ঢাকাঃ হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী বিক্ষোভের মুখে গত ১৮ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের হাটহাজারী দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালকের পদ থেকে সরে দাড়ান। আর এই ঘটনার পরেই আল্লামা শফী মারা যান। এ দিকে জুনায়েদ বাবুনগরীকে মাদ্রাসাটির প্রধান শায়খুল হাদীস ও নাজিমে তালিমাতের (শিক্ষা পরিচালক) দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

যদিও আহমদ শফীর পদত্যাগের পেছনে অসুস্থতার কারণ দেখানো হয়েছে। কিন্তু হেফাজতের কেন্দ্রীয় মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরী ষড়যন্ত্র ও কূটকৌশল করে আল্লামা শফীকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছেন বলেই চাউর হয়েছে। তিনি হাটহাজারী মাদ্রাসা নিজের দখলে নিতে এবং হেফাজতের মূল নেতৃত্বে আসার জন্য এসব ষড়যন্ত্র করেছেন বলে অভিযোগ মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের।

হেফাজতে ইসলামের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বাবুনগরী হাটহাজারী দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদ্রাসা নিজের দখলে নিয়ে এবং হেফাজতের মূল নেতৃত্বে এসে সরকারবিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ড করবেন। এজন্য তিনি আগে থেকেই অনেক পরিকল্পনা করছেন এবং সরকারবিরোধী আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

মাদ্রাসায় বিক্ষোভের বিষয়ে আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানী বলেন, বাবুনগরীর সমর্থিত ছাত্র এবং কিছু বহিরাগতরা বিক্ষোভ করে মাদ্রাসার দখল নিয়েছিল। যদিও বাবুনগরীর পক্ষ থেকে ওই সময় তা অস্বীকার করা হয়।

তবে বিক্ষোভকারীরা আহমদ শফীকে মাদ্রাসার প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া এবং তার ছেলে আনাস মাদানীকে অব্যাহতি দেয়াসহ ওই সময় ছয় দফা দাবি সম্বলিত লিফলেট বিলি করেছিল।

এবিষয়ে মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আল্লামা শফীকে মাদ্রাসার মহাপরিচালক পদ থেকে সরানোর জন্য বাবুনগরী ষড়যন্ত্র করে শিক্ষার্থীদেরকে তার (শফী) বিরুদ্ধে মাদ্রাসায় বিক্ষোভ করতে বাধ্য করেছেন। আর বিক্ষোভে আল্লামা শফীর অনুসারী শিক্ষকদের কক্ষ ভাঙচুর করা হয়।

হেফাজতে ইসলাম নামটি ২০১৩ সালে ঢাকার শাপলা চত্বরে সমাবেশের পর ব্যাপকভাবে পরিচিতি পায়। ওই সময় সমাজ এবং রাজনীতিতে কওমি মাদ্রাসা-ভিত্তিক এই গোষ্ঠী কতটা প্রভাবশালী সেটি সদর্পে জানান দেন আহমদ শফী। তবে শাপলা চত্বরে সমাবেশের মূল উদ্যোক্তাও বাবুনগরী ছিলেন। তিনি সব সময়ই উগ্রবাদী মনোভাবের বলে হেফাজতের একটি সূত্রে জানা গেছে।

এবিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির একজন সদস্য বলেন, এই দ্বন্দ্বের পেছনে হেফাজতে ইসলামের কর্মকাণ্ডের কারণে রাজনীতিও একটা বিষয় হয়েছে। কারণ ২০০৯ সালে হেফাজতে ইসলাম যাত্রা শুরু করে চট্টগ্রামে আঞ্চলিক পর্যায়ে। ২০১৩ সালে বিভিন্ন দাবি নিয়ে ঢাকার শাপলা চত্বরে অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সহিংসতা হয়। এরপর হেফাজতে ইসলাম এবং আহমদ শফী এবং আনাস মাদানীর সাথে আওয়ামী লীগ সরকারের একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক অনেক ক্ষেত্রে দৃশ্যমান হয়।

হেফাজতের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, সংগঠনের কর্মকাণ্ড নিয়েও আল্লামা শফীর সাথে জুনায়েদ বাবুনগরী এবং তার সমর্থকদের দ্বন্দ্ব বাড়ে। আর একারণে বাবুনগরী সরকারবিরোধী অবস্থানের ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। আর আল্লামা শফীর সমর্থকদের পক্ষ থেকে বাবুনগরীর বিরুদ্ধে বিএনপি জামায়াতের সম্পৃক্ততার অভিযোগ করা হয়। যদিও তিনি তা বিভিন্ন সময় অস্বীকার করেছেন।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদ্রাসার একজন সাবেক শিক্ষক বলেন, মাদ্রাসার অভ্যন্তরীণ বিষয়ের সাথে বাইরের রাজনীতি এবং ব্যক্তিস্বার্থের কারণেও সেখানে দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছেছে এবং এখন পরিস্থিতি অস্থির।

অন্যদিকে বাবুনগরীকে বেশ কয়েক বছর আগে অসম্মান করে মাদ্রাসা থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু পরে আহমদ শফী যখন প্রধানের দায়িত্ব পালন শুরু করেন, তখন আবার বাবুনগরীকে মাদ্রাসায় ফিরিয়ে আনেন আল্লামা শফী। কিন্তু তার প্রতিদানে জুনায়েদ বাবুনগরী শতবর্ষী আহমদ শফীর বিরুদ্ধে দলভারি করে নিজের কূটচালের বিষয়টি প্রমাণ করেছেন বলে আলেম সম্প্রদায়ের মধ্যে সমালোচনা চলছে।

আমাদের বাণী ডট কম/২০ সেপ্টেম্বর/বিবিবার

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।