উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা সংবাদদাতা; নড়াইলে কালের বিবর্তনে ইতিহাস থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে লাটি মখেলা। শৈশবে যেসব খেলাধুলা খেলেছিলেন আজকের বৃদ্ধরা সেসব খেলাধুলা না দেখতে পেয়ে তারাও এখন ভুলে গেছেন বহু খেলার নাম। কালের আবর্তনে সময়ের ব্যবধানে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ এ লাটিম খেলা। লাটিম গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী একটি খেলা। আগের মতো এখন আর কাউকে লাটিম খেলতে দেখা যায় না।

নানা ঋতুভিত্তিক মেলায়ও খেলনা-পসরায় লাটিম তেমন দেখা যায় না। খেলাধুলার অভাবে যুবসমাজ ঝুকছে মাদকের দিকে।ছোট্ট সোনা মনিরা খেলার সুযোগ পাচ্ছে না।বাংলার সব গ্রামের কিশোরদের কাছে লাটিম খুবই পরিচিত একটি খেলা, বাংলার সব গ্রামে এ খেলার প্রচলন থাকলেও যশোরের বাঘারপাড়া অঞ্চলে এর চল অনেক বেশি।

গ্রামে লাটিম খোলার জায়গা স্কুলমাঠে, নদীর পাড়ে, আমবাগানে, রাস্তারপাশে সাধারণত শিশু-কিশোররা লাটিম খেলায় মেতে উঠত গ্রামের রাখাল বালক থেকে শুরু করে স্কুলপড়ুয়া শিশু কিশোরদের মধ্যেও দেখা যায় লাটিম খেলার আসক্তি। স্কুলে টিফিনের ফাঁকে সামান্য দূরে শিক্ষকদের চোখের আড়ালে গিয়েও শিশু-কিশোররা মেতে উঠত লাটিম খেলায়। আগে ছুতার মিস্ত্রিরাই কিশোরদের লাটিম বানিয়ে দিত।তারা সাধারণত পেয়ারা ও গাব গাছের ডাল দিয়ে এই লাটিম তৈরি করতো। নির্বাচিত পাট থেকে লাটিমের জন্য লতি বা ফিতা বানানো হতো।

বর্তমানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তুলাজাতীয় নরম কাঠ দিয়ে লাটিম এবং গেঞ্জির কাপড় দিয়ে লাটিমের ফিতা বানানো হয়। খেলার শুরুতে সমতল ভূমিতে একটি বৃত্ত আঁকা লাটিম খেলা সাধারণত দুই রকমের। বেল্লাপার ও ঘরকোপ। বেল্লপারে একটি দাগ কেটে সীমানা চিহ্নিত করা হয়। ঘূর্ণিতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় নির্ধারণী খেলায় যে পরাজিত হয় তার লাটিমকে অন্য প্রতিযোগীরা নিজেদের লাটিম দিয়ে আঘাত করে দাগের বাইরে বের করে দেয়। ঘূর্ণায়মান লাটিম হাতে নিয়েও প্রতিযোগী লাটিমকে আঘাত করা যায়। মাটিতে রাখা লাটিমকে আঘাত করতে ব্যর্থ হলে আবার ওই ব্যর্থ লাটিমকে রাখা হয়।

একইভাবে ওই লাটিমে আঘাত করে বেল্লাপার করা হয়। শর্ত অনুসারে সীমানা পার করা লাটিমকে নিজের লাটিম দিয়েও কোপ দেয়া যায়। ঘরকোপ খেলতে প্রথমে একটি বৃত্ত আঁকা হয়। নিজেদের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে বৃত্তের ভেতরে লাটিম ফেলে রাখা হয়। অন্য প্রতিযোগীরা বৃত্তের ভেতরের লাটিমকে নিজের লাটিম দিয়ে আঘাত করাই হচ্ছে এ খেলার উদ্দেশ্য। অনেক সময় লাটিমের আঘাতে অন্যের লাটিম ভেঙেও যায়।

কোনো খেলোয়াড় অন্যের লাটিম ভাঙতে পারলে অন্যেরা তাকে ধন্যবাদ দেয়। শৈশবের খেলাধূলার বিষয় মাধ্যমে শৈশবে দুরন্তপনায় জড়িয়ে থাকতো ছেলেমেয়েরা। কালের বিবর্তনে মহাকালের ইতিহাস থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে লাটিমখেলা।

গ্রামীণ খেলা আমাদের আদি ক্রীড়া সংস্কৃতি। লাটিম খেলা এক সময় আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতির ঐতিহ্য বহন করত।বর্তমানে গ্রামীণ খেলা বিলুপ্ত হতে হতে আজ তার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়াই কঠিন। নতুন প্রজন্মের কাছে এগুলো এখন শুধুই গল্প। আবার নাম শুনে অনেকেই হাসে,জনপ্রিয় এসব খেলা চলাকালে মানুষের ঢল নামতো খেলা প্রাঙ্গণে। কিন্তু এখন এসব খেলা শুধুই স্মৃতি। গ্রাম বাংলায় বিভিন্ন মেলা, যেমন বৈশাখী মেলা, রথের মেলা, পৌষ সংক্রান্তি, চড়ক পুজা, শিবরাত্রি, মহররম, ঈদ এবং নানা পার্বণে হরেক রকমের তৈরি করা লাটিম পাওয়া যেত।

আমাদের বাণী ডট কম/২৮  জুন ২০২০/পিপিএম 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।