কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে শিগগিরই নিয়োগ হচ্ছে ১২ হাজার সিএইচসিপি। এতে প্রাধান্য পাবেন নারীরা। কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, সরকারের বিধি অনুযায়ী থাকবে সকল সুযোগ-সুবিধাও। এছাড়া কর্মীদের পদোন্নতির বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা চলছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

কমিউনিটি ক্লিনিক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তরা জানান, বর্তমানে দেশব্যাপী ওয়ার্ড পর্যায়ে ১৩ হাজার ৫০০টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু রয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প চালুর পর এই পর্যন্ত ১৩ হাজার ৮২২জনকে সিএইচসিপি (কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রভাইডার) হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৫৪ শতাংশই নারী।

এক হাজার ৯৩৫জন নারী সিএইচসিপিকে সিএসবিএ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। ২ লাখ ২৯ হাজার ৫০০ কমিউনিটি গ্রুপ সদস্য এবং ৬ লাখ ৮৮ হাজার ৫০০ কমিউনিটি সাপোর্ট গ্রুপ সদস্য ও নির্বাচিত স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনায় স্থানীয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে। ২০০৯-২০১৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সেবা গ্রহীতার মোট ভিজিটের সংখ্যা ৬৫ কোটিরও বেশি। ৩ হাজারের অধিক সংখ্যক কমিউনিটি ক্লিনিকে এই পর্যন্ত ৫৩ হাজারের বেশি স্বাভাবিক প্রসব সম্পন্ন হয়েছে। তবে এখানে বছরে ১ শতাংশ মায়ের মৃত্যু ঘটেছে বলে সূত্র জানিয়েছে। গ্রামীণ জনগণের স্বাস্থ্যসেবায় সারাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য বছরে ১৮০ কোটি টাকার ওষুধ সরবরাহ করা হয়। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর জন্য সংসদে নতুন আইন পাসের মাধ্যমে ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। এছাড়া নতুন কমিউনিটি ক্লিনিক ভবনের ডিজাইন চূড়ান্ত হয়েছে। এ ডিজাইনে চারটি রুম ও দুইটি বাথরুম থাকবে। আগামীতে যতো কমিউনিটি ক্লিনিক হবে সব নতুন ডিজাইনেই করা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে ছয় হাজার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য একটি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় তৎকালীন সরকার। ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৮শে জুন একনেক সভায় এটি অনুমোদন লাভ করে। পরে সরকার পরিবর্তন হলে ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে প্রকল্পটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে বর্তমান সরকার কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প পুনরায় চালু করে। এলাকাবাসীর জমি দান ও সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং সরকারের কারিগরি সহায়তায় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো গড়ে উঠেছে। ঘরের কাছে স্বাস্থ্যসেবায় বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প এখন বিশ্বের কাছে উদাহরণ। কমিউনিটি ক্লিনিকে সাধারণ মানুষ বিনামূল্যে প্রাথমিক চিকিৎসা এবং ৩২ ধরনের ওষুধ পাচ্ছেন। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রামের মানুষের স্বাস্থ্য তথ্য সংরক্ষণ হচ্ছে এবং প্রয়োজনে রাজধানীর চিকিৎসকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে চিকিৎসা নেয়ার ব্যবস্থা করেছে সরকার।

এদিকে গতকাল রাজধানীর বিএমআরসিন ভবনে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীর সভাপতিত্বে এবং ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব শাবান মাহমুদের পরিচালনায় ‘এসডিজি বাস্তবায়নে কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিভার্সেল হেলথ কভারেজ’ বিষয়ক এক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।

এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইন্টারপার্লামেন্টারি ইউনিয়নের স্বাস্থ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সভাপতি এবং সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাত পরিসংখ্যান দিয়ে বলেন, দেশে ৫০ শতাংশ ইউনিভার্সেল হেলথ কভারেজ এসেছে। বিশ্বে চিত্রে এটা ৬৪ শতাংশ। কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তাকে ইউনিভার্সেল হেলথ কভারেজের প্রাথমিক পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে কাঙ্ক্ষিত গুণগত স্বাস্থ্যসেবা দিতে হলে প্রতিবছর বাজেটে স্বাস্থ্যে ১ শতাংশ করে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবা নিতে গিয়ে বছরে ১২২ মিলিয়ন লোক দরিদ্র হন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।