ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে ঝিনাইদহের শৈলকুপায় ২৬টি ইটভাটা, যার মধ্যে ২৩টি অবৈধ। এসব ভাটায় প্রতিদিন পুড়ছে হাজার হাজার মণ কাঠ। আবাসিক পরিবেশ দূষণসহ ফসলী জমিতে গড়ে ওঠা ভাটাসমূহে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই, নেই লাইসেন্স। সব ধরনের ভ্যাট-ট্যাক্সের ধার না ধেরে উপজেলায় চলছে প্রায় ২ ডজন অবৈধ ইটভাটা। নীতিমালা লঙ্ঘন করে লোকালয় ও কৃষিজমিতে গড়ে উঠেছে এসব ইটভাটাগুলো।

কয়েকটি ভাটায় লোক দেখাতে কয়লার স্তুপ সামনে রেখে পেছন থেকে পোড়ানো হয় প্রতিদিন শত শত মন কাঠ। ড্রামচিমনি দিয়ে কাঠ পোড়ানোর ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ছে লোকালয়ে।

অথচ ইট প্রস্তুুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ অনুযায়ী, আবাসিক এলাকা ও কৃষিজমির এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ। যেখানে ১২০ ফিট গাঁথুনি চিমনী থাকার কথা সেখানে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে মাত্র ৫০ থেকে ৬০ ফিট ড্রাম চিমনীর মাধ্যমে ধোঁয়া উড়িয়ে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটানো হচ্ছে। এছাড়াও ইটের সঠিক মাপ থাকার কথা ১০-৫-৩ ইঞ্চি। অথচ পুড়ানোর পর ইটের মাপ ৮ থেকে ৯ ইঞ্চির বেশী পাওয়া যায় না।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বড়িয়া ইমরান ব্রিকস, এমই ও গ্রীন ব্রিকস, মহম্মদপুর স্টার ব্রিকস, হরিহরা টিটু ব্রিকস, দুধসর মিলন ব্রিকস ও শাহ ব্রিকস, ষষ্ঠিবর বর্ষা ব্রিকস, মাঠপাড়া বিএন্ডসি ব্রিকস ও চুন্টি ব্রিকস, আওশিয়া শাকিব ও শান ব্রিকস, হাটফাজিলপুর মোল্লা ও রাতুল ব্রিকসসহ বেশিরভাগ ইটভাটা জনবসতি এলাকায় এবং কৃষিজমির পাশে গড়ে উঠেছে। এসব ভাটার মালিকের বিরুদ্ধে সরকারকে ভ্যাট ও ট্যাক্স না দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।

শ্রমিকরা জানান, এক একটি ভাটায় প্রতিদিন কাঠ পুড়ানো হয় প্রায় ৩শ থেকে ৪শ মণ। ২৬টি ভাটায় প্রতিদিন কাঠ পোড়ানো হয় প্রায় সাড়ে ৭হাজার মণ। ভাটাগুলোর পাশে রয়েছে কলা বাগান, কপিক্ষেত, মটর, বেগুন, ও ধানখেত। আর ১০০ থেকে ১৫০ গজের মধ্যে রয়েছে জনবসতি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি সরকারি অনুমোদন ছাড়াই লোকালয় ও আবাদি জমির পাশে ইটভাটা স্থাপন করে ব্যবসা চালিয়ে আসছেন।

ইটভাটার মালিকরা বলেন, ১৬ই ডিসেম্বর, ২৬শে মার্চ ২১শে ফেব্রুয়ারীসহ বিভিন্ন সরকারী কর্মসুচীর চাঁদাসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেই তাঁরা এসব ইটভাটা চালাচ্ছেন।

কৃষকরা জানান, কৃষিজমিতে বা জমির পাশে এসব ইটভাটা স্থাপন করায় তাঁদের ফসলের ক্ষতি হয়। ভালো ফলন পাওয়া যায় না। এসব ইটভাটার মালিকেরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় তাঁরা প্রতিবাদ করতেও সাহস পায়না।

কৃষকদের এসব অভিযোগ সঠিক হিসেবে উল্লেখ করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার কুন্ডু বলেন, কৃষিজমিতে ইটভাটা স্থাপন করা ঠিক না। ফসলি জমির পাশে ইটভাটা স্থাপন করায় ফসলের উৎপাদন কম হয়। ইটভাটা স্থাপনের ক্ষেত্রে এসব লক্ষ রাখা উচিত বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

শৈলকুপা উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে আপনাদের নিকট জানলাম তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।