জিকরুল হক, সৈয়দপুর (নীলফামারী) সংবাদদাতা;  জেলার সৈয়দপুরে আটকেপড়া ৬২ হাজার পাকিস্তানি করোনাভাইরাস ঝুঁকিতে রয়েছে। শহরের ২২টি ক্যাম্পে তাদের বসবাস। এসব ক্যাম্পে আছে কমপক্ষে ১৫ হাজার পরিবার। প্রতিটি পরিবারের জন্য ১২০ বর্গফুট আয়তনের আছে একটি করে থাকার ঘর। স্বামী স্ত্রী ছেলে মেয়ে মিলেই এক ঘরেই তাদের বাস। রান্নার কাজও চলে তাদের সেই ঘরে। প্রতিটি ক্যাম্পে রয়েছে একটি গণশৌচাগার। সেখানে তাদের লাইন দিয়ে প্রাকৃতিক কাজ ও গোসল করতে হয়। হাঁটা চলার জন্য রয়েছে সামান্য গলিপথ। প্রতিটি ক্যাম্প এতই ঘিঞ্জি যে খুব সহসাই কোন মানুষের খোঁজ বের করা দুষ্কর। বলতে গেলে প্রতিটি পরিবারের সদস্যরা একেবারে গাদাগাদি করে বাস করে।

ক্যাম্পবাসীদের ৯৯ ভাগ পরিবারের কর্তা মুটে মজুরী করে সংসার চালায়। কাজ না থাকলে তাদের হাড়ি চুলায় উঠে না। রোজ আয়, রোজ খাই এমন নিয়মে চলে তাদের সংসার। সমাজের মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকায় তাদের মাঝে নেই শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সচেতনতা। জন্ম নিয়ন্ত্রণের বালাই নেই সেখানে। ক্যাম্পবাসীদের জন্মহার অত্যধিক। তাদের কথা যত পরিবারের সদস্য বাড়বে, ততই বৃদ্ধি পাবে তাদের আয়। সনাতন নিয়মেই তারা বিশ্বাসী। আধুনিকতার পরশ তাদের একটুকুও ছোঁয়নি। তাদের আয়ের অবলম্বন মুটে মজুরী করা।

সারাদিন বাড়ির বাইরে কাজ করে যা আয় করে তা দিয়েই পরিবারের সদস্যদের মুখে অন্নের যোগান দেয়। সংসারের অভাব তাড়াতে শিশুরাও ঘরে বাইরে কাজ করে। বেশির ভাগ ক্যাম্পবাসী শহরের পথে ঘাটে রিক্সা ও ভ্যান চালায়। অনেকে ক্ষুদ্র ব্যবসাও করে। তাদের সন্তানদের বেশির ভাগই বিদ্যামুখি নয়। তবে ধর্মীয় পড়াশোনা করতে বেশ আগ্রহী তারা। কুসংস্কারে ভরপুর এবং মুক্ত চিন্তার সুযোগ না থাকায় ক্যাম্পবাসীরা অদৃষ্টবাদে বিশ্বাসী। এজন্য তারা আধুনিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ে অনেক পিছিয়ে। ফলে ক্যাম্পবাসীরা সবসময় থাকে স্বাস্থ্য সচেতনতার বাইরে। থাকার ঘরগুলো কাঁচা হওয়ায় ঘরের মেঝে সব সময় স্যাঁতস্যাঁতে থাকে। এজন্য যে কোন ধরনের রোগ জীবাণু দ্রুত ছড়ার সম্ভবনা ক্যাম্পগুলোতে।

প্রায় সময়ই ক্যাম্পের শিশু ও বৃদ্ধরা সর্দি, কাশি ও হাঁপানি রোগে ভুগতে থাকে। কথা হয় ক্যাম্পের অধিবাসি রহিম, কালাম, আলীম, জরিনা, সাবিয়া, শাহীনসহ একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে। তারা বলেন এমন অনেক পরিবার আছে যাদের অনেক সদস্য রাতের খাওয়ার পর চৌকির কোন অংশে ঘুমাবে সেই চিন্তা প্রতিদিন করে। আর স্বাস্থ্য সচেতনতার ভাবনা ভাবাতো অনেক দূরের কথা। তাদের মতে সকাল হলে ক্যাম্পগুলোতে মানুষের চাপে ঘর থেকে বের হওয়া কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। সবাইকে গা ঘেসে ক্যাম্পে চলাচল করতে হয়। এমন অবস্থায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত কেউ হলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। যা সহজে কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। ওইসব ব্যক্তির মতে আমরা একদিন কাজ না করলে মুখে আহার যায় না। সেই মতে এক দুই সপ্তাহ ঘরে কোন ভাবেই বসে থাকা সম্ভব নয়। অনিচ্ছা থাকলেও পেটের তাগিদে ঘরের বাইরে যেতে হবে। আর এমন অবস্থায় যে কোন সময় করোনাভাইরাসের মতো ঘাতক ব্যাধি ক্যাম্পে আসা সময়ের ব্যাপার মাত্র।

করোনাভাইরাস ঝুঁকিতে আটকেপড়া পাকিস্তানিদের ক্যাম্প বিষয়ে জানতে কথা হয় বিশিষ্টজন ও মিশন জেনারেল হাসপাতাল ও পপুলার ল্যাবের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ক্যাম্পগুলো অত্যন্ত ঘনবসতি। অস্বাস্থ্যকর, অসচেতন ও হতদরিদ্র মানুষের বাস থাকায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কোনভাবেই উড়িয়ে দেয়া যায় না।

ক্যাম্পবাসীদের এমন অবস্থা বিষয়ে কথা হয় সৈয়দপুর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর জননন্দিত সমাজসেবক আকতার হোসেন ফেকুর সঙ্গে। তিনি বলেন ক্যাম্পবাসীরা যাতে কোনভাবেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত না হন, এজন্য তিনি সকল ধরনের পদক্ষেপ নিতে মানবতার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

কথা হয় সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাসিম আহমেদের সঙ্গে। তিনি মুঠোফোনে বলেন ক্যাম্পগুলোতে কোন সমস্যা দেখা দিলে সেটি পৌরসভা দেখভাল করবে।

আমাদের বাণী ডট কম/২৯ মার্চ ২০২০/ভিএ 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।