নিজস্ব সংবাদদাতা, ঢাকা;  সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের পর এবার প্রধান শিক্ষকদের বেতন বাড়ছে। প্রধান শিক্ষকদের ১২ থেকে ১১তম গ্রেডে উন্নীত করা হবে। শিগগিরই এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানা গেছে, শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া ও আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১৩তম গ্রেডে (১১০০০-২৬৫৯০ টাকা) উন্নীত করা হয়েছে। শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে সহকারী শিক্ষক পদের বেতন স্কেলে এ পরিবর্তন আনা হয়েছে। তবে এ বেতন গ্রেডে পরিবর্তন আনা হলেও সব সহকারী শিক্ষক এ গ্রেডে বেতন ভাতা পাবেন না। ফলে শিক্ষকদের মাঝে নতুনভাবে ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে।

পরিবর্তিত স্কেলে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী শিক্ষকরা এ বেতন-ভাতা পাবেন। আর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা ২০১৯-এর তফসিল {বিধি২(গ)}-তে যোগ্যতা/অভিজ্ঞতা হিসেবে উল্লেখ আছে, সহকারী শিক্ষক পদে শিক্ষাগত যোগ্যতা দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতক/সমমান পাস হতে হবে। উন্নীত স্কেলের শর্ত মতে, যে সব সহকারী শিক্ষকরা শিক্ষাগত যোগ্যতা দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতক রয়েছে তারাই কেবলমাত্র এ উন্নীত স্কেলের আওতায় আসবেন।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের শর্তানুযায়ী, সহকারী শিক্ষকদের নিয়োগের বয়সসীমা ২১-৩০ বছর হতে হবে। এছাড়া কোন স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয় হতে দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতক বা স্নাতক (সম্মান) বা সমমানের ডিগ্রি থাকতে হবে। যারা এসএসসি বা এইচএসসি পাস করে আগে যোগদান করেছেন এবং যারা অনার্স পাস করলেও ন্যূনতম দ্বিতীয় শ্রেণি প্রাপ্ত নন- তারা এ গ্রেডের আওতায় আসবেন না।

এদিকে সহকারী শিক্ষকদের গ্রেড পরিবর্তনের পর এবার প্রধান শিক্ষকদের গ্রেড পরিবর্তনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বর্তমানে মামলা জটিলতা থাকায় এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনার ভিত্তিতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে সম্মতি দেয়া হয়েছে। মামলা জটিলতা কেটে গেলে প্রধান শিক্ষকদের গ্রেড উন্নতি করা হবে। বর্তমানে প্রধান শিক্ষকরা ১২তম গ্রেডে বেতন-ভাতা সুবিধা পাচ্ছেন।

এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব জানান, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের গ্রেড পরিবর্তনের পর এবার প্রধান শিক্ষকদের গ্রেড উন্নীত করা হবে। সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকদের গ্রেড উন্নীত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হলেও মামলাজনিত কারণে প্রধান শিক্ষকদের নির্দেশনা জারি করা সম্ভব হচ্ছে না।

তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষকদের গ্রেড সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়ার কথা রয়েছে। মামলা নিষ্পত্তি হলে এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করা হবে। প্রধান শিক্ষকদের পদোন্নতি সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রেও স্নাতক বা সমমান ডিগ্রিতে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পাস হতে হবে। নতুবা তারা এ সুবিধা পাবেন না।

সূত্রে জানা যায়, আগে সহকারী শিক্ষকরা যোগদানের পর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছাড়া ১৫তম গ্রেড ও প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হলে ১৪তম গ্রেডে বেতন-ভাতা সুবিধা পেত। বর্তমানে গ্রেড পরিবর্তন হলেও প্রাথমিক স্তরে মোট শিক্ষকের ৬০ শতাংশই নারী। নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতা হিসেবে নারীদের এসএসসি-সমমান পাস ছিল। তাই সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত হবেন তারা।

এছাড়া এতদিন ১৪তম গ্রেডে চাকরি করলেও বিপুল সংখ্যক শিক্ষকের বেতন ১৩ পার হয়ে ১২তম গ্রেডে চলে গেছে। এখন ১৩তম গ্রেডে নতুন করে বেতন নির্ধারণ করতে গেলে এই শিক্ষকদের বেতন উল্টো কমে যাবে। এসব নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষকরা অসন্তুষ্ট। তারা পৃথক পৃথক কর্মসূচির ঘোষণা দেবেন শিগগিরই।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।