নিজস্ব সংবাদদাতা, ঢাকা; রোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্বব্যাপী শিক্ষাব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশ্বের ১১০টি দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। প্রায় ১০০ কোটি শিশু-কিশোর স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শিশু-কিশোর স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে চীনে। ওই তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে বাংলাদেশের নাম। চীনে ২৩ কোটি ৩০ লাখ ও বাংলাদেশে ৩ কোটি ৬৭ লাখ শিশু স্কুলে যাচ্ছে না। ওই তালিকায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তানের নাম। গতকাল পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্তে মারা গেছেন দুই জন ও আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ২৪ জন বলে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে প্রেস কনফারেন্সে স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেক।

করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সংসদ টেলিভিশন চ্যানেলের মাধ্যমে সেরা শিক্ষকদের রেকর্ডিং করা ক্লাস প্রচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। প্রথমিক শিক্ষা অধিদফতরও একই চিন্তাভাবনা করছে বলে জানা গেছে।

করোনার ভাইরাসেরে কারণে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। বন্ধের এই সময়ে শিক্ষার্থীদের বাড়িতে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ফলে প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থী অনেকটা ঘরবন্দি অবস্থায় আছে। এর মধ্যে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থী পৌনে দুই কোটির মতো।

আর মাধ্যমিকে শিক্ষার্থী এক কোটির ওপরে। একদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, অন্যদিকে কোচিং বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার বন্ধ হয়ে গেছে। পরিস্থিতি অবনতি হলে এই বন্ধের মেয়াদ আরও বাড়তে পারে বলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে।

এমন অবস্থায় সরকার বিকল্প উপায়ে ক্লাস নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। আগামী তিন মাসের পরিকল্পনা নিয়ে এই কাজ হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মাউশির একজন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা।

মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী এই উদ্যোগের কথা নিশ্চিত করে বলেন, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সেরা শিক্ষকদের ক্লাস রেকর্ডিং করে সংসদ টিভির মাধ্যমে ক্লাস প্রচার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সকাল নয়টা থেকে রাত নয়টার মধ্যবর্তী সময়ে এই ক্লাসগুলো প্রচার করা হবে। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত একেকটি বিষয়ের জন্য মোট ৩৫টি ক্লাস থাকবে।

মাউশি সূত্র জানায়, গতকাল শনিবার থেকেই এসব ক্লাস রেকর্ডিং করা শুরু হয়েছে। তিনটি স্টুডিওয়ে এই ক্লাস রেকর্ডিং করা হচ্ছে। এর মধ্যে একটি স্টুডিও সরকারের শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর। এ ছাড়া ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এবং মোবাইল ফোন অপারেটর রবির স্টুডিওতে এসব ক্লাস রেকর্ডিং করা হচ্ছে। আগামী মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার পরীক্ষামূলকভাবে এসব ক্লাস প্রচার করা হবে। এরপর নিয়মিতভাবে এটি চলবে। আগামী সপ্তাহ থেকেই নিয়মিতভাবে এভাবে ক্লাস হবে।

প্রাথমিক স্তরের শিশুদের জন্যও বিকল্প উপায়ে ক্লাস নেয়ার পরিকল্পনা চলছে। এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ বলেছেন, মাধ্যমিকের মতো বিকল্প উপায়ে কীভাবে ক্লাস বা পড়াশোনা চালু রাখা যায়, সে বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন। টিভির মাধ্যমে ক্লাস প্রচারের বিষয়টিও তাদের চিন্তাভাবনায় আছে। রোববার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিবের সঙ্গে বৈঠক করে এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করা হবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে এই বন্ধের সময়ে কোনো শিক্ষার্থীকে অযথা বাইরে ঘোরাফেরা না করতে এবং বাড়িতে নিরাপদে রাখার জন্য অভিভাবকদের নির্দেশনা দিতে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ করেছে।

আমাদের বাণী ডট কম/২২ মার্চ ২০২০/আরসি 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।