জয়পুরহাট জেলা শহর ও বিভিন্ন উপজেলা শহরে যারা ঈদের কেনাকাটা করতে আসেন, তাদের একটি বড় অংশই গ্রামের বাসিন্দা। ফসলের কেনাবেচার ওপর তাদের কেনাকাটা নির্ভর করে। কিন্তু এবার রমজানের শুরুতে ধান উঠলেও দাম কম হওয়ায় তারা সাধ্য অনুযায়ী কেনাকাটা করতে পারছেন না।

জয়পুরহাট জেলার সাধারন কৃষকদের আশা ছিল বোর ধান বিক্রি করে পরিবারের সবাইকে ঈদে নতুন পোশাক কিনে দেবেন কৃষকরা। ধুমধাম করে ঈদ করার ইচ্ছা ছিল কৃষকদের। কিন্তু কষ্টের ফসলের ন্যায্যমুল্য না পেয়ে আসন্ন ঈদ আনন্দও নিরানন্দে পরিনত হয়েছে এ জেলার কৃষকদের।

জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলার রুকিন্দীপুর ইউনিয়নের কৃষক বেলাল সরদার বলেন, আমরা জানি বর্তমানে আমাদের মতো কৃষকের কোন মূল্য নাই। এজন্য আমাদের আবাদী ফসলেরও কোন দাম নাই। মা, স্ত্রী সন্তান, জামায়,ছেলের বৌ, নাতি নাতনী মিলে ৮ সদস্যের পরিবার তার। তার ইচ্ছে ছিল এবার ঈদে তার আবাদী সোনালী ফসল ধান বিক্রি করে পরিবারের সকলকে নিয়ে ভালভাবে ঈদ উদযাপন করবেন। কিন্তু ধানের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় তার সে আশা পন্ড হয়েছে । তিনি যতগুলো ধান পেয়েছেন সব ধান বিক্রি করেও ঈদের জন্য নতুন কাপড় কেনা হচ্ছে না তার। আর তাই যদি সে করে, তাহলে পরিবারের খাদ্যের যোগান আসবে কিভাবে.? এই বিষয়টাও তাকে ভাবিয়ে তুলেছে। শুধু স্ত্রীর জন্যই একটি শাড়ি কিনতে তার ধান বিক্রি করতে হচ্ছে দেড় থেকে দুই মন।

বেলাল সরদার আরো জানান, কঠোর পরিশ্রম করে এবারে তিনি ৪০শতাংশ জমিতে বোরো চাষ করেছিলেন। এবার আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ফলনও বাম্পার হয়েছে। আর মাত্র কয়েকদিন পর ঈদ। ঈদ আসার আগেই ধান ঘরে আসার মহাখুশি হয়েছিলেন তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু সেই ধান ঘরে উঠার আগেই ধানের বাজার মুল্যের দরপতন হওয়ায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। বর্তমানে জয়পুরহাটে প্রতি মন ধান বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা দরে। এই দরে ধান বিক্রি করলে মুলধনের অর্ধেক পাওয়া যাবে না। তাই ঈদ আনন্দ তো দুরের কথা ধানের উৎপাদন খরচও উঠছে না। এই জেলার কৃষকদের ধান উৎপাদনে বিঘা প্রতি লোকসান গুনতে হচ্ছে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। যে কারনে আনন্দের ঈদ নিরানন্দে পরিনত হয়েছে তার পরিবারে।

শুধু বেলাল সরদার নয়, ঈদের আনন্দ মলিন হতে বসেছে জয়পুরহাট জেলার প্রতিটি কৃষক পরিবারের। এ বছর লোকসানের মুখে পড়ে কৃষিকাজে আস্থা হারাচ্ছেন জেলার হাজার ও কৃষক। তাই লোকসান থেকে বাঁচতে সরকারের কাছে ধানের ন্যায্য মুল্যের দাবী জানিয়েছেন সাধারন কৃষকরা।সরোজমিনে জয়পুরহাট সদর ও আক্কেলপুর উপজেলার বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা যায় ক্রেতা সমাগম খুবই কম। দোকানীদের সাথে কথা বলে জানাা যায় ধানের দাম কম হওয়াই এবং প্রচুন্ড গরমের কারনে ক্রেতা সমাগম তেমন নেই বললেই চলে । আশরাফুল ইসলাম নামে এক দোকানী বলেন প্রতিবছর ১৫ রমজান এর পরেই ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্য করা যায় কিন্তু এবার ২০ রমজানের পরেও ক্রেতাদের ভিড় নেই। কিন্ত আরো বলেন যে শুধু সকাল ১০ টা হতে বেলা ১২ টা, বিকেল ৪টা হতে বিকেল ৫ টা এবং ইফতারের পর একটু ক্রেতাদের ভির লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার কারণে কৃষকরা কেনাকাটায় কম আগ্রহী কৃষকরা যেমন লোকসানের মুখে পড়ছে আমরাও তেমন লোকসানের মুখে পড়তে পারি ক্রেতা সমাগম না হলে। সরজমিনে দেখা যায় জেলা ও উপজেলার মার্কেট গুলোতে একই অবস্থা।

তারপরে ও জেলা এবং উপজেলার মার্কেট গুলোতে রয়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।