নিজস্ব সংবাদদতা, টাঙ্গাইল; সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ ২০১৮ পরীক্ষায় নকলের অপরাধে সাজা পাওয়া একজনকে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।সাজা প্রাপ্ত নিয়োগ পাওয়া ওই শিক্ষক জেলার মির্জাপুর উপজেলার উয়ার্শী ইউনিয়নের মৈশামুড়া গ্রামের নাজিম উদ্দিনের ছেলে মো. রাজিব হোসেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজাপ্রাপ্ত রাজিব হোসেন তখন জানিয়েছিলেন তিনি নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেননি।
সুত্রে জানা গেছে , রাজিব হোসেন মির্জাপুর সদরের সরকারি এস কে পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক ছিলেন। গত বছরের ২৪ মে টাঙ্গাইল জেলায় সরকারি প্রাথমিক সহকারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার দ্বিতীয় পর্বে অংশ নেন রাজিব হোসেন যার রোল নাম্বার ২৩১৯০৭২। এতে তিনি সরকারি পরীক্ষার নিয়ম অমান্য করে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নিজেও উত্তর লিখেন এবং পরীক্ষায় অংশ নেওয়া তার স্ত্রী শান্তাসহ কয়েকজন পরীক্ষার্থীকে ওই উত্তর সরবরাহ করেন। পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে এই অসদুপায়ের ঘটনাটি কর্তৃপক্ষের নজরে আসে এবং নকলপ্রাপ্ত কয়েকজনকে আটক করেন। কিন্তু পরীক্ষা শেষে রাজিব, স্ত্রী শান্তা এবং বন্ধু সেলিম মির্জাপুর চলে আসেন। পরে আটককৃতদের দেওয়া তথ্যে এর মূল হোতা হিসেবে রাজিব হোসেন ও তার আরেক বন্ধু মির্জাপুর উপজেলার আনাইতারা ইউনিয়নের আটিয়া মামুদপুর গ্রামের সোনা মিয়ার ছেলে সেলিম রেজার নাম বেরিয়ে আসে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ওইদিন সন্ধ্যায় টাঙ্গাইলের গোয়েন্দা পুলিশ দিয়ে তাদেরকে মির্জাপুর থেকে গ্রেপ্তার করান। গোয়েন্দা পুলিশ টাঙ্গাইলের নেজারত ডেপুটি কালেকটর (এনডিসি) ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক মো. রোকনুজ জামানের আদালতে তাদেরকে হাজির করলে তারা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। পরে তাদের নামে দুটি মামলা হয়। এ ঘটনায় বিচারক তাদের ১৮৬০ এর ১৮৮ ধারায় ৭দিনের বিনাশ্রমে কারাদণ্ড প্রদান করেন বলে জানিয়েছেন আদালতের পেশকার মো. মিজানুর রহমান।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাথে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, এর আগে রাজিব হোসেন ওই নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেননি বলে জানিয়েছিলেন। কারণ স্বীকার করলে তার ফলাফল প্রকাশ হতো না।
এদিকে নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত রাজিব হোসেন লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ায় নিয়োগ কমিটি তাকে সহকারি শিক্ষক পদে নিয়োগ দেন। পরে তিনি গত ৩ মার্চ উপজেলার উয়ার্শী ইউনিয়নের হালুয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক পদে যোগদান করেছেন বলে জানান উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. আলমগীর হোসেন।
এ বিষয়ে ফৌজদারী অপরাধে দণ্ডিত এই শিক্ষক নিয়োগ পাওয়ার ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবদুল মালেক বলেন, রাজিব হোসেন ও সেলিম রেজা উভয়েই সদরের সরকারি এস কে পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাদের এ ধরনের সাজা হওয়ায় পুনরায় তাদেরকে ওই বিদ্যালয়ে পাঠদানের সুযোগ দেওয়া হয়নি। এদের মধ্যে রাজিব হোসেন কিভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক পদে নিয়োগ পেলেন বিষয়টি আমার জানা নেই। তিনি এ ব্যাপারে নিয়োগ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
একই ব্যাপারে নিয়োগ কমিটির সভাপতি ও টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের পুলিশ ভেরিফিকেশন হবে। তাতে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে উথাপিত অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আমাদের বাণী ডট কম/০৭ মার্চ ২০২০/ডিএ