স্যার,আপনার সেই অনুষ্ঠানে প্রবাসীদের প্রতি শিষ্ঠাচার ছিলো কি?মজায় মজায় কোটি প্রবাসীর বুকে নীরব রক্ত ক্ষরণ,প্রকাশ্যে প্রতিবাদ।বোঝার ভূল,নাকি বুঝানোর ভূল। নাকি প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের নিয়তি। পারিবারিক আর কর্ম জীবনের জটিলতায় ভিডিও দেখলাম দেরীতে।তাই কলমের প্রতিবাদও দেরীতে।

আবু সায়্যিদ স্যারের সেই অনুষ্ঠানে পাশে শিমুল মোস্তফা,হেলাল হাফিজ আর দর্শক শ্রোতার সারিতে নিঃসন্দেহে দেশের সেরা শিক্ষিত জনেরা।

আচ্ছা সেই অনুষ্ঠানের, তারা কত টাকা রেমিটেন্স আনছেন,আর অশিক্ষিত ফর্ম পুরণ করতে না পারা,গাট্টি ওয়ালা মানুষ গুলো কতো আনছেন কিংবা দেশে পাঠাচ্ছেন,রেমিটেন্স।

আমার বিশ্বাস দেশ সেরা গুনীজন আবু সায়্যিদ স্যার প্রবাসীদের ছোট করার জন্য কথা গুলো বলেননি।হয়তো শিক্ষার প্রয়োজনীতা বুঝাতে চেয়েছেন। দুই যুগের বেশি সময় প্রবাসী আমি।আমারতো দেশে আসার দুই দিন পুর্বে থেকে খাওয়া দাওয়া বন্ধ হয়ে যেত।প্লেন উঠলে অস্থিরতা বেড়ে যেত। প্লেন এর চাকা প্রথম রান ওয়ে স্পর্শ করলে চোখ ভিজে উঠতো আনন্দ অশ্রুতে। প্রতি যাত্রায় গোটা পাঁচ দশটা ফর্ম আমিও পুরন করেছি তবে সেটা দুই হাজার পাঁচ সালের পূর্বে।

আধ্যাপক আবু সায়্যিদ স্যার হয়তো আশির দশকের কোন যাত্রার কথা বলেছেন।কারন বয়সের বিবেচনায় ক্যালেন্ডারের পরিবর্তনে এখন অন্তত একেবারে পড়া লেখা না জানা মানুষ বিদেশ যায়না।

আর প্লেনের ভিতর দু এক জন শিক্ষিতও যে উদবিগ্ন থাকেনা তা নয়। প্লেন চলা কালীন এক সাথে না দাঁড়ালেও প্লেন রান ওয়েতে হাঁটার সময় ল্যান্ডিং টাইমে অনেকে বেল্টে মালামাল আগে পাওয়ার জন্য প্রিয়জন কে দেখার অস্থিরতায় দাঁড়িয়ে যান, এটা বাংলাদেশ প্রান্তে নাড়ির টানে হয়।

বিদেশে বিমান ল্যান্ডিং করলে পা চলতে চায়না। আসলে দেশের জন্য প্রবাসীদের মন বেশি কাঁদে। রক্ত পানি করা,ঘামের নোনা জলে যে দেশ প্রেমের সাহিত্য কাব্য রচিত হত চিঠির পাতায় আজ স্মার্ট ফোনে সরাসরি দেখা,কথা বলতে বলতে প্লেন থেকে নামে প্রবাসীরা।

আবু সায়িদ স্যার,যেভাবে বলতে চেয়েছেন দর্শক শ্রোতাই এটা মজার বিষয় করে ফেলেছেন মনে হয়। প্রথম দু এক কথায় দর্শক হেসে উঠায় বক্তা দেশ প্রেম,নাড়িটানের কথা গুলোকে ব্যাঙ্গ,রসাত্মক,কৌতুক পরিবেশনের পর্যায়ে উপস্থাপন করেছেন।

ইচ্ছে করলে দেশ বরেণ্য এই শিক্ষিত গুনী আরো আবেগ দিয়ে শালীন করে শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে এই রেমিটেন্স যোদ্ধাদের আরো সন্মান দিতে পারতেন,নিতেও পারতেন।আসলে আগের দিনের রাজ সভায় রাজার অপ্রয়োজনীয় কথায়, রাজাকে খুশি করতে সভাসদ মারহাবা মারহাবা আওয়াজ তুলতেন।দূর থেকে অনেকে এদের বলতেন,ভাঁড়! ভাঁড় কি? জানিনা,আমি অত শিক্ষিত নই।এমনি বললাম।

সাহিত্য,কবিতা,কিংবা সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অনুষ্ঠানে গেলে, অনেক এক পা কবরে যাওয়া শিক্ষিত জ্ঞানীর চার পাশে নারী ভক্তদের লেপ্টালেপ্টি দেখি।এতে দোষ কার?

ইনারা অনেকে দীর্ঘদিন ভালো কথা বলে,স্বপ্নের কথা বলে,জ্ঞান বিতরণ করে মিডিয়ার কল্যানে কিংবা ইনাদের সাথে যারা চলেন সেই রকম পদধুলি পাওয়া জ্ঞানীদের কল্যানে দেশ বরেণ্য হন।তার পর জ্ঞানীদের জ্ঞানের প্রতিটি শব্দ বিক্রি হয় প্লেন ভাড়া,গাড়ি ভাড়া,উপঢৌকনের বিনিময়ে।এতে প্রবাসী শিক্ষিতের ভিড়ে দু একজন অশিক্ষিত প্রবাসীযে থাকেনা তা নয়।

নিঃসন্দেহে আবু সায়্যিদ স্যার সন্মানী ব্যাক্তি। তিনি হয়তো ইচ্ছা করে প্রবাসীদের ছোট করেননি। হতে পারে স্লিপ ইফ কমেডি বা অতি মজায় মজায় হয়ে গেছে প্রবাসীদের বুকে রক্ত ক্ষরণ।

স্যার প্রবাসীদের অশিক্ষিত মুর্খ বলেননি। তিনি হয়তো বলতে চেয়েছেন, তারা, প্রবাসীরা অশিক্ষিত,অল্পশিক্ষিত হয়েও বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতি সচল রাখছেন।দেশের মানুষের চাইতে প্রবাসীদের দেশ প্রেম বেশি বুঝাতে গিয়ে আবেগের মুহুর্ত কে স্যারের মজা করে কথা বলার বাচন ভঙ্গিতে পুরাই ভারতের কপিল শর্মার কমেডি করে ফেলেছেন।

পাঠক নিশ্চয় তিনি প্রবাসীদের নিয়ে ব্যাঙ্গ করা সেই জুতাপালিশ ওয়ালা সাহিত্যিক আবু শাহরিয়ার সাহেব নন,তিনি বিমান বন্দরে প্রবাসীদের কামলা বলা পুলিশ নন। হয়তো আবু সায়্যিদ স্যারের কথা গুলো আমি বুঝতে পারিনি।পারার কথাও না।প্রবাসে আমরা দিন মুজুর, মাস মুজুর।  বিদেশ যে কাজ করি, সেখানে কর্ম ব্যাস্ততায় বিমানের আচরন,বিমান বন্দরের আচরন বিধি ভুলে যাই।

ভুলে যাই শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত আমরা। ঘামের কামাইয়ে কেনা টাকার গাট্টি বোচকা বয়ে আনি দেশে,প্রিয়জনের ঠোঁটে এক চিলতে হাসি ফুটাতে উপহার নিয়ে আসি। স্যার সেই গাট্টিতে কি শুধু উপহার থাকে? সে গাট্টিতে থাকে কষ্টের নোনা জলে ভেজা, রক্ত পানি করা,না খাওয়া তিল তিল করে জমানো টাকার বিন্দু বিন্দু ভালোবাসা।

স্যার,আপনি লাগেজ গুলোকে যখন গাট্টি বললেন,আপনার সামনের শিক্ষিত জনেরা হো হো করে হেসে উঠলো। আপনার কমেডি বচনে শিক্ষিত হাসি জনেরা মজা পেলো,প্রবাসীদের হেয় প্রতিপন্ন করায়,আপনি আরো চিবিয়ে চিবিয়ে মজা করলেন,স্যার,কলেজ বিশ্ব বিদ্যালয়ের বই গুলোতে কি মানুষকে লজ্জা দেয়ার,কষ্ট দেয়ার কথা শেখানো হয়।ধরে নিলাম আপনার কথা গুলো কল্প কথা নয় শতভাগ মিথ্যা নয়,এই কথা গুলো মিথ্যা নয়,সব ঘটনা সত্যি,এক জন দেশ সেরা শিক্ষিত,জ্ঞানী নাগরিক হয়ে আপনার মতো একজন, বিষয় গুলো গোপন না করে, কমেডি আকারে পেশ করলেন! স্যার আপনিতো বিদ্যার সাগর।আচ্ছা, আপনি যদি বলতেন দেখেন, তারা ফর্ম পুরন করতে না পারলেও দেশের দুর্ণীতিবাজদের চাইতে লক্ষ কোটি গুন শ্রেষ্ট মানুষ।তারা জীবনের তাগিদের খাবারের টাকা ছাড়া সব টাকা দেশে পাঠিয়ে দেন।আমাদের প্রবাসী ভাই বোনেরা আমাদের মানব সম্পদ,আমারা আগামীর মানব সম্পদের সাথে শিক্ষার আলো মিশিয়ে আরো শক্তিশালী শিক্ষিত মানব সম্পদ সৃষ্টি করব।

আসলে আমরা প্রবাসীরা বিদেশের চাইতে দেশেই বেশি অবহেলিত।মাঝে আন্দালিবের মতো কেউ হাততালি পেতে প্রবাসীদের ভি আই পি বলে সংসদে,এম পি নিক্সন চৌধুরীর মতো কেউ তার ইমেজ বৃদ্ধিতে কিংবা ভালোবেসে মিডিয়ায়,ভাষণে ভি আই পি বলে ফেলে। আমরা প্রবাসীরা খুশি হই।আর আপনারা দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষিত শ্রেনীর মানুষ গুলো প্রবাসীদের সইতে পারেন না,আবার কিছু চোর,বাটপার অভদ্র প্রাণীও বিমানবন্দরে করে নাজেহাল।

আপনাদের ভাষায় অশিক্ষিত,অল্পশিক্ষিত যে মানুষ,সে মানুষরা বিদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা দেশে পাঠাচ্ছে,তাদের কর্মসংস্থান কি করতে পারবেন দেশে। জানেন স্যার,এই মানুষদের বিদেশের বিমান বন্দরে স্যার সম্ভোদন করে।এই অল্প শিক্ষিত,অশিক্ষিতরা বিদেশে কোম্পানীর মালিক, তাদের বুদ্ধিমত্তার কাছে এ দেশের তথা কথিত শিক্ষিতরা কিছুই না।সৌদিতে এগারো বছর,সিঙ্গাপুরে দশ বছরের অভিজ্ঞিতা নিয়ে দেশে চাকরীর বাজারে মুল্য কত জানেন স্যার, পনের বিশ হাজার টাকা,অথচ বিদেশে দুই,তিন লাখ দেশী টাকায়।নিজের,পরিবারের,দেশের স্বনির্ভরতার জনে স্বেচ্ছায় দেশীত্যাগী হয় এই মানুষেরা।আবার ফিরে আসে অনেকেই শুন্য হাতে শেকড়ে।এরা বেইমান নয়।এরা দেশপ্রেমী। এরা দেশে আসলে কিংবা যারা বেকার আছে তাদের কাজের যোগান দিতে পারবেন। কাগজে কলমে দলিলে ভাষণে যে স্বনির্ভরতা দেখি বাস্তবে কি তাই! বিদেশে থেকে নিজের অর্থে নিজের দেশে মান অক্ষুন্ন রাখতে নিজের সংস্কৃতি ধরে রাখতে কি পরিমান শ্রম,ঘাম অর্থ ব্যয় করে জানেন স্যার! আমি বুঝিনা প্রবাসীরা কার ক্ষতি করে,কার বাড়া ভাতে ছাই দেই,শিক্ষিতরা এদের সহ্যই করতে কেন পারেনা।কদিন পর পর ভাদ্র মাস না হলে জ্ঞানী,অজ্ঞানীরা ভ্রান্ত হয়ে যা নন চায় তাই বলে,ফান করে,আর কেউ তালি বাজায়।আপনারা তো এমনি পপুলার।এ সব বলে কি পপুলার হন নাকি অন্য কিছু?

বিমানে দু এক জন অতি আবেগে দীর্ঘদিন দেশ থেকে দূরে থাকার কারনে কিছুটা বিভ্রান্ত আচরন করতেই পারে, বিমান শুদ্ধ সকল প্রবাসী নয়।আমি সেই দু একজনকেও স্যালুট জানাই।কারন তারা রেমিটেন্স যোদ্ধা।

আর মাননীয় সরকার বাহাদুরের কাছে অনুরোধ দেশের শিক্ষিত জ্ঞানী তথা আবু সায়্যিদ স্যারদের জন্য আলাদা ফ্লাইটের ব্যাবস্থা করবেন। আর আমার মতো অশিক্ষিত,অল্পশিক্ষিত প্রবাসীদের জন্য আলাদা ফ্লাইট। অবশ্য বিদেশে শিক্ষাগত যোগ্যতায় বিমানের টিকিট দেয়না।আল্লাহ রাব্বুল আলামিন,শিক্ষিত জ্ঞানীদের, অশিক্ষিতদের সন্মান না হোক সহ্য করার শক্তি দিক।

লেখার শেষেও আমি কিন্তু স্যারকে স্যার বললাম।কারণ আমি প্রবাসী।দেশের সবাইকে,দেশে অনেক ভালোবাসি।প্রবাসীরা শ্রদ্ধা করতে যানে,তেমনি প্রতিবাদ। প্রবাসীদের পক্ষের আমি,আমি শ্রমিকের পক্ষের। আমি শিক্ষা আর শিষ্ঠাচারের পক্ষের। স্যার আপনার সেই অনুষ্ঠানে প্রবাসীদের প্রতি শিষ্ঠাচার ছিলো কি?

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।