অসুস্থতার কারণে দরখাস্ত দিয়ে ছুটি কাটাচ্ছিলেন রাজধানীর শাহীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পিংকি ভৌমিক। কিন্তু কয়েকদিন পরেই তাকে অনুপস্থিত বলে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তারপর সাড়ে-তিন মাসের বেশি সময় কেটে গেছে। নিজের পক্ষে যাবতীয় তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করেও কোনও সমাধান পাননি এই ভুক্তভোগী শিক্ষক।

শিক্ষক পিংকি ভৌমিক জানান, অসুস্থতার কারণে প্রধান শিক্ষক মাহফুজা আহম্মদের কাছে ছুটি চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ছুটি দেওয়া হয়নি। এরপর স্বামীর মাধ্যমে কুরিয়ার করে ছুটির দরখাস্ত পাঠান উপজেলা শিক্ষা অফিসে। ৫ ফেব্রুয়ারি পাঠানো এই কুরিয়ার ৭ তারিখে রিসিভ করা হলেও ১০ ফেব্রুয়ারি সাময়িক বরখাস্ত করা হয় তাকে।

স্কুল সূত্রে জানা যায়, ৯ ফেব্রুয়ারি শাহীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনে যান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। সেসময় হাজিরা খাতায় সহকারী শিক্ষক পিংকি ভৌমিকের স্বাক্ষর না দেখে তার বিষয়ে জানতে চান। স্কুল থেকে জানানো হয়, উপজেলা শিক্ষা অফিসে আবেদন দিয়ে ছুটি নিয়েছেন তিনি। এরপর শিক্ষা অফিসে খোঁজ নেন প্রতিমন্ত্রী। তবে উপজেলা শিক্ষা অফিসার খালেদা বেগম প্রতিমন্ত্রীকে জানান, পিংকির ছুটির আবেদন নেই, তিনি অনুপস্থিত। এরপর তার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন প্রতিমন্ত্রী। সেই অনুসারে, স্কুলে অনুপস্থিত থাকার কারণ জানাতে ১০ ফেব্রুয়ারি পিংকিকে তিন দিনের নোটিশ দেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার। তবে সেদিনই এই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করেন জেলা শিক্ষা অফিসার আলেয়া ফেরদৌসী শিখা।

তবে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ থেকে অব্যাহতি চেয়ে জেলা শিক্ষা অফিসে আবেদন করেন শিক্ষক পিংকি ভৌমিক। এরমধ্যেই মোহাম্মদপুর উপজেলার শিক্ষা অফিসার খালেদা বেগমের বদলির আদেশ হয়। নতুন শিক্ষা অফিসার হিসেবে যোগদান করেন জেসমিন আক্তার। তিনি পিংকি ভৌমিকের কাছ থেকে নোটিশের জবাব পেয়ে পুরো বিষয়টি জেলা শিক্ষা অফিসকে অবহিত করে প্রতিবেদন দেন। সেখানে উল্লেখ করা হয়, সহকারী শিক্ষক পিংকির ছুটির আবেদন ৭ ফেব্রুয়ারি রিসিভ হয়েছে।

এই প্রসঙ্গে উপজেলার শিক্ষা অফিসার জেসমিন আক্তার বলেন, ‘নথিপত্র দেখে জানতে পেরেছি, ৭ ফেব্রুয়ারি কুরিয়ারে পাওয়া ছুটির আবেদন রিসিভ করা হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী মহোদয় বিদ্যালয় ভিজিটি করেছেন ৯ ফেব্রুয়ারি। তখন উপজেলা শিক্ষা অফিসে ওই সহকারী শিক্ষকের ছুটির আবেদন জমা ছিল। সব তথ্য জানিয়ে জেলা শিক্ষা অফিসে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কেন তার সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা হচ্ছে না, তা আমি জানি না।’

তবে প্রতিমন্ত্রীর কাছে ওই শিক্ষকের ছুটির ব্যাপারে সঠিক তথ্য না দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তৎকালীন উপজেলা শিক্ষা অফিসার খালেদা বেগম বলেন, ‘আমি ট্রেনিংয়ে ছিলাম। কখন অফিসে ডকেট হয়েছে, তা আমি জানি না। আমি যা জানি, তাই জানিয়েছি।’

এই ব্যাপারে জানার জন্য শাহীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহফুজা আহম্মদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। মেসেজেরও উত্তর দেননি।

শিক্ষক পিংকি ভৌমিকের সাময়িক বরখাস্তের বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার আলেয়া ফেরদৌসী শিখা বলেন, ‘ছু্টির আবেদনের ব্যাপারে প্রতিমন্ত্রীকে সঠিকভাবে জানাতে পারেনি উপজেলা শিক্ষা অফিস। তবে চিঠি চালাচালি হচ্ছে। শিগগিরই সাময়িক বরখাস্ত থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।’

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।