ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকা; সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ  আদালতে নিষেধাজ্ঞা থাকায় ৪০ জেলার নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে দেশের ২১ জেলায় কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। এদিকে ৪০ জেলায় নিয়োগ কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা থাকায় হতাশায় আছেন চূড়ান্ত নিয়োগ সুপারিশ পাওয়া প্রার্থীরা। বিভিন্ন ভাবে তারা নিয়োগ দিতে আন্দোলন করে আসছেন এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও রয়েছেন সচল। স্থগিত জেলাসমূহে দ্রুত পদায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী বরাবর আকুল আবেদনও জানিয়েছেন অনেকে। নিয়োগ দিতে নিয়োগ বঞ্চিত শিক্ষকবৃন্দদের লেখা প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠিতে আমাদের বাণী ডট কম এর পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হল;

বরাবর

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী

বিষয়: স্থগিত জেলাসমূহের দ্রুত পদায়নের আবেদন।

জনাব, সবিনয় বিনীত নিবেদন এই যে, আমরা সদ্য উত্তীর্ণ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ-২০১৮ এর পদায়নের দ্বারপ্রান্তে দাড়িয়ে থাকা নিয়োগ বঞ্চিত অসংখ্য শিক্ষকবৃন্দ। ২৪শে ডিসেম্বর ২০১৯ ইং ১৮১৪৭ জন প্রার্থী প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হই। গত ১৬ ই ফেব্রুয়ারি ২০২০ ইং আমাদের ৬১ জেলার মোট ১৮১৪৭ জন শিক্ষকদের একসাথে জয়েন এবং পদায়নের কথা থাকলেও মাত্র ২১ জেলার শিক্ষকরা নিয়োগ পেয়েছে এবং ৪০ জেলার হাজার হাজার নিয়োগপত্র হাতে পাওয়া শিক্ষকরা নিয়োগ পায়নি। কেন যথাসময়ে নিয়োগ পায়নি সেটার কারণ হয়তো আপনার অজানা নয়। কোন নিয়োগের বিরুদ্ধে রীট করার অধিকার হয়তো সাধারণ মানুষকে আদালত দিয়েছে কিন্তু অহেতুক, রীট ব্যবসায়ীদের প্রবঞ্চনায় পড়ে কিংবা সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে কেউ বা কাহারা রীট করলে তার জন্য হাজার হাজার চাকরি পাওয়া শিক্ষকগুলো অনিশ্চয়তায় দিন কাটাবে?

১৬ই ফেব্রুয়ারি ২০২০ ইং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদানের আশায় আমার মতো বেশিরভাগ শিক্ষকগুলো পূর্বের চাকরি ছেড়ে বেকার নামে বিষ ফোঁড়া বয়ে নিয়ে অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছে। একসাথে নিয়োগের জন্য মনোনীত হয়ে ২১ জেলার শিক্ষক আজ সরকারি চাকরিজীবী আর আমরা ৪০ জেলার শিক্ষকগন আজ ‘শিক্ষক পদপ্রার্থী’ পোস্টার হয়ে অজানা শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে। কোন ফলাফল কিংবা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোন ত্রুটি পেলে হয়তো নিয়োগ বঞ্চিতদের রীট করার অধিকার রয়েছে। তবে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় চুড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ নিয়োগ প্রার্থীদের নিয়োগে বিলম্ব এবং বাধা প্রদানের কোন অধিকার নেই। সচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়াকে বাঁধাগ্রস্থ অহেতুক খামখেয়ালি রীট আদালত গ্রহণ করে কিভাবে সেটা নিয়েও অসংখ্য প্রশ্ন আমাদের মনে জেগে উঠেছে। রীটকারীদের মধ্যে একই ব্যক্তি একাধিক জেলায় রীট করেছে। এটা কিভাবে সম্ভব হলো?

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের দাবি বুয়েটের মাধ্যমে কম্পিটারের সাহায্যে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে সকল কোটা অনুসরণ করেই নিয়োগ দিয়েছে। অধিদপ্তর ইতঃপূর্বে তাদের কোটা অনুসরণ করে নিয়োগের ব্যাখ্যা তাদের ওয়েবসাইটে দিয়েছে। অহেতুক খামখেয়ালি রীট গ্রহণ করে আমাদের সরকারি চাকরি পাওয়ার পরেও বেকার বানিয়ে রাখার অধিকার আদালতের আছে কী?

অতএব, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট আমাদের আকুল আবেদন, ৪০টি স্থগিত জেলার চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ নিয়োগ বঞ্চিত হাজার হাজার শিক্ষকদের অনতিবিলম্বে নিয়োগদানে আদালতকে তাগিদ দিতে জোরালো অনুরোধ জানাচ্ছি।

নিবেদক

নিয়োগ বঞ্চিত শিক্ষকবৃন্দ

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। পরে ওই বছরের ১ থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশ থেকে ২৪ লাখ পাঁচজন প্রার্থী আবেদন করেন। গত বছর সারাদেশে প্রথম ধাপে ২৪ মে, দ্বিতীয় ধাপে ৩১ মে, তৃতীয় ধাপে ২১ জুন এবং চতুর্থ ধাপে ২৮ জুন লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

সেপ্টেম্বরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ লিখিত পরীক্ষায় ৫৫ হাজার ২৯৫ জন পাস করেন। গত ৬ অক্টোবর থেকে নিয়োগ পরীক্ষার মৌখিক পরীক্ষা শুরু হয়। মাসব্যাপী সারাদেশের সব জেলায় মৌখিক পরীক্ষা আয়োজন করা হয়। সবশেষে গত ২৪ ডিসেম্বর এ পরীক্ষায় ৬১ জেলায় ১৮ হাজার ১৪৭ জনকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করে ফলাফল প্রকাশ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।