মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষাব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আনছে সরকার। কমিয়ে আনা হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি সাপেক্ষে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে পৌনে দুই লাখ শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ অনুমোদন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

বর্তমানে দেশে ২৬ হাজার ৬৮ এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা রয়েছে। এতে শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ। এর বাইরে এমপিওভুক্ত কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে প্রায় দুই হাজার। সরকারের নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৩ সালের মধ্যে স্কুল, কলেজ ও মাদরাসায় শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা হবে প্রায় সাত লাখ।

এসব বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদ বলেন, ‘সরকারের এসডিজি-৪ অর্জনের লক্ষ্যে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতেই বিপুলসংখ্যক শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বেসরকারি স্কুল-কলেজের এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো ২০১৮ অনুসারে বর্ধিত ২০টি পদে নিয়োগের আদেশ জারি করা হয়েছে গত ৩০ মে। এতে জনবল বাড়বে নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানে সাতজন শিক্ষক ও তিনজন কর্মচারী, মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানে পাঁচজন শিক্ষক ও একজন কর্মচারী এবং কলেজ পর্যায়ে ছয়জন।

জানা যায়, নিম্ন মাধ্যমিকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ ও এমপিও পাবেন ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকেই। নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের ভৌত বিজ্ঞান এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের ব্যবসায় শিক্ষার সহকারী শিক্ষক ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে নিয়োগ ও এমপিও পাবেন। নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায়ের সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি) এবং মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায়ের কম্পিউটার ল্যাব সহকারী নিয়োগ দেওয়া যাবে ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে। নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায়ের সহকারী শিক্ষক (বাংলা), পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের নৈশ প্রহরী নিয়োগ দেওয়া যাবে ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে। নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের চারু ও কারুকলা বিষয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া যাবে ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে। আর কলেজ পর্যায়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ের প্রদর্শক এবং ল্যাব সহকারী নিয়োগ ও এমপিও পাবেন ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে। অফিস সহকারী-কাম-কম্পিউটার অপারেটর এবং ল্যাব সহকারী (দ্বিতীয় পদ) নিয়োগ দেওয়া যাবে ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে। কলেজের প্রদর্শক (চতুর্থ পদ) ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে, ল্যাব সহকারী (তৃতীয় পদ) ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে এবং ল্যাব সহকারী (চতুর্থ পদ) ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে নিয়োগ ও এমপিও পাবেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, যে পদে নিয়োগে যে অর্থবছর উল্লেখ করা হয়েছে, সে সময়েই নিয়োগ হতে হবে। অন্যথায় এমপিও দেওয়া হবে না। আর যেসব পদে এনটিআরসিএর মাধ্যমে নিয়োগের সুযোগ রয়েছে সেসব পদে তারাই নিয়োগের সুপারিশ করবে।

জানা যায়, আগের এমপিও এবং জনবল সম্পর্কিত নীতিমালা অনুযায়ী, নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাঁচজন শিক্ষক ও তিনজন কর্মচারীর পদ ছিল। এখন ১২ জন শিক্ষক ও ছয়জন কর্মচারীর পদ তৈরি করা হয়েছে। সেই হিসাবে তিন হাজার ৩২৬ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নতুন করে ২৩ হজার ২৮২ জন শিক্ষক এবং ৯ হাজার ৯৭৮ জন কর্মচারী নিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হলো।

মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আগে সাধারণত শিক্ষক ১১ এবং কর্মচারীর পদ ছিল পাঁচটি। এবার বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ১৫ জন শিক্ষক, একজন সহকারী গ্রন্থাগারিক ও ছয়জন কর্মচারীতে। অতিরিক্ত শ্রেণি শাখা ছাড়াই তারা ২২ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দিতে পারবে। সেই হিসাবে ১২ হাজার ৭৭৩ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৬৩ হাজার ৮৫৬ জন শিক্ষক এবং ১২ হাজার ৭৭৩ জন কর্মচারী নিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হলো। একইভাবে পাঁচ হাজার ৩৭১ দাখিল মাদরাসায় ২৬ হাজার ৮৫৫ জন শিক্ষক এবং পাঁচ হাজার ৩৭১ জন কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া যাবে।

কলেজে শিক্ষক, প্রদর্শক ও কর্মচারীর সংখ্যা ২৪ থেকে বাড়িয়ে ৩০ করা হয়েছে। সেই হিসাবে দুই হাজার ৩৬৩ সাধারণ কলেজে ১৪ হাজার ১৭৮ এবং দুই হাজার ২৩৫ আলিম পর্যায়ের মাদরাসায় ১৩ হাজার ৪১০ জন অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ দেওয়া যাবে। অর্থাৎ স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা মিলিয়ে নতুন এক লাখ ৬৯ হাজার ৭০৩ জন নতুন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হলো। সব পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষার্থী সংখ্যা বেশি হলে অতিরিক্ত শ্রেণি শাখার নিয়ম অনুযায়ী, অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ ও এমপিও প্রদানেরও সুযোগ রাখা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।