জিকরুল হক, উত্তরাঞ্চল সংবাদদাতা;  উত্তরাঞ্চলে গরুর লাম্পি স্কিন রোগ দিন দিন ছড়িয়ে পড়ছে। আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়াতে যাচ্ছে। রংপুর বিভাগের আট জেলার ৫৮টি উপজেলার প্রায় নয় হাজার ছোট, মাঝারি ও বড় খামার রয়েছে। প্রতিটি খামারে ছয়টি থেকে ২৫টি পর্যন্ত গরুর আছে। সব মিলে গরুর সংখ্যা প্রায় ৯০ লাখ বলে জানা গেছে। আর এক মাস পরেই কোরবানী ঈদ।

চাষিরা ঈদ-উল-আজহাকে টার্গেট করে গরু পুষছে। করছে গরুর যত্ন আত্তি। কিন্তু লাম্পি স্কিন রোগ ছড়িয়ে পড়ায় খামারিরা বড়ই দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। ইতোমধ্যে দিনাজপুরের ১৩টি উপজেলার ১০২টি ইউনিয়নের মধ্যে ২২টি ইউনিয়নকে লাম্পি স্কিন রোগের রেড জোন হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। দিনাজপুর প্রাণি সম্পদ দপ্তর বলছে তারা তিন সদস্যের পর্যবেক্ষণ টিম গঠন করেছেন। বেশি আক্রান্ত ইউনিয়নগুলোতে ২২টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। আক্রান্ত গরুদের সুস্থ্য করতে দেয়া হচ্ছে চিকিৎসা। সাধারণকে সচেতন করতে বিতরণ করা হচ্ছে প্রচারপত্র (লিফলেট)।

প্রাণি সম্পদ দপ্তর কাগজ কলমে ঢাকঢোল পেটালেও বাস্তবে তেমন কিছু নজরে আসছে না। ইতোমধ্যে প্রায় তিন হাজার গরু ও বাছুর মারা গেছে বলে খামারিরা জানিয়েছে। প্রাণি সম্পদ দপ্তরের রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, লাম্পি স্কিন রোগের গরু প্রথমে জ্বরে আক্রান্ত হয়। এরপর চামড়ায় বড় ধরনের ফোসকা ওঠে। এসব ফোসকা ফুটে গিয়ে গরুর চামড়ায় ঘা হয়। একই কথা বলেন দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার খামারি বেলাল হোসেন। তিনি জানান, গরুর লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হলে চামড়া শ্রীহীন হয়ে পড়ে। এসব গরুর ক্রেতা পাওয়া যায় না। ক্রেতারা গরুর চামড়া দেখে এবং স্বাস্থ্য। কিন্তু লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গরু ১৫ থেকে ২৫ দিন পর্যন্ত ঠিকভাবে খেতে পারে না। এতে করে গরু দুর্বল হয় এবং স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ে। গরুর গায়ে মাংস না থাকলে ক্রেতার নজর কাড়ে না। তাই হাটে গরু বিক্রি করে মুনাফা মেলাতো দূরের কথা আসল পুঁজি উঠে আসবে কিনা সন্দেহ। এ কথায় সহমত পোষণ করেন নীলফামারীর খামারি আব্দুর রহিম।

গরুর এই মহামারি থেকে পরিত্রাণ পেতে ও গো সম্পদ রক্ষা করার নিমিত্তে গত বুধবার মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াসি উদ্দিন রংপুরের অতি আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। তিনি সাংবাদিকদের মুঠোফোনে জানান, খুব দ্রুত রোগ নিয়ন্ত্রণে আসবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা মিলছে ভিন্ন চিত্র। দিন দিন রোগাক্রান্ত গরুর সংখ্যা বাড়ছে। সরকারিভাবে চিকিৎসায় তেমন সুযোগ মিলছে না। ফলে খামারিরা নিজ উদ্যোগে প্রাইভেট পশু চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা করাচ্ছেন।

সৈয়দপুরের খামারি ইকবাল হোসেন বলেন এমন অবস্থা থাকলে ৫০ হাজার টাকার গরু ২৫ হাজার টাকায়েও বিক্রি করা সম্ভব হবে না। এতে করে গোটা রংপুর বিভাগের খামারিরা কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির শিকার হবেন। তার মতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ করোনা আর অকাল বন্যা দুইয়ে মিলে খামারিদের ত্রাহি অবস্থা সৃষ্টি করেছে।

কথা হয় মুঠোফোনে প্রাণি সম্পদ দপ্তরের রংপুর বিভাগীয় অফিসের উপ-পরিচালক ডা. হাবিবুল হকের সঙ্গে। তিনি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন বর্তমানে নিয়ন্ত্রণের পথে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসবে।

আমাদের বাণী ডট কম/০১ জুলাই  ২০২০/পিপিএম

সৈয়দপুরের বিজ্ঞাপন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।