হুমায়ুন কবীর ফরীদি, জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) সংবাদদাতাঃ জগন্নথপুর উপজেলা সদর সহ সর্বত্রই বেড়েই চলছে রকমারি সুদের ব্যবসা। ভিন্ন মেয়াদি মহাজনী সুদের ফাঁদে জিম্মি হয়ে পড়েছেন কিংবা পড়ছেন অসহায় হত-দরিদ্র জনগোষ্ঠী। রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।অসাধু সুদ ব্যাবসায়ীরা বনে যাচ্ছে পাহাড় সমান কালো টাকার মালিক। আর অভাব অনটের সংসারে অন্ন বস্ত্র বাসস্থানের প্রয়োজনে সুদ গ্রহীতারা হারাচ্ছে ভিটেমাটি -সহায় সম্পত্তি সহ অনেক কিছু।

জানাযায়, মানুষকে নিঃস্ব করার অন্যতম সুদের ব্যবসা সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা সদর সহ সবকটি ইউনিয়ন এর বেশির ভাগ গ্রাম গুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে। অসাধু সুদ ব্যাবসায়ীরা দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক ভিত্তিতে সুদের ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছে। অত্র এলাকায় সুদের ব্যবসা মহামারী আকার ধারণ করেছে।সুদ ব্যবসায়ীদের রোষানলে পড়ে অসহায় হয়ে পড়েছে সমাজের নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সাধারণ মানুষগুলো। জগন্নাথপুর উপজেলার অনেক জায়গায় কয়েকজন মিলে নাম স্বর্বস্ব সমিতি গঠন করেছে। কোন কোন ব্যক্তি কৃষি লোন এমনকি অত্র এলাকার বিভিন্ন হাট-বাজার এর কতিপয় ব্যাবসায়ী সরকারি ব্যাংক কিংবা এনজিও সংস্থা থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা শিল্প লোন উত্তোলন করে সিন্ডিকেট এর মাধ্যমে চড়া সুদে হত-দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে ভিন্ন ভিন্ন মেয়াদে ঋন প্রদান করেছেন।

কিন্তু এদের ঋন দানের কোন সরকারি অনুমতি নেই। কোন এনজিওর সাথে ও তাদের সংশ্লিষ্টতা খুজে পাওয়া যায়নি। কিন্তু দিনের পর দিন কোন বাঁধা বিপত্তি ছাড়াই চালিয়ে যাচ্ছে সুদের ব্যবসা। এসব ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়ছে সমাজের মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবার গুলো।বিপদ-আপদে অনেকটাই বাধ্য হয়ে সুদের উপর টাকা নিয়ে থাকেন মধ্যবিত্ত অনেক পরিবার। পরে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সুদ ও আসল টাকা পরিশোধ করতে না পারলেই সুদ ব্যবসায়ীদের হাতে লাঞ্ছনার স্বীকার হতে হয়।হারাতে হয় সাহায় সম্পত্তির অনেক কিছুই। উপজেলার প্রায় প্রতিটি ইউনিয়ন,গ্রাম,পাড়া,মহল্লায় নারী ও পুরুষ এবং বাজারের ব্যাবসায়ী সুদ ব্যবসায়ীরা মহাজনি প্রাথায় চালচ্ছেন সুদ ব্যবসা।

এসব সুদ ব্যবসায়ীদের চক্রবৃদ্ধি সুদের রোষানলে দিশেহারা হয়ে পড়েছে বিভিন্ন ইউনিয়ন ও গ্রাম অঞ্চলের সাধারণ অসহায় মানুষ। আর্থিক প্রয়োজনে বেকায়দায় পড়ে এসব সুদ ব্যবসায়ীদের খপ্পরে পড়েছে মধ্যবিত্ত কৃষক, বর্গাচাষী, স্বল্প আয়ের লোকজনসহ অনেকে। কেউ ব্যবসা করতে,বিদেশগমনে,সিএনজি ক্রয়ে বা বিভিন্ন অসুবিধায় সুদ ব্যবসায়ীদের নিকট চড়া সুদে টাকা নিয়ে ১০০/৩০০ টাকার সাদা ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর বা টিপ দিয়ে টাকা নিতে হয়। আর ওই সব সাদা ষ্ট্যাম্পে সাক্ষী নেওয়া হয় সুদ ব্যবসায়ীদের পছন্দমত ব্যক্তিদের এবং ইচ্ছামত তারা ষ্ট্যাম্প পূরণ করে রাখেন কিংবা প্রয়োজন মত লেখার জন্য ফাঁকা রাখেন।

আর বেকায়দায় পড়া ব্যক্তিদের অনেকে সুদ ব্যবসায়ীদের চাপে বন্ধক রাখতে জমির দলিলপত্র, স্বর্ণালংকার, চাকরিজীবীদের মাসিক বেতনের চেকও বন্ধক রাখতে বাধ্য হচ্ছেন সুদ ব্যাবসায়ীদের কাছে। মাসিক,সাপ্তাহিক এমনকি দৈনিক ভিত্তিতে নগদ ঋণ দিয়ে দেড় থেকে দুই গুন মুনাফা লাভ করে। একদিকে যেমন সুদ ব্যবসায়ীরা সম্পদের পাহাড় গড়ছেন অন্যদিকে সাধারণ ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ দিন দিন গরিব ও ভূমিহীনে পরিণত হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই জানান,সুদের ব্যবসা দিনের পর দিন বেড়েই চলছে। এই ব্যবসায় পুরুষের পাশাপাশি মহিলা সুদ ব্যবসায়ী ও আছে। সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারলে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে সুদের টাকা আদায় করেন। এই ব্যবসার মাধ্যমে অনেকেই বিত্তহীন থেকে হয়েছেন বিত্তবান, টিনের ঘর থেকে দু’তলা বাড়ি পর্যন্ত বানিয়েছেন। অথচ সুদ ব্যবসায়ীদের এমন কর্মকান্ডে প্রশাসনের নেই কোন পদক্ষেপ। যার ফলে ঋনের নামে এসব শোষণ বেড়েই চলছে। সমাজের এই ক্ষতিকর সমাজ-বিরোধী অবৈধ সুদ ব্যবসা উচ্ছেদে সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন এ ব্যাপারে জরুরী পদক্ষেপ নিবেন এই দাবী উপজেলার সচেতন মহলের ।

 

আমাদের বাণী ডট কম/১৭  আগস্ট ২০২০/পিপিএম

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।