অপূর্ব লাল সরকার, আগৈলঝাড়া (বরিশাল) সংবাদদাতাঃ বরিশালের আগৈলঝাড়ায় ৩য় শ্রেণীর শিশু শিক্ষার্থী নুশরাত জাহান নোহা’র রহস্যজনক আত্মহত্যার আলোচিত ঘটনা অভিযুক্ত শিক্ষকের পক্ষে আপোস মিমাংসা করতে মরিয়া হয়েছে উঠেছে একটি মহল। ঘটনার তিন দিনেও অভিযুক্ত শিক্ষককে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

শিশু নোহার বাবার সাথে দেখা করেছেন বরিশাল পুলিশ সুপার। অভিযুক্ত শিক্ষককে চাকুরি থেকে অব্যাহতি প্রদান করেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গর্ভধারিণী মায়ের অভিযোগ- তার মেয়ে নোহাকে পিতা ও সৎ মা হত্যার পরে আত্মহত্যা বলে প্রচারণা চালাচ্ছে। মেয়ে হত্যার বিচার দাবি করেছেন তিনি। শিক্ষক শফিকুল ইসলাম সুমন বুধবার বেত্রাঘাত ও গালমন্দের কারণে অভিমান করে ওইদিন (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ৩য় শ্রেণীর শিক্ষার্থী নুশরাত জাহান নোহা নিজের ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে নোহার বাবা সুমন মিয়া আত্মহত্যা প্ররোচনার অভিযোগে বৃহস্পতিবার সকালে শিক্ষক শফিকুল ইসলাম সুমনকে অভিযুক্ত করে থানায় মামলা দায়ের করেন। ঘটনার তিন দিন পার হলেও অভিযুক্ত শিক্ষককে গ্রেফতারে ব্যর্থ হয়েছে পুলিশ।

এদিকে শিশু নোহার আলোচিত মৃত্যুর ঘটনায় বরিশাল পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম বিপিএম শুক্রবার রাতে নোহার বাবা সুমন মিয়ার সাথে দেখা করেন। এসময় সুমন মিয়া পুলিশ সুপারের কাছে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচার দাবি করেন। বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শাখাওয়াত হোসেন জানান, শনিবার বিকেলে কমিটি জরুরী সভা ডেকে মামলায় অভিযুক্ত শিক্ষক সুমনকে চাকরি থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। ওই সভায় পরিচালনা কমিটির ১৪ সদস্যর মধ্যে ১১ জন উপস্থিত ছিলেন বলে জানান। তিনি আরও বলেন, শিশু শিক্ষার্থী নোহা পরিবার সদস্যদের দ্বারা হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে। কারণ হিসেবে তিনি নোহা’র নামে তার দাদা জমি লিখে দিতে চেয়েছিলেন। সম্পত্তি হাতছাড়া হবার আশঙ্কায় পরিবার সদস্যরা তাকে হত্যা করতে পারে। তিনি নোহা হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন। এসময় তিনি অভিযুক্ত শিক্ষকের এলাকা সাতলা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তাদের কাছে এসেছিলেন বলেও জানান।

শিশু শিক্ষার্থী নোহার গর্ভধারিণী মা তানিয়া বেগম সাংবাদিকদের কাছে অভিযাগে বলেন, নোহার বাবা সুমন মিয়া বর্তমানে চার নম্বর স্ত্রী নিয়ে সংসার করছেন। তিনি নিজেও বর্তমানে ঢাকায় সংসার করছেন। নোহা ওই পরিবারের সৎমা ঝুমুর বেগমের কাছে ছিল চক্ষুশূল। তার অভিযোগ- নোহাকে তার সতীন ঝুমুর বেগম ও স্বামী সুমন মিয়া হত্যার পরে লাশ ঝুলিয়ে রেখেছে। নোহার মৃত্যুর খবর পেয়ে বুধবার রাতেই নোহার মা তানিয়া বেগম ঢাকা থেকে এলাকায় ছুটে আসেন। ওইদিন ও শনিবার বিকেলে তিনি সাংবাদিকদের কাছে তার মেয়ে নোহাকে স্বামী ও সতীন পরস্পর যোগসাজশে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে অপপ্রচার করায় তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার দাবি করেন তিনি।

তানিয়া বেগম অভিযোগের ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, আদালতের মাধ্যমে নোহাকে তার বাবার জিম্মায় প্রদান করা হয়। নোহার মৃত্যুর দু’দিন আগে তার দাদা তাকে (তানিয়াকে) ফোনে জানিয়েছিলেন যে, তার নাতনীর জন্য তিনি সম্পত্তি লিখে দিবেন। যাতে ভবিষ্যতে নোহার কোন কষ্ট না হয়। ওই সম্পত্তি লিখে দেয়ার কথাই নোহার মৃত্যুর জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, শিক্ষকতো ঘটনার দিন শুধু নোহাকেই মারধর করেনি, অন্যদেরও মেরেছে। তবে শুধু নোহা কেন আত্মহত্যা করবে? তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন- অতটুকু মেয়ে কিভাবে ওড়না ও গামছা জোড়া লাগিয়ে গলায় ফাঁস দিতে পারে? সম্পত্তি বেহাত হবার আশঙ্কায় নোহার মৃত্যুর পিছনে সৎমা ও তার সাবেক স্বামী জড়িত রয়েছে। তিনি দ্রুত পোস্টমর্টেম রিপোর্ট প্রদানের মাধ্যমে মামলাটি সিআইডি বা ডিবিতে হস্তান্তরেরও দাবি জানান।

এদিকে মামলায় অভিযুক্ত শিক্ষক শফিকুল ইসলাম সুমন পাইককে বাঁচাতে সাতলা ইউপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন পাইক তার লোকজন নিয়ে নোহার বাবাসহ বাড়ির লোকজনের সাথে দেখা করে বিষয়টি আপোস মিমাংসার প্রস্তাব দেন। সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে চেয়ারম্যান ও তার লোকজন দ্রুত এলাকা ত্যাগ করেন। এব্যাপারে সাতলার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন পাইক মোবাইল ফোনে আপোস মিমাংসার কথা অস্বীকার করে বলেন, তারা নোহার শোকার্ত পরিবারকে সমবেদনা জানাতে গিয়েছিলেন।

বাগধা ইউনিয়নের খাজুরিয়া গ্রামে প্রতিষ্ঠিত দারুল ফালাহ প্রি-ক্যাডেট একাডেমী দীর্ঘদিন বন্ধের পর গত ৫ সেপ্টেম্বর (শনিবার) স্কুলের মাসিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তিনদিন পরে ওই পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয় বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে। প্রকাশিত ফলাফলে স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী নুশরাত জাহান নোহা ৩০ মার্ক পেয়ে ফেল করায় স্কুলের শিক্ষক শফিকুল ইসলাম সুমন পাইক শিক্ষার্থী নোহাকে ক্লাশ রুমে বেত্রাঘাত করে গালমন্দ করেন। নুশরাত জাহান নোহা খাজুরিয়া গ্রামের সুমন মিয়ার মেয়ে। অভিযুক্ত শিক্ষক শফিকুল ইসলাম সুমন পাইক (৩৭) পার্শ্ববর্তী উজিরপুর উপজেলার সাতলা গ্রামের আব্দুল লতিফ পাইকের ছেলে।

এ ব্যাপারে আগৈলঝাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আফজাল হোসেন জানান, উর্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। আসামী গ্রেফতারে পুলিশী তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।