ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে চলাচলের রাস্তার সরকারি গাছ কেটে লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত শিক্ষক ফিরোজ জামান উপজেলার চৌরঙ্গী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদে কর্মরত আছেন।

সোমবার বিকালে এলাকাবাসীর পক্ষে উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নের সনগাঁও কুয়াটল গ্রামের দবিরুল ইসলাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার দুপুরে স্থানীয় কাঠমিস্ত্রি মনসুর ও রফিকুল ইসলামকে দিয়ে দুওসুও ইউনিয়নের সনগাঁও কুয়াটল গ্রামের চলাচলের রাস্তায় অবস্থিত দুটি বড় গাছ কাটান স্কুল শিক্ষক ফিরোজ জামান। পরে স্থানীয় গাছগুলো আটকে থানা পুলিশকে খবর দিলে সেগুলো জব্দ করে দবিরুল ইসলামের জিম্মায় দেয় পুলিশ।

দবিরুল ইসলাম জানান, গাছগুলি নিয়ে যাওয়ার জন্য একাধিকবার গাড়ী পাঠায় ওই শিক্ষক। আমি গাছগুলো দিতে সম্মত না হলে সোমবার দুপুরে আমার অনুপস্থিতিতে জমির উদ্দীন বাচ্চা নামে স্থানীয় এক ব্যক্তির গাড়ীতে গাছগুলো নিয়ে যাওয়া শিক্ষক ফিরোজ। তবে গাছগুলি নিয়ে যাওয়ার পর হইতে আমাকে বিভিন্ন ধরণের হুমকি দিচ্ছে। পরে বাধ্য হয়ে ইউএনওসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ প্রদান করেছি।

সোমবার বিকাল সাড়ে চারটার সময় অভিযুক্ত শিক্ষক ফিরোজ জামানের নিকট মুঠোফোনে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমি এখন ঘুমাচ্ছি পরে ফোন দিয়েন। সন্ধ্যা ৭টার সময় তিনি মুঠোফোনে বলেন, কে আপনাকে গাছ কাটার খবর দিয়েছিল? আমি কোন গাছ কাটিনি।

ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে গাছগুলো জব্দ করে দবিরুল ইসলাম নামে একজনের জিম্মায় দিয়েছে, সেটা আপনি জানেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, হ্যাঁ গত পরশু পুলিশ ফোন দিয়েছিল। গাছগুলো কে কাটছে আমিও লোক খুঁজতেছি।

মনসুর ও রফিকুল ইসলাম নামে দুজন মিস্ত্রির দ্বারা গাছগুলো আপনি কাটিয়েছেন বলে তারা স্বীকার করেছে এমন কথার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি আপনার কথা রেকর্ড করে নিলাম, তাদের বিরুদ্ধে গাছ কাটার মামলা করবো আপনি স্বাক্ষী দিবেন তো?

বালিয়াডাঙ্গী থানার ওসির নিকট আপনি এসে গাছগুলো চেয়েছেন এমনকি আজ দুপুরে সেখানে উপস্থিত থেকে গাছগুলো নিয়ে গেছেন। এ প্রসঙ্গে আপনি কি বলবেন? উত্তরে তিনি স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার সাথে কথা বলতে বলার জন্য বলেন।

গাছ বহনকারী গাড়ী চালক জমির উদ্দীন বাচ্চা বলেন, ২০০ টাকা ভাড়ায় শিক্ষক ফিরোজকে সাথে নিয়ে কাটা গাছগুলি তার বিদ্যালয়ের এক পার্শ্বে এনে রেখেছেন।

বালিয়াডাঙ্গী থানার অফিসার ইনচার্জ মোসাব্বেরুল হক বলেন, দুটো গাছ জব্দ করেছিলাম আমরা। শিক্ষক মানুষ এসে বলেছে গাছগুলো তার লিজ নেওয়া। তবে টেন্ডার ছাড়া কেটেছে বলে স্বীকার করলে পরবর্তীতে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে বাকি গাছ কাটবেন এমন শর্তে গাছগুলো নিয়ে যেতে চেয়েছে। পরে কি হলো খোজ নিয়ে জানাতে পারবো।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী অফিসার খায়রুল ইসলাম সুমন বলেন, দাপ্তরিক কাজে একটু ব্যস্ত ছিলাম। বিস্তারিত জেনে অবৈধ ভাবে গাছ কাটার অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট দুওসুও ইউনিয়নের পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম বলেন, গাছ কাটার বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদকে কেউ অবগত করেনি।

অভিযোগ রয়েছে ওই স্কুল শিক্ষক এলাকায় স্থানীয় কয়েকজন আ.লীগ নেতার নাম ভাঙ্গিয়ে এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। গত বছরের ২১ মার্চ ম্যানেজিং কমিটি গঠনকে কেন্দ্র দবিরুল ইসলাম নামে আরেক ব্যক্তিকে মারধর করে। এ নিয়ে গণমাধ্যম সহ এলাকায় বিষয়টি তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।