগ্রহণ করে এবং উঠান বৈঠক ছাড়াও তথ্যআপারা পথে প্রান্তরে নানাভাবে তথ্য আদান প্রদান করে মানুষকে উৎসাহিত করছে।

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রেশমা খানম জানান, তথ্যআপাদের সহযোগিতায় ভিডিও কনফারেন্স ও ইন্টারনেট প্রযুক্তির মাধ্যমে তাৎক্ষনিক বহু সমস্যার সমাধান পাচ্ছে গ্রামীণ জনগোষ্ঠি। আইন সহায়তা, নারী অধিকার সম্পর্কে জানা, নাগরিক অধিকারভোগ করাসহ পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য নিরলস কাজ করছে এ প্রকল্পে কর্মীরা।

দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের প্রবীণ সাংবাদিক বিমল সাহা বলেন, ইন্টারনেট সেবা গ্রামে পৌছালেও এখনো বহুমানুষ এর প্রয়োজন, ব্যবহার ও ভবিষ্যৎ সফলতা সম্পর্কে ভাল বুঝতে পারেনা। এ উদ্যোগ সফলভাবে বাস্তবায়ন হলে তথ্যআপা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজটি আরো নন্দ্বিত হতে পারে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম বলেন, সরকারের ইন্টারনেট সেবা প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছানোর পাশাপাশি বহু অজানা তথ্যউপাত্ত সংগ্রহ করতেই এ প্রকল্প কাজ করছে। তথ্যআপা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে শৈলকুপার পৌরসভাসহ ১৪টি ইউনিয়নে তথ্যআপা’রা নিরলস শ্রম দিচ্ছে। এ প্রকল্পের সকল সেবা মানুষের দোরগোরায় পৌঁছাতে তিনি কর্মীদের মাধ্যমে সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।