মাসুদ বাবু,  লালমনিরহাট জেলা সংবাদদাতা;  কৃষক দীপক চন্দ্র রায় কৃষি বিভাগের দেয়া ব্রি ধান ৮৪ জাতের বীজ নিয়ে সাড়ে ৪ বিঘা জমিতে রোপন করেন। চারা রোপনের পর ধানে দুধ চাপার আগ পর্যন্ত সব কিছুই ঠিক ছিল। কিন্তু ধান কলাপাঁকা হয়ে আসলে কৃষক লক্ষ্য করেন ধানে পরিপক্ক দানা নেই, আছে চিটা। একই অবস্থা অপর কৃষক সফিউদ্দিন ও আলিমের ক্ষেতে।

  • ভুক্তভোগী কৃষক দীপক কুমার, সফিউদ্দিন ও আলিম লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা ইউনিয়নের বাসিন্দা। দীপক কুমার ও সফিউদ্দিনের বাড়ি ওই ইউনিয়নের নবীনগর এলাকায় আর আলিমের বাড়ি জমগ্রাম এলাকায়। এরা ৩ জনই ওই উপজেলার কৃষি বিভাগের প্রদর্শনী ধান চাষের সুবিধাভোগী কৃষক।

তবে কৃষিবিদরা বলছে, ব্রি-৮৪ জাতের ধান একেবারে নতুন। নতুন জাতের ধান স্থানীয় মাটি কার্যকর কিনা তা পরীক্ষামূলক চাষ করে কৃষক পর্যায়ে রোপনের জন্য বিতরণ করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু কৃষি বিভাগ তা না করে হয়তো বা সরাসরি চাষি পর্যায়ে বিতরণ করেছেন। ৮৪ জাতের ধানটি এখানকার মাটি ও আবহাওয়া উপযোগী নাও হতে পারে। এছাড়া বালাই নাশক ঔষুধও ঠিক ভাবে প্রয়োগ না করায় চাষিদের ধানে চিটা হয়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে।

  • জানা গেছে, ওই উপজেলার ২০১৯-২০ অর্থ বছরের রাজস্ব খাতের অর্থায়নে কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ২০ সালের ফেব্রয়ারি মাসের ২৬ তারিখ কৃষক দীপক কুমার তাঁর বাড়ির পাশে সাড়ে চার বিঘা জমিতে ব্রি ধান-৮৪ জাত লাগিয়ে ছিলেন। ধান কলাপাঁকা হয়ে আসলে কৃষক লক্ষ্য করেন ধানে পরিপক্ক দানা নেই, আছে চিটা। একই অবস্থা অপর কৃষকদের ক্ষেতেরও। এরপর ৩ জনই কৃষি অফিসের সরণাপন্ন হন। কৃষি অফিস দফায় দফায় ওই ৩ কৃষককে বিভিন্ন ধরণের ওষুধ প্রয়োগ করার পরামর্শ দেন। আশায় বুক বেঁধে দফায় দফায় বাজার থেকে ওষুধ কিনে চিটাধানে প্রয়োগ করতে থাকেন তারা, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোন ভাল ফল না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন। প্রান্তিক ঐ কৃষকদের কাছে এটা অনেকটা মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’র মতো হয়ে দাঁড়ায়। সর্বস্বান্ত কৃষক আশার সফল ঘরে না তুলে ক্ষেতেই রেখে দেন। তাদের ভাষায় ‘ মড়া টেনে লাভ কী ?’

কৃষক দীপক কুমার বললে, আমি ও অপর দুই কৃষক পাটগ্রাম উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় অফিসের সরবরাহকৃত বীজে ব্রি ধান-৮৪ জাতের প্রদর্শনী ক্ষেত করি। ধানে দুধচাপার আগ পর্যন্ত সব ঠিকঠাক ছিল। ধানে পাঁক আসলে লক্ষ্য করি দানা পরিপক্ক হচ্ছে না, কিছুদিন অপেক্ষা করার পর বুঝতে পারি ধানের দানা চিটায় পরিণত হতে চলছে। এরপর কৃষি অফিসের সরণাপন্ন হই। কৃষি অফিস দফায় দফায় ওষুধ প্রয়োগের পরামর্শ দেন। আশায় বুক বেঁধে টাকা খরচ করে ওষুধ ছিটাই। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। এই ক্ষেত করতে গিয়ে আমার খরচ হয় ৪০ হাজার টাকা। সাথে একটি মৌসুমের আবাদ। তাতে আমার মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে লক্ষাধিক টাকা। আমাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ৩ জনকেই কৃষিতে প্রনোদনা দিতে কৃষি অফিসের কাছে জোর আবেদনও করছি ।

  • কৃষক সফিউদ্দিন বলেন, আমি কৃষি অফিসের সহযোগিতায় দুই বিঘা ব্রি ধান-৮৪ জাত আবাদ করেছিলাম। আমার সবটাই চিটা পড়েছে। এতে আমার মোট ক্ষতির পরিমাণ ৫০হাজার টাকা।

কৃষক আলিম বলেন, আমি দেড় বিঘা জমিতে কৃষি অফিসের দেওয়া বীজে ধান করেছিলাম। আমার ধান ক্ষেতের সবটাই চিটা পড়েছে। এতে আমার মোট ক্ষতি ৪০ হাজার টাকা। আমি কৃষি অফিসের কাছে আবেদন করছি আমার ক্ষতি পুষিয়ে দিতে।

  • পাটগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল গাফফার বলেন, ওই ৩ কৃষক আমাদের অফিসের সহযোগিতায় ব্রি ধান-৮৪ জাত প্রদর্শনী করে ছিলেন। এ জাতের বীজটি ছিল নতুন। আমাদের কোন গাফিলতি ছিল না। বৈরি আবহাওয়া ও পরিচর্যায় ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থাপনার কারণে ধানের চিটা হতে পারে। ওই কৃষকদের ক্ষতিপূরন পুসিয়ে দিতে প্রনোদনায় আওতায় নিয়ে আসার জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছি।

আমাদের বাণী ডট কম/০৮ জুন ২০২০/সিসিপি

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।