কক্সবাজার সংবাদদাতা; দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় গত মার্চ থেকে কক্সবাজারের পর্যটন বন্ধ। গেল চার মাসে এ খাতে প্রায় হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
দেশের সবচেয়ে বড় পর্যটন এলাকা কক্সবাজারে গত চার মাস ধরে ৪৭০টি হোটেল-মোটেল, দুই হাজারের বেশি খাবারের দোকান, বার্মিজ মার্কেটসহ পর্যটন নির্ভর পাঁচ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। কর্মহীন হয়ে পড়েছে আবাসিক হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্টের প্রায় ৪০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দেড় শতাধিক ট্যুর অপারেটরসহ দেড় লক্ষাধিক মানুষ।
এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঈদুল আজহার পর পর্যটন সংশ্লিষ্ট সকল কার্যক্রম শর্ত সাপেক্ষে খুলে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এতে আশান্বিত হয়েছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
দেশের অন্যান্য খাতের মতো পর্যটন খাতের ওপরও মারাত্মকভাবে প্রভাব ফেলেছে বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস। গত চার মাস ধরে বন্ধ রয়েছে পর্যটনসহ সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে করোনাভাইরাসের প্রভাবে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে নেমেছে ধস।
কক্সবাজার আবাসিক হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম জানান, গত ৪ মাস পর্যটকশূন্য হয়ে পড়ে আছে পর্যটন নগরী কক্সবাজার। সেই সাথে বন্ধ রয়েছে অন্যান্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এতে ক্ষতি হয়েছে হাজার কোটি টাকা।
ঈদের পরে খুলে না দিলে সামনে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে মালিক সমিতির নেতা কাশেম বলেন, মহামারি পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের ব্যাংক ঋণ বেড়েছে। চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথমবারের মতো করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার ১০ দিন পর দেশে করোনায় প্রথম মৃত্যুর দিনে কক্সবাজারে পর্যটক আগমন বন্ধ করে দেয়া হয়।
পরবর্তীতে ধীরে ধীরে জনশূন্য এলাকায় পরিণত হয় পর্যটন নগরী কক্সবাজার। সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ থাকায় চার মাস আয়-রোজগার শূন্যের কোটায়। কোটি কোটি টাকার আবাসন প্রতিষ্ঠান নিয়ে চরম বেকায়দায় রয়েছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আয়াছুর রহমান জানান, জেলার অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়েছে করোনাভাইরাস। পর্যটনের সাথে বার্মিজ, ঝিনুক, রেস্তোরাঁ, শুকনো খাবার, পান-সিগারেটসহ সংশ্লিষ্ট প্রায় অর্ধশত ক্ষুদ্র ব্যবসা ও নানা ধরনের পরিবহন যুক্ত। এসব ব্যবসার সাথে যুক্ত প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। ব্যবসা বন্ধ থাকায় এরা সবাই বেকার হয়েছেন। এদের ঘরের চুলায় ঠিকমতো ভাতের হাঁড়ি ওঠে না।
সমুদ্র পাড়ের হোটেল কল্লোলের স্বত্তাধিকারি মো. আশরাফ জানান, হোটেল কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ছাড়াও বিদ্যুত বিল ও আনুষঙ্গিক খরচ লাখ লাখ টাকার মতো। ব্যবসা বন্ধ থাকায় ঝুঁকি নিয়ে গত ৪ মাস ভাড়া ও অন্য ব্যয় পরিশোধ করতে গিয়ে ধারদেনায় পড়তে হয়েছে।
কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের (টুয়াক) সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, দীর্ঘ ৪ মাস পর্যটন ব্যবসায়ীরা বেকার হয়ে চরম দুর্ভোগে দিনাতিপাত করছেন। করোনার কারণে এসব ব্যবসা ৪ মাসেরও অধিক সময় বন্ধ। ফলে তাদের ব্যবসার মূলধন খাওয়া শেষ।
এখন অধিকাংশ পর্যটন ব্যবসায়ী ধারদেনা করে সংসার চালাচ্ছেন। কোরবানি ঈদের পর পর্যটন ব্যবসা খুলে দেয়া হলে পর্যটন ব্যবসায়ীরা প্রাণে বাঁচবে। তারপরও সহজে এত ক্ষতি মিটানো সম্ভব নয়, যোগ করেন তিনি।
জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, আগামী ঈদুল আজহার পর কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসা বাণিজ্য কঠিন শর্ত সাপেক্ষে খুলে দেয়া হবে। আবাসিক হোটেল, রেস্টুরেন্টসহ পর্যটন শিল্প সংশ্লিষ্ট যে সকল প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা থাকবে এবং স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলবে শুধু সেসব প্রতিষ্ঠানকে খোলার অনুমতি দেয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে বন্ধ পর্যটনে অর্থনীতির চরম ক্ষতি হয়েছে এটা ঠিক। কোরবানির ঈদের পরে খুলে দেয়া হলে ব্যবসায় গতিশীলতা আসবে।
আমাদের বাণী ডট কম/২৬ জুলাই ২০২০/পিপিএম